১৫ আগস্টে নেতাদের নির্লিপ্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন শেখ হাসিনা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
‘একটি মানুষ ছিল না সাহস করে এগিয়ে আসার? একটি মানুষ ছিল না প্রতিবাদ করার? কেন করতে পারেনি? এত বড় সংগঠন এত লোক কেউ তো একটা কথা বলার সাহসও পায়নি? জাতির পিতা তো অনেককে ফোনও করেছিল কোথায় ছিলেন তারা?’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় দলের নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, কেন তখন কেউ এগিয়ে এল না?
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দলের অনেক নেতাকে ফোন করেছিলেন, কী করেছিলেন তারা? বেঁচে থাকলে সবাই থাকে, মরে গেলে কেউ থাকে না, এটাই তার জীবন্ত প্রমাণ। আর সেজন্য আমিও কিছু আশা করি না’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস স্মরণে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনায় এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
২০২০ সালের মার্চে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর শেখ হাসিনা এই প্রথম দলের বড় কোনো অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশ নিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেলজিয়ামে থাকায় প্রাণে বেঁচেছেন। এরপর সেখান থেকে তিনি জার্মানি হয়ে যান ভারতে। ছয় বছরের নির্বাসন জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে ফেরেন দেশে। নেতৃত্বে আসেন আওয়ামী লীগের।
দেশে ফেরার ১৫ বছর পর শেখ হাসিনার হাত ধরেই ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আর এর পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতাকে হত্যার বিচারের পথ খোলেন। এরপরও নানা ঘটনাপ্রবাহ শেষে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকারে ফিরলে উচ্চ আদালতের সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাঁচ খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আরেক খুনি আজিজ পাশা।
২০২০ সালের ৭ এপ্রিল ভোরে মিরপুরের গাবতলী এলাকায় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিস) ইউনিটের একটি দল আটক করে আরেক পলাতক আসামি খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্তকৃত) আবদুল মাজেদকে। সেদিন দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে। সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে পাঁচ দিন পর ১২ এপ্রিল প্রথম প্রহরে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এখনও পাঁচ খুনি নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী খন্দকার আবদুর রশিদ, শরীফুল হক ডালিম ও মোসলেহউদ্দিন খানের সাজা কার্যকর করা যায়নি তাদের দেশে ফেরাতে না পারায়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় প্রতিবাদ হয়নি কেন-প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট, ৩২ নম্বরে লাশগুলো তো পড়ে ছিল। কত স্লোগান। বঙ্গবন্ধু তুমি আছো যেখানে আমরা আছি সেখানে, অমুক তমুক অনেক স্লোগান তো ছিল কোথায় ছিল সেই মানুষগুলো? একটি মানুষ ছিল না সাহস করে এগিয়ে আসার? একটি মানুষ ছিল না প্রতিবাদ করার? কেন করতে পারেনি? এত বড় সংগঠন এত লোক কেউ তো একটা কথা বলার সাহসও পায়নি? জাতির পিতা তো অনেককে ফোনও করেছিল কোথায় ছিলেন তারা?’
নিদারুণ অবহেলায় জাতির পিতাকে সমাহিত করার বিষয়টি নিয়েও আক্ষেপ করেন তার কন্যা। বলেন, ‘১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে গেল টুঙ্গিপাড়ায়। কারণ, দুর্গম পথ যেতে ২২ থেকে ২৪ ঘণ্টা লাগবে। তাই কেউ যেতে পারবে না। তাই সেখানে নিয়ে মা বাবার কবরের পাশে মাটি দিয়ে আসে। বাংলাদেশের গরিব মানুষের রিলিফের কাপড় তিনি দিতে পারতেন সেই রিলিফের কাপড়ের পার ছিড়ে সেটা দিয়েই তাকে কাফন দেয়া হয়েছিল। ১৬ তারিখ বাকি লাশগুলো বনানীতে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। মুসলমান হিসেবে এতটুক দাবি থাকে জানাজা পড়ার, সেটাও তো পড়েনি। কাফনের কাপড় সেটাও দেয়নি। ৭৫ এর ঘাতকরা বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র করার ঘোষণা দিয়েছিল, কিন্তু এক্ষেত্রে তো ইসলামের কোনো বিধি তারা মানেনি’।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা কিছু নিয়ে যাননি, শুধু দিয়ে গেছেন। একটা দেশ দিয়ে গেছেন একটা জাতি দিয়ে গেছেন, পরিচয় দিয়ে গেছেন। আত্মপরিচয় দিয়ে গেছেন। বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করে দিয়েছেন। কিছুই নিয়ে যাননি বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে। আমার মা বা ভাই বোন, তারাও কিছুই নিয়ে যাননি। আমার একটাই কথা জাতির দুখি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব সহ্য করে নীল কণ্ঠ হয়ে অপেক্ষা করেছি কবে ক্ষমতায় যেতে পারব, দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। তাহলেই হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে’।
তিনি বলেন, ‘যদি ৯৬ সালে সরকারে আসতে না পারতাম। যদি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করতে না পারতাম এই হত্যার বিচার হতো না। বার বার বাধা এসেছে। এমন কি বিচারের কথা বলতে যেয়ে বাধা পেয়েছি। বিচার করলে নাকি কোনো দিন ক্ষমতায় যেতে পারব না। আমি বাধা মানি নাই দেশে বিদেশে জনমত সৃষ্টি করেছি। সর্বপ্রথম এই হত্যার প্রতিবাদ করে বক্তব্য দিয়েছে আমার বোন রেহানা’।
বঙ্গবন্ধুতে হত্যার পর তার পরিবার নিয়ে চালানো অপপ্রচার নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। বলেনম ‘কত অপপ্রচার চালানো হয়েছে আমার বাবা, মা ভাইয়ের নামে! কত অপপ্রচার, কোথায় সেগুলো। কত রকমের মিথ্যা অপপ্রচার দিয়ে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও যখন দেখে বাংলাদেশের মানুষের মন থেকে জাতির পিতাকে মুছে ফেলা যায় না’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে হারিয়ে বেঁচে আছি। এ বাঁচা কত যন্ত্রণার বাঁচা যারা বাঁচে তারাই জানে। আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ