বিএনপি-জামায়াত থেকে সাবধান থাকতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
দেশবাসীকে ‘বিএনপি-জামায়াত থেকে সাবধান’ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘খুনি, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ, মানুষ হত্যাকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি বিএনপির থেকে দেশবাসী সাবধান। জামায়াত বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধী, নারী ধর্ষণকারী, লুটপাটকারী, একাত্তরের অপরাধীদ… যাদের আমরা শাস্তি দিয়েছি; তাদের থেকেও দেশবাসী যেন সাবধান থাকে। আমি দেশবাসীর কাছে এটাই বলবো— গণতন্ত্র ওদের মুখের কথা, ওরা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না, গণতন্ত্র ওরা দেশে রাখবেও না। ওরা দেশকে আবার ধ্বংসের দিকে ঠেলে নেবে’।
শনিবার (১২ আগস্ট) রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
অপকর্মকারী ও অপরাধীরা আছে বিএনপির সঙ্গে
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ বিএনপির কথা বিশ্বাস করে না। হ্যাঁ, তাদের কিছু লোক আছে, অ্যান্টি আওয়ামী লীগ কিছু লোক আছে; থাকবেই। যেহেতু স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধী শক্তিটা আছে, তাদের সাজা দিয়েছি, তাদের আওলাদ-বুনিয়াদ আছে। জাতির পিতা ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকারীদের আওলাদ-বুনিয়াদ আছে, এগুলোতো তাদের (বিএনপি) সঙ্গে থাকবেই, আমরা জানি।
যত অপকর্মকারী এবং অপরাধী, তারাও বিএনপির সঙ্গেই আছে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তিনি বলেন, ‘আর আমাদের দেশের কিছু বুদ্ধিজীবী আছে তাদের বলবো— তারা যেন ভেবে দেখেন দেশের অবস্থা কী ছিল, আর যদি ওরা কোনোদিন ক্ষমতায় আসে দেশের অবস্থা কোথায় যাবে?’
মানুষকে আলোর পথ দেখাতে পারেনি বিএনপি
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাক মোকাবিলা করার মত শক্তি বিএনপির নেই, তারা কোনো দিন করেনি। মানুষকে অন্ধকারেই ঠেলে দিয়েছে, আলোর পথ দেখাতে পারেনি। আওয়ামী লীগ আছে বলেই, নৌকা মার্কায় জনগণ ভোট দিয়েছে বলেই আমরা তাদের সেবা করতে পারছি, দেশে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কেউ এ দেশকে পেছাতে পারবে না’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জয়বাংলা স্লোগান বন্ধ ছিল, ৭ মার্চের ভাষণ বাজাতে গিয়ে আমাদর বহু নেতা জীবন দিয়েছিল। কিন্তু আজ তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। জয়বাংলা স্লোগান জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছে। কাজেই যতই ইতিহাসকে বিকৃতি কিংবা বাংলাদেশকে পেছনে টানার চেষ্টা করুক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন— বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না’।
বিএনপির সঙ্গে কোনো আন্তর্জাতিক শক্তি নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সঙ্গে কিছু… তারা নাকি আন্তর্জাতিক শক্তি পায়? কোন শক্তিটা (তাদের সঙ্গে) আছে সেটাই জানতে চাই। কোনও শক্তিই নাই তাদের সঙ্গে। লুটেরাদের সঙ্গে কেউ থাকেও না’।
‘এখন কোন মুখে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়’
ক্ষমতা থাকতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন না করে এখন কোন মুখে সেটা চাচ্ছে সেই প্রশ্নও রাখেন প্রধানমন্ত্রী। নব্বইয়ের দশকে তিন জোটের রূপরেখার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নব্বইয়ের দশকে আন্দোলন করেছি। যুগপৎ আন্দোলনও করেছি। সেখানে সংসদীয় গণতন্ত্র আনার একটা ধারা ছিল। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছিল। তারা কিন্তু আনতে চায়নি। তখন আমরা আমাদের বিরোধী দল থেকে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিল সংসদে উপস্থাপন করি। তখনও খালেদা জিয়া নড়চড় করছিল, তখন সাহাবুদ্দিন সাহেব তাদের ধমক দেয়— যে তোমরা এই পরিবর্তন না আনলে আমি সংসদ ভেঙে দেবো। তখন বিএনপি সেই বিল আনে। সেখানে আমাদের দাবি ছিল যে, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটা রাখা হোক। আমরা এটা নিয়ে অনেকবার কথাও বলেছি। আমরা তো সমর্থন দিতে চেয়েছিলাম। খালেদা জিয়া তো তখন রাখেনি। বিএনপি যে এখন আন্দোলন করে, তো সেটার কী জবাব দেবে? তাদের কী অধিকার আছে বলার? তাদের হাতে যখন সুযোগ ছিল, তখন তারা তা করেনি। সেই সময় তো তত্ত্বাবধায়ক দিতে খালেদা জিয়া তো রাজি হয়নি। আজকে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য বিএনপির এত আন্দোলন কেন?’
তিনি বলেন, ‘তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের নির্বাচন করতে চায়, গণতন্ত্র উদ্ধার করতে চায়… (তারা) কী গণতন্ত্র দিয়েছে বাংলাদেশে? জিয়াউর রহমান দিয়েছিল স্বৈরতন্ত্র, মার্শাল ল, সারা রাত কারফিউ, তাহলে কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছিল। বিএনপির অত্যাচারের শিকার হয়েছিল প্রশাসনের কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হতে শুরু করে দেশের সর্বস্তরের মানুষ’।
‘তারা পাগল আর শিশু পেয়েছে কি?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির নেতারা সারা দিন তিন-চারজন মাইক লাগিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। তাদের প্রশ্ন করি— তখন খালেদা জিয়া বলেছিল পাগল আর শিশু ছাড়া কোনও নিরপেক্ষ নেই। আমি এখন তাদের জিজ্ঞাস করি— তারা পাগল আর শিশু পেয়েছে কিনা? সেই জবাবটা জাতির কাছে আগে তাদের দিতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের পদক্ষেপ বন্ধ হয়ে যায়। মানুষ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়। ১৫ আগস্টের পর ক্ষমতা বদলের পালাবদল শুধু হয়। উর্দি পরে রাজনীতিবিদদের গালি দিয়ে ক্ষমতায় এসে নিজেরাই রাজনীতিবিদ হয়ে যায়। ক্ষমতায় বসে উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দলটি গঠন করেছিল, সেটা আজকের বিএনপি। তারা মানুষকে কী দিতে পেরেছে?’
বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়া জড়িত
জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘মোশতাক ষড়যন্ত্র করেছিল জিয়াকে নিয়ে। যে কারণে মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করে। জিয়া ক্ষমতায় গিয়ে খুনিদের পুরস্কৃত করে’।
জিয়াউর রহমানকে কেন উপ-সেনাপ্রধান করা হয় তার কারণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান খালেদা জিয়াকে ঘরে নিতে চায়নি। সে তখন কুমিল্লা ডিভিশনে ছিল। খালেদা জিয়ার কান্নায় জাতির পিতা জিয়াউর রহমানকে ঢাকায় নিয়ে এসে এই পদ সৃষ্টি করে তাকে দিয়ে তার সংসারটা বাঁচিয়েছিল। যে কারণে আজ খালেদা জিয়া বেগম জিয়া হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন। প্রায় প্রতি মাসেই তো আমাদের বাড়িয়ে গিয়ে ধরনা দিতো। তার সাক্ষী তো আমি নিজেই।’
১৯৯১ সালে জাপা-জামায়াত আ.লীগকে সমর্থন দিতে চেয়েছিল
১৯৯১ সালে নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘সেই নির্বাচনে কোনও দলই মেজরিটি পায়নি। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন কিন্তু আমাকে সরকার গঠনের জন্য ডেকেছিলেন। জামায়াত ও জাতীয় পার্টি; তারা সমর্থন দিতে চেয়েছিল আমাকে। তাদের নিয়ে সরকার গঠন করার মতো মেজোরিটি কিন্তু আমাদের হতো। কিন্তু আমি সেটা রাজি হইনি সঙ্গত কারণেই। আমি বলেছিলাম— এভাবে আমি সরকার গঠন করবো না। কারণ আমি জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। এভাবে সরকার গঠন করে মানুষের কাজ করতে পারবো না। আমি রাষ্ট্রপতিকে বললাম— আপনি অন্য কাউকে ডাকেন। তখন খালেদা জিয়া জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে’।
১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষ ওই নির্বাচন মেনে নেয়নি। ভোট চুরি করলে মানুষ তা মেনে নেয় না, এটা ছিল তার প্রমাণ। ওই নির্বাচনের পরে বোধহয় কয়েকদিন তারা সংসদে বসতে পেরেছিল। ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। জনগণের ভোট চুরি করেছিল বলেই জনগণের রুদ্ধরোষে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। যারা জনগণের ভোট চুরি করে পদত্যাগ করে, তারা আবার নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন কোন মুখে? সেটা আমার প্রশ্ন’।
তারা সরকার উৎখাত করতে চায়
বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আজ যখন বাংলাদেশের অর্থনীতি মজবুত ও শক্তিশালী। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এখন তারা সরকার উৎখাত করতে চায়। তার মানে বাংলাদেশকে আবার সেই অন্ধকার যুগে নিতে চায়। আমরা দেখলাম— তারা অনেক বড় বড় কথা বলে, এক দফা আন্দোলন। কী— আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। আর আমাদের পদত্যাগ করতে হবে। আমার জাতির কাছে প্রশ্ন— আমাদের অপরাধ কী? আমরা কী অপরাধটা করেছি। বিএনপি কী জবাব দেবে? শত শত সেনা অফিসার হত্যার জবাব কী খালেদা জিয়া বা তার দল দিতে পারবে?’
২০০১ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের সম্পদ বেঁচে ক্ষমতা লোভ আমাদের নেই, আমরা সেটা চাইনি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যে অত্যাচার নির্যাতন করেছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, হাত কেটে দিয়েছে, চোখ উপড়ে ফেলেছে; আমরা তো সেই পথে যাইনি। এর কী জবাব দেবে? খালেদা জিয়ারা কী জিনিস, তা দেশবাসীর মনে রাখা উচিত। তারা তো মুখে বলেছে— আরেকটা ১৫ আগস্ট হবে। তারপর আমাকে তো সরাসরি…।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে হত্যার হুমকি দাতা এফবিআইয়ের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে শুধু একটা ঘোষণা দিয়েছিল, সেই জন্য তাকে এফবিআই সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে। আর আমিতো থ্রেট, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, বোমা পুঁতে রাখা, সরাসরি গুলি; এগুলো সবই আমাদের ভাগ্যে আছে। বেঁচে যাচ্ছি… আমাদের নেতাকর্মীরা মানবঢাল করে আমাকে রক্ষা করছে। আজকে তারা এইভাবে আমাকে থ্রেট করবে, আমার ছেলে ও নাতিকে কিডন্যাপ বা মেরে ফেলতে টাকা দিয়েছিল এফবিআইকে। এর জবাব আছে বিএনপির কাছে?’
বিএনপির কারণেই ‘১/১১’ ঘটেছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুইটা বছর দেশের অবস্থা কী ছিল? সেই ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা, তাদের ধরে ধরে নেওয়া, শুদ্ধি অভিযান না কী একটা বানিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া। যে কিছু করেওনি, সেও মামলার ভয়ে টাকা ধার করে দেখাতে হয়েছে যে— আমার কাছে এত টাকা ছিল। রাজনৈতিক নেতা কর্মী, ব্যবসায়ী হতে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ অত্যাচারিত-নির্যাতিত হয়েছে’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ