মানুষের হাসিই আমার কাছে বড় : প্রধানমন্ত্রী

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৪০ পরিবারকে দুই শতাংশ জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  রবিবার (২০ জুন) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা দেশের ৪৫৯টি উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন এসব মানুষের হাতে জমির দলিল ও ঘরের চাবি তুলে দেন তিনি।  এ সময় তিনি বলেন, ‘ঘর পাওয়া মানুষের হাসিই আমার কাছে বড়’।
দেশের উপজেলা প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের হাত থেকে জমির দলিল ও ঘরের চাবি বুঝে নেন ছিন্নমূল এসব পরিবার।  অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিজ কার্যালয় থেকে কুড়িগ্রাম সদর, শেরপুরের ঝিনাইগাতি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি ঘর পেয়ে দুঃখী মানুষের মুখে যে হাসি, যে আনন্দ; এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু না’।  তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সমাজের একদম নিচু স্তরে পড়ে থাকা লোকদের টেনে তোলা, তাদের মূল সমাজের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা।  অর্থনীতির নীতিমালায় আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে একেবারে গ্রাম পর্যায়ে তৃণমূল মানুষের কাছে সুবিধা পৌঁছে দেওয়া।  এই মানুষগুলোর জীবনমান উন্নত করতেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি’।
আজকের অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দলিলে জমির মালিকানা স্বামী ও স্ত্রীর যৌথ নামে করে দেওয়া হয়েছে।  সেমিপাকা প্রতিটি ঘরে আছে দুটি রুম, একটি বড় বরান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেট।  পাশাপাশি সুপেয় পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও আছে।  এছাড়াও আত্মনির্ভরশীল করতে এসব পরিবারের কর্মসংস্থানের জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তের আলোকে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি এবং গৃহ প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।  এরই অংশ হিসেবে এ বছরের ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা বাড়ি ও ব্যারাকে ৬৯ হাজার ৯০৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ গৃহ উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  আজকের আশ্রয়ণের মধ্য দিয়ে গত ছয় মাসে মোট ১ লাখ ২৩ হাজার ২৪৪ ভূমিহীন পরিবারকে ঘর দেওয়া হলো।
এরও আগে জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে বহুতল ভবনে একটি করে ফ্ল্যাট প্রদানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবারকে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মাহবুব হোসেন বলেন, ‘একসঙ্গে এত মানুষকে জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর দেওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।  এই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল।  তিনি মনে করেন, আশ্রয়ণে ছিন্নমূল বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী স্থায়ী আবাসনের পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানেরও সুযোগ পাচ্ছে।  এতে দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশ আমি ঘুরেছি।  গ্রামগঞ্জে-মাঠে ঘাটে।  আওয়ামী লীগ অধিকার নিয়ে কাজ করে।  জাতির পিতা মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দিয়েছেন।  তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি’।  তিনি বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৪২ হাজার ৬০৮ পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছি।  এরমধ্যে জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে কক্সবাজারে রয়েছে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প ও আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প।  এছাড়াও আমাদের সচিবরা তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ১৬০টি পরিবারকে ঘর করে দিয়েছেন।  আমাদের পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থা এ কাজে এগিয়ে এসেছেন’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি, বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করবো।  এর জন্য শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছি।  মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেছি।  খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং গৃহহীন মানুষকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি।  বস্তিবাসীর জন্য ঢাকায় ভাড়ায় থাকার জন্য ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি।  অর্থনৈতিক নীতিমালায় আমরা তৃণমূলকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।  গ্রাম পর্যায়ে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া, তাদের খাদ্য, শিক্ষা ও বাসস্থান নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য’।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘ক্ষমতায় থেকে নিজে খাবো, নিজে খাবো, এটা নয়।  ক্ষমতা আমার কাছে মানুষকে শান্তিতে রাখা। কী ভাবে মানুষকে ভালো রাখা যায় এটা হলো বড়’।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না।  কোথাও কেউ গৃহহীন থাকলে আমাদের জানাবেন।  আমার লক্ষ্য এটাই, বঙ্গবন্ধুর সৃষ্ট বাংলাদেশে কোনো মানুষ ভূমিহারা, গৃহহারা থাকবে না।  তবেই আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রভাব শেষ হচ্ছে না।  টিকা নিয়ে আসছি।  আরও আনবো।  স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে।  হাত ধোয়া, মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা দরকার।  নিজে ভালো থাকবেন, অন্যকে ভালো থাকতে সহযোগিতা করবেন’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ