আজ পবিত্র আশুরা

উম্মে সালমা, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আজ রবিবার (৩০ আগস্ট) সারাদেশে পবিত্র আশুরা উদযাপন করছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।  সারাবিশ্বের মুসলমানদের কাছে আশুরার দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময়।  ইসলাম ধর্মমতে, মহান আল্লাহ এই দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এই দিনেই পৃথিবী ধ্বংস হবে।  বাংলাদেশে এটি সরকারি ছুটির দিন।
ইসলামের ইতিহাসে বিষাদময় কারবালাসহ নানা ঘটনার স্মরণে আরবি সনের হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা পালিত হয়।  মহররম অর্থ অধিক সম্মানিত।  মহররম মাসের দশম দিনকে আশুরা বলা হয়।  আশুরার দিনে বিশ্বে সংঘটিত অলৌকিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ঘটনার কারণে মুসলমানদের কাছে ১০ মহররম বিশেষভাবে মহিমান্বিত।  শোকের প্রতীক হিসেবে বিশ্বজুড়ে মুসলমান সম্প্রদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেন।
আশুরা উপলক্ষে যথাযথ মর্যাদায় বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আজ নানা কর্মসূচি পালন করছে।  এ উপলক্ষে শনিবার (২৯ আগস্ট) সারাদেশে মসজিদে মসজিদে বিশেষ মিলাদ মাহফিল করেছে স্ব স্ব এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।  শিয়া মতাবলম্বীদের কাছে এটি বিষাদের দিন।  শোকের প্রতীক হিসেবে দিনটি পালন করতে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ রাজধানীতে প্রতিবছর তাজিয়া মিছিল বের করলেও এবার করোনার কারণে এতে দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।  নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  রাজধানী ঢাকার মতোই চট্টগ্রামেও তাজিয়া মিছিলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।  চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সব ধরণের অস্ত্র বহনেও দিয়েছে নিষেধাজ্ঞা।  নিয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।  আগের বছরগুলোর মতো এবারও তাজিয়া মিছিলে কাউকে ধারালো বা দাহ্য বস্তু নিয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।  নির্বিঘ্নে আশুরা উদযাপন উপলক্ষে ইমামবাড়ার হোসাইনী দালান এবং আশপাশের এলাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আশুরার তাৎপর্য বর্ণনা করে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে।  দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
ইসলাম ধর্মমতে, আশুরার দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করা হয়েছিল।  আশুরার দিন আল্লাহ পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করেছেন।  এই দিনে আল্লাহ নবীদেরকে স্ব স্ব শত্রুর হাত থেকে আশ্রয় প্রদান করেছেন।  এই দিন হযরত নুহ (আ.) এর প্লাবন শেষ হয় এবং নুহ (আ.) এর জাহাজ তুরস্কের ‘জুদি’ নামক পর্বতে গিয়ে থামে।  আশুরার দিন হযরত ইব্রাহিম (আ.) জালিম বাদশাহ নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে নিরাপদে মুক্তি পেয়েছিলেন।  এই দিন হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।  আশুরার দিনে হযরত আইয়ুব (আ.) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
আশুরার দিন হযরত সুলাইমান (আ.) তার হারানো রাজত্ব ফিরে পান।  এইদিনে হযরত ইয়াকুব (আ.) হারানো ছেলে হযরত ইউসুফ (আ.) কে ৪০ বছর পর ফিরে পেয়েছিলেন।  এইদিনে হযরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন এবং এইদিনেই তাকে দুনিয়া থেকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়।
সর্বশেষ ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে এই দিনে ফোরাত নদীর তীরে ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রা.) সপরিবারে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন।

ডিসি/এসআইকে/ইউএস