বৃহস্পতিবার মহালয়া

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
অতীতের নিয়ম ভেঙে বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মহালয়ার সূর্য উঠবে স্তোত্রপাঠ শুনতে শুনতেই।  পিতৃপক্ষের অবসান হলেও দেবীপক্ষের সূচনা হতে আরও মাসখানেক দেরি।  তবে শরতের ভোর, কাশফুলের বাতাসে দোল খাওয়া, শিউলি ফুল, ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গা আসছেন মর্ত্যলোকে।
পূর্বপুরুষ, ঋষি, পিতা-মাতা এবং গুরুর উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য ও জল নিবেদন করে তর্পণ শেষ করেছেন গৃহস্বামীরা।  মহালয়ায় মাতৃপূজার মহালগ্নকে বরণ করবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবাই।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০২০ সালে মল চন্দ্র আশ্বিন মাস শুরু হচ্ছে মহালয়ার পরের দিন ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে।  সেই মল চন্দ্র আশ্বিন মাস শেষ হবে ১৬ অক্টোবর।  ২০০১ সালেও ঘটেছে এমন ঘটনা।  সৌর ও চন্দ্র বছরের দৈর্ঘ্যের ব্যবধানকে মিলিয়ে দেওয়ার কারণেই এমনটা ঘটেছে।  শাস্ত্রমতে, মল মাসে দুর্গাপূজা হয় না।
এবছর গিরীরাজ নন্দিনী আসছেন দোলায় এবং গজে (হাতি) গমন।  আগামি ২১ অক্টোবর পঞ্চমী তিথি শেষে ২২ অক্টোবর সন্ধ্যায় ষষ্ঠী তিথিতে হবে দেবীর বোধন।  ২৩ অক্টোবর সপ্তমী, ২৪ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ২৫ অক্টোবর মহানবমী ও ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে বিসর্জনে শেষ হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
করোনার প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে সব আয়োজনে টানা হয়েছে লাগাম।  তবুও বাণী কুমারের গ্রন্থণায় এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, উৎপলা সেন, ইলা বসু, পঙ্কজ মল্লিক, সুপ্রীতি ঘোষের গানে দেবীর স্তুতি ও আগমনি সংগীত শুনতে ভুল করেন না কেউ।
১৯৩১ সালে মহালয়ার আগের রাতে সব শিল্পী জড়ো হয়েছিলেন কলকাতার আকাশবাণী বেতার ভবনে।  ব্রাহ্মমুহূর্তে মা দুর্গাকে স্মরণ করে স্ত্রোত্র পাঠ শুরু করলেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র।  সেই রেকর্ড বাজছে আজও।  সমসাময়িককালে অনেকেই এমন চন্ডীপাঠের অনুকরণ করতে চেয়েছেন, কিন্তু পারেননি।  ১৯০৫ সালে আহিরিটোলায় কালীকৃষ্ণ ভদ্র-সরলাবালা দেবীর কোলে জন্মেছিলেন যে বীরেন্দ্র, কে জানতো পরবর্তীতে তিনিই হয়ে উঠবেন মহালয়ার কীর্তিগাথা প্রকাশের নায়ক!
বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র শুরুতেই আবাহন করলেন- ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর, ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা, প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা।  আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবন।  তাই আনন্দিতা শ্যামলীমাতৃকার চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আবাহন।  আজ চিৎ-শক্তিরূপিনী বিশ্বজননীর শারদ স্মৃতিমন্ডিতা প্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানবোধিতা’।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার জানান, নগরের জেএম সেন হলে বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মহালয়ার বিভিন্ন মাঙ্গলিক কর্মসূচি স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হবে।  সকাল ৮ টায় চন্ডীপাঠ, ১০ টায় মহালয়া পূজা, বেলা ১ টায় অঞ্জলি প্রদান, দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে প্রসাদ বিতরণ, বিকাল ৩ টায় ধর্মীয় আলোচনা সভা, বিকাল ৪ টায় শঙ্খ ও উলুধ্বনি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত বলেন, শ্রীশ্রী চন্ডীর উৎপত্তিস্থল বোয়ালখালীর কড়লডেঙ্গা মেধস মুনির আশ্রমে দেবীপক্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠান কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী সীমিত পরিসরে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে।  মহালয়ার অনুষ্ঠান শুধুমাত্র মাতৃপূজা, প্রার্থনা ও পুষ্পাঞ্জলি প্রদানের মধ্য দিয়ে উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখা।
এবছর মহালয়া উপলক্ষে মেধস আশ্রমে পূজার্থীদের যাতায়াতের জন্য কোনো যানবাহনের ব্যবস্থাও থাকছে না।  চট্টগ্রাম জেলার আওতাধীন ১৫ উপজেলায় অনুরূপভাবে সীমিত পরিসরে মহালয়া উদযাপনের জন্য জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা পূজা পরিষদের উদ্যোগে পটিয়া রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে মায়ের পূজা, ভোগ নিবেদন ও পুষ্পাঞ্জলি গ্রহণের মধ্যদিয়ে মহালয়া উদযাপন করা হবে বলে জানান সভাপতি জিতেন কান্তি গুহ।

ডিসি/এসআইকে/এসএজে