দেশে মাঙ্কিপক্স বিস্তার নিয়ে আগাম সতর্কতা বিএসএমএমইউ’র

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
এক সংবাদ সম্মেলনে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস নিয়ে আগাম সতর্কতা জানান দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ।  শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়টির শহীদ ডাক্তার মিল্টন হলে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।  এ সময় ভাইরাসটি মোকাবিলায় বিএসএমএমইউর প্রস্তুতির কথাও উল্লেখ করা হয়।
সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেও বাংলাদেশে ভাইরাসটিতে কেউ সংক্রমিত হয়নি।  এমনকি এ দেশ এখন পর্যন্ত ভীতিকর পরিস্থিতিতেও নেই।
ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের মাঙ্কিপক্সের উপস্থিতি না মিললেও সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।  সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে, বিদেশ থেকে আসা লোকদের পরীক্ষা করানো দরকার।  সন্দেহজনক কাউকে মনে হলে আইসোলেটেড করতে হবে।  এক্ষেত্রে বিএসএমএমইউ রোগীদের চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের বিষয়ে তিনি বলেন, ১৯৫৮ সালে ল্যাবরেটরিতে প্রথম বানরের দেহে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়।  ১৯৭০ সালে এ ভাইরাসকে মাঙ্কিপক্স নামকরণ করা হয়।  ভাইরাসটির দুটি স্ট্রেইন আছে।  এর মধ্যে কঙ্গো বেসিন স্ট্রেইন পশ্চিম আফ্রিকার স্ট্রেইনের চেয়ে বেশি মারাত্মক।  ভাইরাসটি পশু থেকে প্রাণী এবং পশু থেকে মানুষের সংক্রমিত হয়।  মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ সবচেয়ে ভয়ংকর মাধ্যম বলে বিবেচিত।
মাঙ্কিপক্সে সংক্রমণের কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।  আবার শ্বাস-প্রশ্বাসের ফোঁটা বা ড্রপলেট দ্বারা কিংবা স্বল্প দূরত্বে, দীর্ঘক্ষণ সান্নিধ্যে থাকার সময় সংক্রমিত হতে পারে।  মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত অন্য ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগের মাধ্যমেও কেউ আক্রান্ত হতে পারে, একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে মেলামেশাকে প্রধান ফ্যাক্টর হিসেবে দেখা হয়।
এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ বহুগামিতায় অভ্যস্ত উল্লেখ করে ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, রোগীদের ২৬ শতাংশ এইচআইভি পজিটিভ।  এছাড়া ৯০ শতাংশ রোগী ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু।  গুটিবসন্তের টিকা বন্ধ করা এর একটি কারণ হতে পারে।  এ টিকা মাংকিপক্স থেকে ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা প্রদান করে।  দু’সপ্তাহের মধ্যে, সম্ভব হলে চার দিনের মধ্যে এটি ব্যবহার করতে হবে।  ইনকিউবেশন পিরিয়ড গড়ে ১২ দিন, ৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত।  প্রড্রোম ১ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হয়।
তিনি বলেন, মাঙ্কিপক্স আক্রান্তের ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা দেখা যায়, তার মধ্যে রয়েছে- স্থায়ী ক্ষত, বিকৃত দাগ, সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, ব্রংকোপনিউমোনিয়া শ্বাসকষ্ট, কেরাটাইটিস, কর্নিয়ার আলসারেশন, অন্ধত্ব, সেফটিসেমিয়া ও এনসেফালাটিস।  জ্বরজনিত অসুখের সাথে ঠাণ্ডা লাগা, ঘাম, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথা ক্ষুধামন্দা, ফ্যারিঞ্জাইটিস, শ্বাসকষ্ট ও কাশি দেখা যায়।
ভাইরাসটি থেকে রক্ষা পেতে যে কিছু সতর্ক পন্থা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য।  তার মধ্যে রয়েছে- আক্রান্ত বা সন্দেহজনক প্রাণীর সংস্পর্শে না যাওয়া, প্রাণীর কামর, আঁচড়, লালা বা প্রস্রাব থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা।  আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে সকল ক্ষত শুকানো পর্যন্ত আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইন করে চিকিৎসা করা।  উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়া।  গুজব বা আতঙ্ক এড়িয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ