সাত্তারকে পাস করাবে সরকার : রুমিন ফারহানা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপি দলীয় এমপিদের পদত্যাগের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে বিএনপির সাবেক এমপি আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এ ঘটনায় পরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে, সাত্তারের মনোনয়ন সংগ্রহ করার পেছনে সরকারের চাপ রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি দাবি করেছেন, বিএনপির ইমেজ নষ্ট করতে সাত্তারকে চাপে ফেলে নির্বাচনে আনা হয়েছে এবং যেকোনো ভাবেই হোক সরকার তাকে পাস করিয়ে আনবে। যে কারণে ওই আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও তা পরে তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
রবিবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে একটি রেস্টুরেন্টে উপজেলা বিএনপি আয়োজিত সেমিনারে রুমিন এমন অভিযোগ করেন।
উপ-নির্বাচনে উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার অংশগ্রহণ করা নিয়ে ব্যারিস্টার রুমিন বলেন, ‘উনাকে (সাত্তার) পাস করিয়ে আনা হবে। এখানে তো ভোট হচ্ছে না, আপনারাও বুঝতে পারছেন। আওয়ামী লীগের যারা প্রার্থী ছিল তারা বসে পড়েছে। তারা নির্বাচনে অংশ নেন না। তার মানেটা কী? তারা জানে যে একটা কলাগাছ দাঁড়ালেই উনার সঙ্গে পাস করবে, উনার কোনো ভোট নাই। বিএনপির ভোট উনার নাই, আওয়ামী লীগের ভোটও উনার নাই। যে দাঁড়াবে সে পাস করবে। এই ঝুঁকিটাও আওয়ামী লীগ নিতে চাচ্ছে না। তাই আওয়ামী লীগের যারা প্রার্থী ছিল তারা বসে পড়ছে। সম্ভবত তাকে ডিক্লায়ার দিয়ে পাস করিয়ে দেবে’।
বিএনপির এ নেত্রী বলেন, ‘তিনি (আব্দুস সাত্তার) এমন একটি কাজ করবেন আপনারা যেমন কল্পনা করেন নাই, দলও কল্পনা করে নাই। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তিনি বলেছেন, তুমি এলাকায় চলে যাও। আমি সেই সময় ভাগ্যগুণে এলাকাতেই ছিলাম। তিনি আমাকে এলাকাতে আরও বেশি সময় দিতে বললেন’।
রুমিন বলেন, ‘বিএনপি এত বড় একটা দল, এত মানুষের সমর্থন, এত মানুষের ভালবাসা, এখানে এক বা দুইজন মীর জাফরি করলো কী না তাতে কিচ্ছু যায় আসে না’।
তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একটা কথা পরিষ্কার বলেছেন, ঘরে ঘরে আমাদের বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। ভোটের দিন আমরা কেউ ভোটকেন্দ্রে যাব না। অনেকের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকতে পারে, পারিবারিক সম্পর্ক থাকতে পারে, ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সেই সম্পর্কের রেশ ধরে যেন কেউ উকিল আব্দুস সাত্তারের পক্ষে কাজ না করি। কেউ যেন একটা ভোট না চাই। দল অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে আছে। আমাকে বলা হয়েছে, যারা কাজ করবেন তাদের নাম যেন আমি জমা দিই। যদি কোনো পদে থাকেন সেই পদ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হবে’।
ব্যরিস্টার রুমিন ফারহানা আরও বলেন, ‘আমি বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ারস টিমের সদস্য। তাই আমাকে নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। আন্তর্জাতিক খুব শক্ত চাপ আছে সরকারের ওপর। আর কোনো নির্বাচন এভাবে বিনা ভোটে, রাতের ভোটে করা যাবে না। আগামী নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’।
সেমিনারে আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ শাজাহান সিরাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন জয়, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নাসির মুন্সি, উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্য দেন।
২০১৮ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিজয়ী হয়েছিলেন। গত ১১ ডিসেম্বর বিএনপির সব সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আবারও অংশ নিতে যাচ্ছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। তিনি এই আসনে পাঁচবারের এমপি ছিলেন।
এ আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিন নেতা মঈন উদ্দিন মঈন, মাহবুবুল বারী চৌধুরী ও শাহজাহান সাজু তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে নির্বাচনে সাত্তারসহ এখন পাঁচ প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ