করোনায় ভেন্টিলেটর যেনো অন্ধকারে আশার আলো

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি >>>
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ থেকে এক লক্ষতে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ৬৭ দিন। দ্বিতীয় এক লক্ষ আক্রান্ত হতে সময় লাগে ১১ দিন এবং তৃতীয় এক লক্ষ আক্রান্ত হতে সময় লেগেছে মাত্র চার দিন। বাংলাদেশে আক্রান্তের মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ইতোমধ্যেই।
সর্বশেষ শনিবার (২৮ মার্চ) পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় কোনো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি বাংলাদেশে। সরকারি নানান উদ্যোগ, সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তিপর্যায়ে করোনা সচেতনতা কর্মসূচি বাস্তবায়নের কারনে সাধারণ মানুষ সতর্ক হয়েছেন বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও ভেন্টিলেটর অবশ্যই দরকার। করোনা ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লে ভয়ংকর বিপদের সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ভেন্টিলেটরের প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, করোনা ভাইরাস মানুষের ফুসফুস আক্রমণ করে এবং সে আক্রান্ত ব্যক্তি ভালোভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে না। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। ফুসফুস আক্রমণ ও অক্সিজেন স্বল্পতারদরূণ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল/অকেজোঁ হয়ে যায়।
করোনা ভাইরাস যদি আমাদের দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে মৃত্যুর হার বেশি হবে। এর কারণ ভেন্টিলেটরের সংকট। জার্মানিতে মৃত্যুর হার কম- এর মূল কারণ তাদের পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর রয়েছে। এই ভেন্টিলেটরের অভাবে ইতালী, স্পেন, ইউকেতে এখন বেশিরভাগ মানুষ মারা যাচ্ছে। আমাদের দেশে অনেক প্রতিভাবান প্রকৌশলী আছেন যারা বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট ইত্যাদি খ্যাতনামা বিদ্যাপীঠ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন। এসব প্রতিভাবান প্রকৌশলীরা যদি ভেন্টিলেটর তৈরি কাজে যুক্ত হন তাহলে ভেন্টিলেটর সংকট থেকে বাংলাদেশ যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি রক্ষা পাবে অসংখ্য মানুষ।
মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে এই ভেন্টিলেটরকে সর্বশেষ সহায়তাকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানেও তা প্রমাণিত। এই অন্ধকারাচ্ছন্ন সংকটের মধ্যে আশার আলো দেখছে বাংলাদেশ। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে বাংলাদেশে প্রথম ভেন্টিলেটর বা কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস মেশিন তৈরি করেছেন ড. কাজী স্বাক্ষর ও ইন্জিনিয়ার বায়েজিদ শুভ। জীবন রক্ষাকারী এই ভেন্টিলেটরের নাম দেওয়া হয়েছে স্পন্দন।
জানা গেছে, এই ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে tidal volume ও I ratio, Peak follow, Apnea, pressure, respiratory rate, রোগীর শ্বাস সেন্সর সবই নিখুঁতভাবে করা যায় বলে জানিয়েছেন তারা। এই ডিভাইসটি বানাতে তাদেরকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এ এফ কিংশুক এবং আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তানভীরুল হাসান কাব্য। এছাড়া পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা করেছেন ড. আসিফুর রহমান, ড. ফরহাদ উদ্দিন চৌধুরী মারুফ, এম তোফাকুল আলী, কাজী মনসুর উল হক, ফাহিম আহমদ, আকিফ মুনতাসির ও সোহেল রানা। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ড. স্বাক্ষর এবং ইন্জিনিয়ার বায়েজিদের এই ভেন্টিলেটর মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখবে বলে চিকিৎসকরা আশাবাদী।
যুক্তরাজ্যের এই তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সীতাকুণ্ডের সন্তান মাসুম সামজাদ এই ভেন্টিলেটরের গুরুত্ব সম্পর্কে ইতোমধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন। করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধে তিনি দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এছাড়াও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবা দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠনের তাগিদ দেন তিনি। ‘ঘরে থাকুন, নিজে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচান’- তার এই শ্লোগান ব্যবহার করছেন বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ। ইউকে থেকেও তিনি বাংলাদেশ তথা সীতাকুণ্ডবাসীকে হতাশার অন্ধকার দূর করে আলোর মশাল জ্বালিয়ে দিচ্ছেন। অন্ধকারে আশার আলো হয়ে সীতাকুণ্ডের সন্তান মাসুম সামজাদ দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশিদের আলোক নক্ষত্র হিসেবে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে মাসুম সামজাদের মতো এমন হাজারো তরুণ-যুবকের জন্য রয়েছে দেশবাসীর ভালোবাসা।

ডিসি/এসআইকে/এমজেএ