আ’লীগ প্রতিবারই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে : শেখ হাসিনা

ফাইল ছবি

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে যেভাবে বলতে চেষ্টা করুক না কেন, জনগণের ভোট, জনগণের সমর্থন নিয়েই আমরা ক্ষমতায় এসেছি।  আমাদের সরানোর জন্য যতো বেশি নড়াচড়া করবে আওয়ামী লীগের শিকড় ততো বেশি মাটিতে শক্ত ও পোক্ত হবে।  এটা হলো বাস্তব।  আ’লীগ প্রতিবারই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে এবং সরকার পরিচালনা করছে।
তিনি আরো বলেন, যখন আমরা ২০০৮ এর পর থেকে সরকারে এসেছি, অনেকভাবে চেষ্টা করা হয়েছে, ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে নানাভাবে, বিডিআরের ঘটনা, হেফাজতের ঘটনা, নানা ধরনের ঘটনা, বহু রকমের কারসাজি ঘটানোর চেষ্টা হয়েছে।  ষড়যন্ত্র করে খুন করে ফেলা যায়, হত্যা করে ফেলা যায়। কিন্তু জনসমর্থন না থাকলে ক্ষমতায় গিয়ে কেউ টিকে থাকতে পারে না, মানুষের কল্যাণও করতে পারে না, এ হচ্ছে বাস্তবতা।  আওয়ামী লীগ টিকে আছে শুধু জনগণের জন্য কাজ করার মধ্য দিয়ে।  কারও দয়া ভিক্ষা করে না, কারও করুণা ভিক্ষা করে না।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।  আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির শীর্ষ নেতারা গণভবনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন।
স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্ত চলতেই থাকবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সরানোর জন্য যতো বেশি নড়াচড়া করবে, আওয়ামী লীগের শিকড় ততো বেশি মাটিতে শক্ত ও পোক্ত হবে।
জাতির পিতা, জাতীয় চার নেতাসহ বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এত হত্যাকাণ্ড চালিয়েও তৃণমূলে যার শিকড় একেবারে গ্রথিত, সেই সংগঠনের ক্ষতি তারা করতে পারেনি।  আওয়ামী লীগ টিকে আছে।  কারণ এর তৃণমূলের নেতা-কর্মী, অর্থাৎ এর শিকড়ের শক্তি অনেক বেশি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শুধু এ দিবসটা পালন নয়, সেই সঙ্গে আমাদের এ কথা মনে রাখতে হবে, যে সমস্ত সন্ত্রাসী চক্র, খুনি চক্র, আমাদের স্বাধীনতাবিরোধী চক্র তারা কিন্তু বসে নেই। তাদের চক্রান্ত চলতেই থাকবে, যতো ভালো কাজই আমরা করি না কেন তাদের মুখ থেকে ভালো কথা বের হয় না।  কারণ তারা তো বাংলাদেশের মানুষের কথা ভাবে না।  ১৫ আগস্টের ঘটনা বা ৩ নভেম্বরের ঘটনার পরে তারা এ দেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতাকে তারা ভোগ করবে, সেটা তারা পারেনি জনগণের কারণে।  এখানেই তাদের ক্ষোভ। তাদের কাছে ক্ষমতা ছিল ভোগের বস্তু।
১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা ও ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে চক্রান্তকারীরা স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্টের ঘটনা শুধু একটা পরিবারকে হত্যা না- একটা আদর্শকে হত্যা, একটা দেশকে হত্যা, দেশকে ধ্বংস করা, সেটা আরও প্রমাণ হলো ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডে।
আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কাছে ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের সেবা করা, আর জনগণের সেবাটাই আমরা করে যাচ্ছি।  সেবা করে যাচ্ছি বলেই যেখানে ১৫ আগস্ট ভেবেছিল আর কোনোদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে না, তারপর আমরা চারবার জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছি। এটাই বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটার পর একটা নির্বাচনে ভোটে জয়ী হয়ে আমরা সরকার গঠন করি।  কারণ হচ্ছে, আমরা জনগণের জন্য কাজ করি।  আমরা জনগণের জন্য কাজ করি বলেই জনগণ আমাদের সমর্থন করেছে।  যারা নির্বাচনে জনগণের কাছে যেতেই পারে না, জনগণের কাছে ভোট চাইতে পারে না, যাদের সংগঠনই তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠেনি, মানুষ তাদের পাশে দাঁড়াবে কেন?
আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা অনেকের চক্ষুশূল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন একেকজন একেক জায়গা থেকে নানা বচন দিচ্ছে, নানা কথা বলছে, তারা প্রশ্ন করছে, অনেকে নানা ধরনের প্রশ্ন করে, আবার কারও কারও কথা বাংলাদেশ কী একদলেই চলে যাচ্ছে।  সত্যিকারের জনগণের দল- হ্যাঁ আমাদের কিছু বাম দল আছে যারা সাধারণ মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করে, কমিউনিস্ট পার্টি আছে সাধারণ মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ, যে আওয়ামী লীগ তৃণমূল থেকে গড়ে উঠেছে মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।
তিনি বলেন, যে আওয়ামী লীগের নেতাদের একের পর এক হত্যা করা হয়েছে, জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, সেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।  আমাদের ওপর বার বার আঘাত এসেছে- ২১ আগস্ট থেকে শুরু করে, সেই ৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি, বিভিন্ন সময় বার বার আঘাত এসেছে।  এত হত্যাকাণ্ড চালিয়েও, যে সংগঠনটা তৃণমূলে যার শিকড় একেবারে গ্রথিত সেই সংগঠনের ক্ষতি তারা করতে পারেনি।  আওয়ামী লীগ টিকে আছে কারণ এর তৃণমূলের নেতা-কর্মী, অর্থাৎ এর শিকড়ের শক্তি অনেক বেশি।  আর সেটা যদি কারো চক্ষুশূল হয় বা মনো ব্যথার কারণ হয় সেখানে আমাদের কিছু বলার নেই।
আমরা জনগণের সমর্থনটা পাই কেন? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণের স্বার্থে কাজ করে, জনগণের কল্যাণে কাজ করে, জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করে, আর জনগণ সেটা খুব ভালভাবে উপলব্ধি করে, আর এর শুভ ফলটা জনগণই পায়।
আওয়ামী লীগ এলিট শ্রেণি নয়, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকারের কার্যক্রমে একটা গ্রুপ বা এলিট শ্রেণি সুবিধা পায় না, বরং সুবিধাটা একেবারে গ্রাম পর্যায়ের ঘরের দৌরগোড়ায় পৌঁছে যায়।  সেই কারণে তারা আমাদের সমর্থন দেয়, আমরা তাদের সমর্থন পাই।
জিয়া-খালেদা-এরশাদ আমলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য দেশের দুর্নীতির বীজ বপন করেছিল।  একটা এলিট শ্রেণি তৈরি করেছিল।  জিয়াউর রহমান নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল।
মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।  আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি, কাজ করে যাবো।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বরসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে শহীদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ