‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাত্তারকে জেতাতে আ’লীগের ৩ নেতার মনোনয়ন প্রত্যাহার’

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপি দলীয় এমপিদের পদত্যাগের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রবিবার (১৫ জানুয়ারি) এ নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। তবে এর একদিন আগেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগের তিন নেতা। কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় তারা তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে তারা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারকারীরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ) নেতা শাহজাহান সাজু।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপ-নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজনীতিবিদ বলেন, ‘মূলত কৌশলগত কারণে এখানে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এ আসনে পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা। আব্দুস সাত্তারের জয়লাভের মধ্য দিয়ে যেন এখানে তার ইমেজ ঠিক থাকে এর সুযোগ নিতে চায় আওয়ামী লীগ। কেননা, আওয়ামী লীগ মনে করছে, আব্দুস সাত্তারের চেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী রুমি ফারহানা। পরে নির্বাচনে আব্দুস সাত্তার থাকলে আওয়ামী লীগের জন্য জয়লাভ অনেকটা সহজ হবে। তাই সাত্তারকে জেতাতেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন প্রার্থীরা’।
এর আগে শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওই প্রার্থীদের এক বৈঠক হয়। জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হওয়া সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারসহ দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক সূত্র জানায়, ওই সভা থেকেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসে। এক্ষেত্রে উপ-নির্বাচনের এক বছর পরই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে তারা সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। মূলত বিএনপি থেকে পদত্যাগ ও বহিস্কৃত হওয়া আব্দুস সাত্তারকে জেতাতে এই সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে।
এ অবস্থায় আসনটিতে কপাল খুলতে যাচ্ছে পদত্যাগের পর দল থেকে বহিষ্কার হওয়া বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার!
সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক সভায় বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা অভিযোগ করেছিলেন, সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সাত্তারকে সরকার নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। তাকে চাপ দিয়ে এই নির্বাচনে আনা হয়েছে।
এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে যেহেতু দল কোনো প্রার্থী দেয়নি সেক্ষেত্রে দলের কথা বলে কেউ প্রার্থী হতে পারেন না।
এ আসনে মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা হওয়া আট প্রার্থী হলেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাসানী, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ ও জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জুয়েল।
মনোনয়ন বাতিল হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক, স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফ উদ্দিন মন্তু, শাহ মফিজ, মোহন মিয়া ও আব্দুর রহিম। হলফনামায় স্বাক্ষর, এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর, ব্যাংক স্টেটমেন্ট দাখিল না করাসহ বিভিন্ন ত্রুটির কারণে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের পর ওই সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের কেউ নির্বাচিত হননি। সারাদেশে যখন আওয়ামী লীগের জোয়ার তখনও (২০১৮) জোটের মারপ্যাঁচে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় সেখানে নিজেদের প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ভরাডুবি হয়। নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া জয়লাভ করেন। এছাড়া ওই নির্বাচনে ব্যক্তিগত ও এলাকায় দলীয় অবস্থান বিবেচনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে সামান্য ভোটে হেরে যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. মঈন উদ্দিন মঈন।
এদিকে, এ উপ-নির্বাচন নিয়ে বেশ আলোচনায় আছেন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা পাঁচবারের সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করে পরে আবার ক্ষোভে দল থেকেই পদত্যাগ করেন তিনি। পরে তার নামে কেনা হয় উপ-নির্বাচনের মনোনয়নপত্র। এর পরপরই তাকে দল থেকে বহিষ্কারের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। সবশেষ সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ