হেফাজত নেতাদের গ্রেফতারে বেশ সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
মোদিবিরোধী তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত হেফাজতের ছয়জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা-কর্মীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।  তবে এখন পর্যন্ত মামুনুল হকসহ হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়নি।  তবে কারো কারো দাবি, মামুনুল হকসহ আরো কয়েকজন নিখোঁজ নেতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়া কেন্দ্রীয় নেতাদের সাম্প্রতিক মোদিবিরোধী নাশকতার মামলায় গ্রেফতার না দেখিয়ে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে।  সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হেফাজতকে কোনঠাসা করতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নতুন এই কৌশল নিয়েছে।  একাধিক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলে সহসাই তাদের কারামুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা।  হেফাজতের নেতাদের গ্রেফতারে বেশ সতর্কভাবে এগুচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো। 
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘আমরা গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে যাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক নাশকতার অভিযোগ রয়েছে এবং আগেরও একাধিক মামলা রয়েছে তাদের গ্রেফতার করছি।  গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।  এজাহারভুক্ত সব আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে’।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতি মোদিবিরোধী সহিংসতার ঘটনায় রাজধানী ঢাকার পল্টন ও মতিঝিল থানায় ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।  এসব মামলায় হেফাজতের শীর্ষ নেতাসহ অজ্ঞাতনামাসহ প্রায় ১০ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।  এ ছাড়া ঢাকার বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে মোট ৭৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।  এসব মামলাতেও হেফাজতের শীর্ষ নেতাসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবের সময় রাজধানীতে মোট ৫৩টি মামলা দায়ের হয়েছিল।  এর মধ্যে চারটি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল।  বাকিগুলো এখনও তদন্তাধীন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সহিংসতার মামলাগুলোর তদন্তভার এখনও থানা-পুলিশের কাছেই রয়েছে।  কিন্তু পুলিশ চলমান লকডাউন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করছে ডিবি।
আগের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে হেফাজত নেতাদের।  থানায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো ডিবিতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়াও চলছে।  এ প্রক্রিয়া শেষ হলে গ্রেফতারকৃতদের সাম্প্রতিক ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাতেও গ্রেফতার দেখানো হবে।
গ্রেফতার হলেন যারা
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ১১ এপ্রিল র‌্যাব ও গোয়েন্দা বিভাগের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার করা হয় কেন্দ্রীয় সংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলামাবাদীকে।  তাকে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবে পল্টন থানায় দায়ের করা পুলিশের মামলার ১৫৭ নম্বর আসামি হিসেবে আটক দেখানো হয়।  যদিও বলা হয়েছে, মোদিবিরোধী নাশকতার বিষয়ে পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
একই মামলায় ১৩ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহকে ও ১৪ এপ্রিল সহকারী মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দিকে গ্রেফতার করা হয়।  তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর তাণ্ডবে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মামলা রয়েছে।
মুফতি শরীফ উল্লাহকে ২০১৩ সালের ৬ মে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।  একইভাবে মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দিকেও গ্রেফতার করা হয় শাপলা চত্বরের ঘটনায় করা একটি মামলায়।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থসম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সহসভাপতি মুফতি ইলিয়াসকে ১১ এপ্রিল আটক করে র‌্যাব।  তাকে অবশ্য নাশকতার পরিকল্পনা, ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানো, ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে কেরাণীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
১৪ এপ্রিল রাজধানীর লালবাগ থেকে আরেক কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত হোসেনকে আটক করে গোয়েন্দারা।  মোদির সফরের বিরোধিতা করে রাজধানীতে সহিংস ঘটনায় পল্টন ও মতিঝিল থানায় হওয়া একাধিক মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি।  তাকেও ২০১৩ সালের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ ১৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সহ-সভাপতি মাওলানা জুবায়েরকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।  তাকেও ২০১৩ সালের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১৭ এপ্রিল আদালতে সোপর্দ করা হবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (মতিঝিল বিভাগ) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে সহিংসতার ঘটনায় বেশ কিছু মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।  সেসব মামলার দ্রুত তদন্ত শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছি।
মোড় ঘুরেছে মামুনুল কাণ্ডে
পুলিশ জানায়, হেফাজতের সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে সরকার হার্ডলাইনে রয়েছে।  এ কারণে যাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা উস্কানির অভিযোগ রয়েছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা কৌশল হিসেবে হেফাজতের মধ্যমসারির নেতাদের প্রথমে গ্রেফতার করছেন।  একইসঙ্গে হেফাজত যেন আর মাঠে নেমে সহিংসতা চালাতে না পারে সেজন্য পুলিশ ও গোয়েন্দারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।  মধ্যমসারির নেতাদের গ্রেফতারের পর শীর্ষ নেতাদেরও গ্রেফতার করা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
নারীঘটিত কাণ্ডে মামুনুল হকের জড়িয়ে পড়াও নতুন মোড় দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।  এ ঘটনায় হেফাজত নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে সাইফ কাজি সমির ও কর্মী অহিদ ওরফে অহিদ হুজুরকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।  মামুনুলকে নারীসহ আটকের জেরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনিকে হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
নারায়ণগঞ্জের রয়েল রিসোর্টে হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশি কাজে বাধা এবং নাশকতার মামলার আসামি হিসেবে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হয় সোনারগাঁও উপজেলার হেফাজতের আমির মহিউদ্দিন খান, সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম ও সেক্রেটারি শাহাজাহান ওরফে শিবলী।
হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মো. জাকারিয়া নোমান ফয়েজি বলেন, চলতি মাসের ৭ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত দেড় শতাধিক হেফাজতকর্মীকেও আটক করা হয়েছে।  এর মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন ছয় জন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ