লকডাউনে জন্মবিরতিকরণ পিল-কনডমের চাহিদা বৃদ্ধি

নগর প্রতিবেদক >>>
বিশ্বব্যাপি চলমান নভেল করোনা ভাইরাসজনিত মহামারির প্রাদুর্ভাবে ঘরবন্দী অধিকাংস মানুষ। কারফিউ, জরুরি অবস্থা আর লকডাউনের মতো ঘোষণা দিয়ে রেখেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল। স্বাভাবিকভাবেই ব্যস্ত জীবনের ঘোর কাটিয়ে নারী-পুরুষের মধ্যে অন্তরঙ্গতার অফুরন্ত সময় বিদ্যমান। ফলে স্বামী-স্ত্রী কিংবা নারী-পুরুষের মধ্যে দৈহিক মিলন বাড়ছে। আর এটাই স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন মনোবিদেরা। তাদের মতে, লকডাউনে যাদের মানসিক চাপ কমেছে এবং যাদের মানসিক চাপ বেড়েছে- দুই দিকের মানুষই যৌনতার আশ্রয় নিচ্ছেন।
মনোবিদদের ব্যাখ্যা- এখনকার ব্যস্ত জীবনে নারী-পুরুষের অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর সুযোগের বড় অভাব। কিন্তু কোয়ারেন্টিন বা লকডাউন অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল মানুষজনের সামনে অন্তরঙ্গ হওয়ার অফুরন্ত সুযোগ নিয়ে এসেছে। অন্যদিকে করোনা ভীতির কারণে সব সময়ে যে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে, তা থেকে মুক্তি পেতেও অনেকে যৌনতার আশ্রয় নিচ্ছেন। এই মনোভাবের স্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে জন্মবিরতিকরণ পিল/পদ্ধতি/উপকরণ বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ায়।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার সাম্প্রতিক মহামারির ফলে লকডাউনে থাকা মানুষ নানানভাবে ফার্মেসি থেকে জন্মবিরতিকরণ পিল, কনডমসহ নিরাপদ যৌন মিলনের উপকরণ কিনছেন। ফলে এসব উপকরণের বিক্রি বেড়েছে। এছাড়াও প্র্যাগনেন্সি টেস্ট কিট বিক্রির সংখ্যাও বেড়েছে। চট্টগ্রাম নগরের কর্ণেলহাটের সিটি ফার্মেসির সেলসম্যান জানান, অন্যান্য সময়ে জন্মনিরোধের উপকরণ যেমন বিভিন্ন কোম্পানীর পিল, কনডম যে পরিমাণে বিক্রি হতো এখন এর চাহিতা মনে হচ্ছে তিনগুন বেড়েছে। বিশেষ করে কনডম বিক্রির হার বেড়েছে। নারীরা তেমন এসব কিনতে না আসলেও পুরুষেরা একবার আসলে বেশি করেই তা কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
জিইসি মোড় এলাকার এক ফার্মেসির ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম জানান, এটাতো একেবারেই স্বাভাবিক। সাধারণত মানুষ এতোদিন ঘরে থাকার সুযোগ পায় না। আর এখনতো বলতে গেলে লকডাউনে আছে। অফুরন্ত সময়ে মানুষ পরিবারের সাথে থাকছে। তাই আমাদের দোকানেও জন্মবিরতিকরণ পিল, কনডম এবং প্র্যাগনেন্সি টেস্ট কিট বিক্রি বেড়েছে। আমাদের এগুলো একবার আনলে মাস কে মাস চলে যেতো। কিন্তু এই এপ্রিল মাসেই আমরা এসব উপকরণ দুইবার কিনেছি। মার্চের চেয়ে এপ্রিল মাসের ৭ দিনের মধ্যেই আমাদের যে পরিমাণ বিক্রি বেড়েছে তা কয়েকমাসেও হতো না।
হালিশহরের নিরোগ ফার্মেসির ব্যবস্থাপক আহমদ আলী বলেন, গর্ভনিরোধক পিল ও ইমারজেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল বিক্রি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এছাড়াও প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট বিক্রিও বেড়েছে।

মনোবিদদের ধারণা, এই লকডাউন দীর্ঘ হলে এসব উপকরণ সংকট দেখা দেবে। ফলে অপ্রত্যাশিতভাবে অনেক শিশুর জন্ম হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এই উপকরণের বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। না হলে ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক বাংলাদেশে জনসংখ্যায় আরো অসংখ্য মানবের সংখ্যা যুক্ত হবে। ফলে আসন্ন অর্থনৈতিক সংকটের ফলে মানবিক বিপর্যয় কিংবা মানবিকবোধ হ্রাস পেতে পারে। তারা দেশের প্রতিটি মানুষকে এই বিষয়ে সচেতন থাকারও আহ্বান জানান। 

ডিসি/এসআইকে/এসএজে