সিটি নির্বাচনে বিএনপির কঠোরতা, প্রার্থী হলেই বহিষ্কার

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
সিটি নির্বাচন নিয়ে কঠোর অবস্থানে বিএনপি। কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে দল থেকে বহিষ্কারের বার্তা দিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। এমনকি নির্বাচনী মাঠেও থাকবে না দলটির কোনো ‘ছায়া প্রার্থী’। সরকারবিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ দিতে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। মঙ্গলবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেতারা। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার আগের সিদ্ধান্তে অনড় থাকার কথা জানিয়ে নেতারা বলেছেন, আসন্ন সিটি নির্বাচনে দলের কেউ প্রার্থী হলে সরাসরি বহিষ্কার করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে কারও প্রতি কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো হবে না। কারণ এই মুহূর্তে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করাই লক্ষ্য। জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সিটি নির্বাচনে দলের কারও অংশ নেয়া ভুল বার্তা দেবে। তাই দলের কেউ কাউন্সিলর পদেও নির্বাচন করতে পারবেন না।
‘ফাঁদে’ পড়ে কেউ যেন নির্বাচনে অংশ না নেয়, এজন্য দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাউন্সিলিং করবেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে যারা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাদেরকে আজ-কালের মধ্যে দলীয় সিদ্ধান্তের বিশেষ সতর্কবার্তা দেয়া হবে। মূলত সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতেই এই বিশেষ বার্তা বিএনপির। স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের একধিক নেতা বলেন, সরকার সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে ‘ফাঁদ’ পেতেছে। বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতেই অত্যন্ত কৌশল করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়ে বিএনপিকে তাদের পাতানো ফাঁদে আটকাতে চাচ্ছে। তবে বিএনপি সরকারের কোনো ফাঁদে পা দেবে না। পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫ সিটি নির্বাচনও বয়কট করছে বিএনপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, নির্বাচন কমিশন সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকেই আমরা বলে আসছি এই সরকারে অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবো না। এর মধ্যে সরকারের পাতানো ফাঁদে জড়াতে দলের স্থানীয় পর্যায়ের কেউ কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছেন। দলের হাইকমান্ড তাদেরকে নিষেধ করেছেন। শুধু মেয়র পদে নয়, কাউন্সিলর পদেও অনেকে নির্বাচন করতে চেয়েছেন। যেহেতু দলীয় সিদ্ধান্ত বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, সেহেতু দলের কেউ সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে তৎক্ষণিকভাবেই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যাবস্থা নেয়া হবে। এমনকি দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। তিনি আরও বলেন, ৫ সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে যারা প্রার্থী হওয়ার চেষ্টায় আছেন। তাদের একটা তালিকা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের হাতে রয়েছে। আগামি দু’একদিনের মধ্যে তাদেরকে এই বিষয়ে সতর্ক করা হবে। তাদের সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাউন্সিলিং করা হবে। যদি তাতেও কাজ না হয় তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদেরকে যারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করবে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপি অনেকই আগেই ঘোষণা দিয়েছে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। কারণ এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। শত চেষ্টা করলেও সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ সরকার সকল নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন নতুন করে সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রে মেতেছে। যখন বিএনপি সরকার বিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছে, ঠিক তখনই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন করছে সরকার।
এদিকে সিটি নির্বাচন বয়কটের পাশাপাশি আন্দোলন নিয়ে কঠোর দলটির শীর্ষ নেতারা। ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আবারো কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছে দলটি। আগামি ১ মে ঘোষণা করা হবে নতুন কর্মসূচি। সমমনা দলগুলোকে নিয়ে এবারের যুগপৎ আন্দোলন ক্রমইে গতিশীল করতে চায় বিএনপি। জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় পর্যায়ে বড় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থায়ী কমিটি। সূত্র বলছে, জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় পর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি রোডমার্চের চিন্তা করা হচ্ছে।
আগামি মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সরকারের পতন ও দাবি আদায়ে সামনের দিনগুলোতে কী কী কর্মসূচি দেয়া হবে তা নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোটসহ অন্যান্য মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে বিএনপি। আগামী মাসের প্রথম দিকে বিএনপি কর্মসূচির খসড়া তালিকা তৈরি করবে। এরপর যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। সে অনুযায়ী মাঠে আন্দোলন বাস্তবায়ন করবে দলগুলো।
জানা যায়, আগামি ১ মে শ্রমিক দিবসে ঢাকায় বড় সমাবেশ করবে বিএনপি। ওইদিন বেলা আড়াইটায় ঢাকার নয়াপল্টনে বড় আকারে শ্রমিক সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ