রিমান্ড : হেফাজত নেতাদের কাছে যেসব তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চাপে পড়েছে হেফাজতে ইসলাম।  একদিকে লকডাউন, অন্যদিকে গ্রেফতার অভিযান।  সবমিলিয়ে দিশাহারা নেতা-কর্মীরা।  এই অবস্থায় কী করণীয় তা নির্ধারণ করতে জরুরি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেছেন তারা।  ইতোমধ্যে সারা দেশে দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে দলটি।  গ্রেফতার কেন্দ্রীয় নেতাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।  ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী চালানো তাণ্ডব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের।  ইতোমধ্যে এসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
কিছু নেতার সরাসরি ভূমিকা রয়েছে বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।  এ ছাড়াও শাপলা চত্বরের সমাবেশ ও ঘেরাও কর্মসূচিতে সরকারবিরোধী এক ষড়যন্ত্র ছিল বলে দাবি করেছেন তারা।  এতে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী ছাড়াও বিএনপি ও সমমনা দলের কিছু নেতা জড়িত ছিলেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে-এমনটি বলা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গতকাল কয়েকজন নেতাকে একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।  সরকারবিরোধী কার্যক্রমের নেপথ্যে বিশেষ কি উদ্দেশ্য, এসব বিষয়ে বারবার জানতে চাইলে হেফাজতের নেতৃবৃন্দ তা অস্বীকার করেছেন।  তারা গোয়েন্দাদের প্রাপ্ত তথ্য অস্বীকার করে নিজেদের ইসলামের পক্ষের কর্মী হিসেবে দাবি করেন।
হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের রিসোর্ট কাণ্ড সম্পর্কে হেফাজতের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, তা একান্তই মামুনুল হকের ব্যক্তিগত বিষয়।  তবে মামুনুল হকের এই ঘটনার পর হেফাজতের অনেকের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।  মামুনুলের ব্যক্তিগত বিষয়ের দায় সংগঠন নিতে চায় না।  তবে মামুনুল হক শরিয়া মোতাবেক দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন জেনেই হেফাজত এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে জানান।  মামুনুল হককে গতকাল গ্রেফতার করা হয়েছে।  আজ তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে ডিবি জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত ২৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ দেশব্যাপী তাণ্ডব সম্পর্কে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।  এর পেছনে অন্য কোনো শক্তি ছিল কি-না এ বিষয়ে তথ্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করবেন গোয়েন্দারা।  তাছাড়া তার ব্যক্তিগত জীবনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, শাপলা চত্বরের অবরোধ, নাশকতা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ে চালানো তাণ্ডব সম্পর্কে হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।  এসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।  অনেক বিষয় তারা অস্বীকার করছেন।  এ বিষয়ে তাদের আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গতকাল হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে।  তার আগে শনিবার গ্রেফতার করা হয় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি মোহাম্মদ জুনায়েদ আল হাবীবকে।  ওই দিন দুপুরে গ্রেফতার করা হয় হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদকে।
এর আগে, হেফাজতের ঢাকা মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা জুবায়ের আহমেদ, হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, হেফাজত নেতা শাখাওয়াত হোসেন রাজী, ফখরুল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলামসহ মোট আট জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।  তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। মাওলানা মামুনুল হক ছাড়া তারা প্রত্যেকেই রিমান্ডে রয়েছেন।  মামুনুল হককে আজ আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে।  গতকাল মোহাম্মদ জুনায়েদ আল হাবীবকে সাতদিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি পুলিশ।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ