সতর্ক আওয়ামী লীগ, সারা দেশে বার্তা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চলমান পরিস্থিতিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।  বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ইস্যুকে কেন্দ্র করে হেফাজতসহ বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।  এ ব্যাপারে নেতা-কর্মীদের সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।  গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সারা দেশে নেতা-কর্মীদের কাছে এ বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে তাদের কাছে বার্তা দেয়া হয়।  পাশাপাশি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও একই বার্তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে।  দুই সিটি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ নিয়ে চিঠিও ইস্যু করা হয়েছে।  ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের চিঠিতে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে- সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।  এ ব্যাপারে নেতা-কর্মীদের সর্বদা সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।  চিঠি পাঠিয়েছেন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি।  বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, হেফাজতসহ বিএনপি ও জামায়াতের সাম্প্রতিক অপতৎপরতার প্রেক্ষিতে আমরা সারা দেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকতে বলেছি।  যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত রয়েছি।  জনগণের জানমাল নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা এ ধরনের নির্দেশনা দিয়েছি।  তিনি বলেন, অতীতের মতো যে কোনো ধ্বংসাত্মক অপতৎপরতা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করা হবে।  প্রশাসন তাদের দায়িত্ব পালন করবে।  আমরা আমাদের কাজ করে যাবো।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, এখন দেশজুড়ে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক শক্তি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।  পাশাপাশি তাদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের যোগসূত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।  তারা প্রথমে জনগণকে সচেতন করার কর্মকাণ্ডে উদ্যোগী ভূমিকা নেবেন।  এরপর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চলমান পরিস্থিতিতে বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম নামে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দেশের বিদ্যমান স্বস্তি এবং শান্তি বিনষ্টে বিভিন্ন স্থানে যে অব্যাহত তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে তা সহনশীলতার সকল মাত্রা অতিক্রম করেছে।  জনগণের জানমালের সুরক্ষা দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।  সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উস্কানিদাতাদের তালিকা প্রস্তুত করে এদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।  যারা দেশব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছে বা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সতর্ক করে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশের জনগণের ধৈর্য ও সহনশীলতার একটা সীমা আছে।  সীমা অতিক্রম করলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ।  অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে।  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির প্রতিও অসম্মান দেখানো হয়েছে।  এই বিষয়গুলো নেতা-কর্মীরা স্বাভাবিকভাবে নেননি।
আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা রক্তাক্ত সহিংসতার পাশাপাশি ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে।  তাদের ডাকা হরতালেও সহিংসতা হয়েছে।  জ্বালাও-পোড়াও থেকে রক্ষা পায়নি রেলস্টেশন, ভূমি অফিস, জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপার-সিভিল সার্জন- জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয় ও ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক নিদর্শন।  আওয়ামী লীগের অফিস জ্বালিয়ে দেয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবিও ভাঙচুর করা হয়েছে।  দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলমান পরিস্থিতিতে আমরা কোনো উস্কানি দেবো না।  কোনো উস্কানিতে পা-ও দেবো না।  তবে তারা যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যা যা প্রয়োজন তা-ই করবে।  কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।  জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা মাথায় মোকাবিলা করতে হবে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ