ওয়ানটাইম প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক

আগামি এক বছরের মধ্যে দেশের সকল প্রকার ওয়ানটাইম প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। সোমবার (৬ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত একটি রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়। দেশের হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ ও উপকূলীয় অঞ্চলে একবার ব্যবহারযোগ্য (ওয়ানটাইম) প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বন্ধে এই নির্দেশনা দেয়া হয়। সেই সঙ্গে পলিথিন ও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে বিদ্যমান আইনি নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে কার্যকরের জন্য সরকারকে বাজার তদারকি, পলিথিন উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি জব্দ ও কারখানা বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সাঈদ আহমদ কবির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। আদেশের পর আইনজীবী রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রীর দৌরাত্ম মারাত্মকভাবে বেড়ে চলেছে। এগুলো আমাদের ভূমির উর্বরতা কমাচ্ছে, বায়ূ দূষণ ঘটাচ্ছে এবং সমুদ্রের জলজ উদ্ভিদ ও প্রতিবেশকে মারাত্মক হুমকির মধ্যে ফেলছে। ফলে প্লাস্টিকের উৎপাদন এবং ব্যবহার কমাতে হবে’।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের কেরালার সমুদ্র সৈকতে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে জানিয়ে এ আইনজীবী বলেন, ‘বিশ্বের মোট ১২৭টি দেশে নানাভাবে পলিথিন ব্যাগ এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রীর উৎপাদন, বিপণন, বিতরণে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। একেক দেশের নিয়ন্ত্রণ, আইন একেক রকম। রুয়ান্ডাতে যেমন পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওইখানে মাদকের চাইতেও সিরিয়াসলি নেওয়া হয় পলিথিন ব্যাগের ব্যবহারকে। এখন বৈশ্বিকভাবেই প্লাস্টিকের ব্যবহারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়েছে’। এ আইনজীবী জানান, আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে আগামী বছরের ৫ জানুয়ারির মধ্যে বিবাদীদের প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত। ১০ জানুয়ারি ফের বিষয়টি কার্যতালিকায় আসবে। খবর বিডিনিউজের

সারাদেশে একবার ব্যবহারযোগ্য (ওয়ানটাইম) প্লাস্টিক পণ্যের নিরাপদ বিকল্প কি হতে পারে সে বিষয়ে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। এছাড়া পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে বিদ্যমান আইনগত নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে সরকারকে কেন ব্যর্থ বলা হবে না- রুলে তাও জানতে চেয়েছে আদালত।

পরিবেশ সচিব, শিল্প সচিব, বাণিজ্য সচিব, পানি সম্পদ সচিব, বেসামরিক ও পর্যটন সচিব, বস্ত্র ও পাট সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্লাস্টিক সামগ্রীর উৎপাদন, বিক্রি, বিপণন, বিতরণ বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বেলাসহ ১১টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও সংগঠন এই রিট আবেদন করে। সে বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট গতকাল সোমবার আদেশ দিল। ১৯৯৫ সালের বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৬(ক) ধারা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি করে ২০০২ সালের জানুয়ারি থেকে দেশে পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ ও ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করা হয়।

 

ডিসি/এসআইকে/ডেরি