শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে নজর দিন : প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ছবি

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
করোনা ভাইরাস মহামারির সময় শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে অভিভাবকদের ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  তিনি বলেন, ‘নিজের সন্তানদের লেখাপড়ার দিকে মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি তারা যেন একটু খেলাধুলা বা শরীর চর্চা করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেবেন।  শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে নজর দিন’।  রবিবার (১৮ অক্টোবর) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় শিশুদের প্রতি যত্নবান হওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিশুরা দেশপ্রেমিক হবে, মানুষের মতো মানুষ হবে, মানুষের সেবা করবে এবং নিজেদের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে, আধুনিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত হবে।  আমি জানি, করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ।  এটা সত্যিই যেকোনও শিশুর জন্য খুব কষ্টকর।  তবুও আমি তাদের বলবো, মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে।  তারা ছবি আঁকবে, খেলাধুলা করবে।  এভাবে তাদের ব্যস্ত রাখতে হবে, যেন স্কুল খুললে আবার ভালোভাবে স্কুলে যেতে পারে, পড়াশোনা করতে পারে, সহজে মানিয়ে নিতে পারে’।
করোনা ভাইরাস মহামারি থেকে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ববাসী যেন মুক্ত হতে পারে সেই দোয়া চাওয়ার পাশাপাশি তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।  তিনি বলেন, ‘বেশি লোক থাকলে আমি সব সময় মাস্ক পরে থাকি।  সবাইকে বলবো, যেখানেই বেশি লোকসমাগম সেখানে সবাইকে মাস্ক পরে থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা সবাইকে মেনে চলতে হবে, শরীরের প্রতি যত্ন নিতে হবে’।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতার ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের নামে স্কুল ভবনের উদ্বোধন করে স্মৃতিচারণ করেন তার বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  তিনি বলেন, ‘রাসেল আজ আমাদের মাঝে নেই।  এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা যুগ যুগ ধরে যারা পড়াশোনা করবে, অন্তত তারা এইটুকু জানবে, একটা ছোট শিশু ছিল এই স্কুলে, কিন্তু সেই শিশুটাকে বাঁচতে দেওয়া হয়নি।  তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।  এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটুক, সেটাই আমরা চাই’।
শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এটা করার একটা উদ্দেশ্যই ছিল যে এদেশের শিশুদের সঠিকভাবে গড়ে তোলা।  দেশপ্রেমিক করা, দেশের সেবা করার মনোভাব যেন তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে।  তারা যেন সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে, সেদিকে চিন্তা করেই এই সংগঠনটা তৈরি করা হয়েছিল।  আজকে সারা দেশব্যাপী এই সংগঠনের অনেক ছেলেমেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন।  অনেকে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন।  অনেকে রাজনীতিতেও যথেষ্ট অবদান রেখে যাচ্ছেন।  সেই ছোট্ট শিশু থেকে তারা এখন অনেকেই বড় হয়েছেন।  অনেকেই বিভিন্ন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন’।
দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমার একটাই লক্ষ্য যে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন।  ৩০ লাখ শহীদ রক্ত দিয়েছে।  দুই লাখ মা-বোন যে অবদান রেখেছে, সে কথা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে।  অনেক রক্তের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।  এই স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাবে’।  তিনি আরও বলেন, ‘আমি কবি সুকান্তের ভাষায় এটিই বলতে চাই, এই বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গীকার’।
আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব কর্মসূচিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন সেগুলো হলো– শহীদ শেখ রাসেলকে নিয়ে অ্যানিমেটেড ডকুমেন্টারি ‘বুবুর দেশ’ প্রদর্শনীর উদ্বোধন, শেখ রাসেলের জীবনীর ওপর প্রকাশিত বই ‘শেখ রাসেল আমাদের আবেগ, আমাদের ভালবাসা’র মোড়ক উন্মোচন ও ছবি প্রদর্শনীর উদ্বোধন; ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ শেখ রাসেলের ‘ম্যুরাল’ উন্মোচন ও ‘শহীদ শেখ রাসেল ভবন’ উদ্বোধন; শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কার্যক্রম সংক্রান্ত ভিডিও চিত্র অবলোকন, ‘স্মৃতির পাতায় শেখ রাসেল’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের পুরস্কার বিতরণ, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান এবং দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ল্যাপটপ বিতরণ।
এ সময় গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকার শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স প্রান্ত থেকে আট বছরের স্কেটিং খেলোয়াড় নীলকাব্য শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে বক্তব্য রাখেন।
ভিডিও কনফারেন্সে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণ প্রান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান রকিবুর রহমান, সংগঠনটির মহাসচিব ও সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীসহ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ