আজ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হওয়ার দিন পবিত্র ঈদ-উল আযহা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল আযহা আজ (বুধবার)।  যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ-উল আযহা উদযাপন করবে।  মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদ-উল আযহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন।  তবে করোনা মহামারির অনিশ্চিত আশঙ্কার মধ্যেই দ্বিতীয়বারের মতো এসেছে এবারের পবিত্র হজ এবং ঈদ-উল আযহা।  সীমিত আকারে হজ পালন হলেও দেশে ঈদ-উল আযহা উদযাপনে আছে স্বাস্থ্যবিধি পালনের নির্দেশনা।
ঈদের আনন্দ অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস।  করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে শুরু হয় বন্যা।  পাশাপাশি আজ থেকে শুরু হচ্ছে শোকাবহ আগস্ট।
ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদ-উল আযহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে সবাইকে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই পবিত্র ঈদ-উল আযহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং ঈদ মোবারক জানান।  তিনি বলেন, ‘গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা এক সংকটময় সময়ে ঈদ-উল আযহা উদযাপন করছি।  করোনা ভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে।  আমাদের সরকার এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।  আমরা জনগণকে সকল সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।  স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আমরা এই সংকট মোকাবেলায় সফল হবই’।
এছাড়াও ঈদ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  এবার ঈদে ছুটি তিন দিন ঘোষণা করেছে সরকার।  ঈদ উপলক্ষে মঙ্গলবার (২০ জুলাই), বুধবার (২১ জুলাই) ঈদের দিন এবং বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) ছুটি থাকবে।  তবে শুক্রবার (২৩ জুলাই) এবং শনিবার (২৪ জুলাই) সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় তা ৫ দিনে বাড়েছে।  মহামারির কারণে এবারের ঈদের ছুটির সময় বেশ কিছু দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক কর্মস্থলে থাকতে হবে। তারা কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না।
করোনা মোকাবিলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধে ঈদুল ফিতরের মতো এই ঈদেও সরকারের নির্দেশনায় খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।  ঈদ জামাত হবে এলাকার মসজিদের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে।  ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত আদায় করা যাবে।  কোলাকুলি এবং হাত মেলানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবার পবিত্র ঈদ-উল আযহার নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না।  নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।  মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে বাসা থেকে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।
প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদে আসতে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
ঈদ পালনে এবং পশু কোরবানির জন্য স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।  এবারও হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হচ্ছে না।  হচ্ছে না শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতও।  তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবার ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
সকাল ৭ টায় হবে প্রথম জামাত। এরপর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে শেষ জামাত।  এছাড়া নগরবাসীদের নিজ নিজ বাসার কাছে মসজিদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ পড়তে হবে।
এবার রাজধানীর বাইরের মাঠগুলোতে স্থানীয় সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে ঈদের জামাত করা যাবে।  সেক্ষেত্রে ১২টি স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।  নামাজ শেষে করা যাবে না কোলাকুলি।  যাবে না হাত মেলানোও।
করোনার কারণে গত তিনটি ঈদের ন্যায় এবারও হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হচ্ছে না।  হচ্ছে না শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতও।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ১২ নির্দেশনা
১. করোনা সংক্রমণের স্থানীয় পরিস্থিতি ও মুসল্লিদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করে ঈদুল আজহার জামাত মসজিদ নাকি ঈদগাহে বা খোলা জায়গায় হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।  ঈদের নামাজ আদায়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক জারি করা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
২) মসজিদে ঈদের নামাজ আয়োজনের ক্ষেত্রে কার্পেট বিছানো যাবে না।  নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।  মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।
৩) প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদ/ঈদগাহে আসতে হবে।  ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।
৪) করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকল্পে মসজিদ ও ঈদগাহে ওজুর স্থানে সাবান, পানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
৫) মসজিদ/ঈদগাহ মাঠের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান ও পানি রাখতে হবে।
৬) ঈদের নামাজের জামাতে আগত প্রত্যেক মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে।  মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
৭) ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।  এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে।
৮) শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিতদের ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করা হলো।
৯) সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
১০) ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করতে হবে।
১১) করোনা মহামারির এ বৈশ্বিক মহাবিপদ থেকে রক্ষা পেতে বেশি বেশি তওবা, আস্তাগফিরুল্লাহ ও কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে এবং ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
১২) খতিব, ইমাম, মসজিদ/ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
ঈদ উপলক্ষে নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ঢাকার দুই মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং আতিকুল ইসলাম।  দুই মেয়র নগরবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপনের অনুরোধ জানিয়েছেন।
ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমগুলো যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে।  ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধনিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।  বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন হবে।  এ উপলক্ষে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কোরবানি দেওয়া পশুর রক্ত বা বর্জ্যের কারণে যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয়, সে বিষয়ে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান।
এ বছর করোনা ভাইরাসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  এজন্য সংস্থা দুটির হাজারও কর্মী মাঠে থাকবেন।  সাড়ে ৭০০ যানবাহন ব্যবহার করে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হবে।  এর পাশাপাশি ছিটানো হবে জীবাণুনাশক ও ব্লিচিং পাউডার।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ