দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
আলোর স্বল্পতার কারণে দ্বিতীয় দিনের পুরোটা খেলা হয়নি। একঘণ্টা আগে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরে দিন শেষের ঘোষণা আসে। শেষ বিকেলটা মেঘ কেড়ে নিলেও বাকি সময়টা ছিল বাংলাদেশের, ঠিক প্রথম দিনের মতো। আগের দিন বাংলাদেশ হারিয়েছিল ২ উইকেট, দ্বিতীয় দিনেও তাই। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হকের সেঞ্চুরিতে পার করেছে সোনায় মোড়ানো আরেকটি দিন। ফলে বাংলাদেশের আরো একটি দিন দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যান্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে সফরকারীদের স্কোর ৪ উইকেটে ৪৭৪ রান।
কালো মেঘে ছেয়ে গিয়েছিল ক্যান্ডির আকাশ। ছিল আলোর বড্ড অভাব। আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা আলো মাপার যন্ত্র দিয়ে দেখলেন অবস্থা। তার আগেই অবশ্য মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য হাঁটা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়রা। এরপর আর মাঠে ফেরা হয়নি, ফলে ২৫ ওভার আগেই শেষ হয় দ্বিতীয় দিন।
টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পূরণ করে শান্ত খেলেছেন ১৬৩ রানের ঝলমলে ইনিংস। আর মুমিনুল দেশের বাইরে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে খেলেছেন ১২৭ রানের ইনিংস। তাদের বিদায়ের পর শ্রীলঙ্কান বোলারদের পরীক্ষা নিয়েছেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। তৃতীয় দিন শুরু করবেন মুশফিক ৪৩ রানে, আর লিটন ২৫ রান নিয়ে।
দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ ব্যাট করেছে ৬৫ ওভার, ২ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে তুলেছে ১৭২ রান। সাফল্যের হিসাব কষলে এদিন প্রাপ্তিতে যোগ হয়েছে অনেক কিছু। তৃতীয় উইকেটে রেকর্ড জুটি হযেছে, বিদেশের মাটিতে মুমিনুল পেয়েছেন প্রথম সেঞ্চুরি, ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিকে দেড়শতে নিয়ে গেছেন শান্ত; তবে সবচেয়ে বেশি স্বস্তির হলো, টপ অর্ডারে বাংলাদেশের দাপুটে পারফরম্যান্স। সাইফ হাসান ব্যর্থ হলেও তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে এসেছে ৯০ রান।
ক্লাসিক মুমিনুল
টি-টোয়েন্টির যুগে ক্রিকেটে ধাঁচই পাল্টে গেছে। টেস্ট ক্রিকেটেও চলে পালা করে দ্রুত রান তোলার প্র্রতিযোগিতা। সত্যিকারের টেস্ট ব্যাটসম্যানরা যেন হারিয়েই যেতে বসেছেন। কিন্তু ক্যান্ডিতে ৫ ফুট সাড়ে ৩ ইঞ্চি উচ্চতার এক ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং দেখলে টেস্ট-প্রাণ খুঁজে পাওয়া যায়। বিশুদ্ধ টেস্ট ব্যাটিং বলতে যা বোঝায়, সেটিই ফুটে উঠেছে মুমিনুল হকের ব্যাটের প্রতিটি ছোঁয়ায়।
একটু একটু করে যা দিয়ে গড়ে তুলেছেন সেঞ্চুরির প্রাসাদ। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরি করে আউট হয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। শ্রীলঙ্কার মাটিতে যে শতকটি আজীবন স্মৃতির মণিকোঠায় সাজিয়ে রাখবেন মুমিনুল। বিদেশের মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরি বলে কথা! বিশুদ্ধ টেস্ট ব্যাটিংয়ের মায়া মিশিয়ে ১২৭ রানের স্মরণীয় এক ইনিংস খেলেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে লাহিরু থিরিমানের হাতে ধরা পড়ার আগে মোকাবিলা করেছেন ৩০৪ বল। ১১ চারে সাজানো ইনিংসের বল সংখ্যাই বলে দিয়েছে কতটা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন মুমিনুল। ভালো বল যেমন ইস্পাতদৃঢ় প্রতিজ্ঞায় প্রতিহত করেছেন, তেমনি বাজে বলের পুরো ফায়দা তুলে নিজের সঙ্গে দলীয় স্কোর করেছেন সমৃদ্ধ।
টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। হাফসেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে তার চেয়ে ভালো কে জানেন! তারপরও সমালোচনার একটা তীরে মুমিনুল হক বিদ্ধ হতেন নিয়মিত। দেশের মাটিতে সেঞ্চুরি ‘ডালভাত’ বানিয়ে ফেললেও বিদেশের মাটিতে গিয়ে একেবারেই পাওয়া যায় না সেই মুমিনুলকে। অবশেষে দেশের বাইরে এলো তার প্রথম সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যান্ডি টেস্টে আক্ষেপ ঘোচালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
টেস্ট ক্যারিয়ারে নামের পাশে ১০ সেঞ্চুরি। যার একটিও নয় বিদেশের মাটিতে। দেশের মাটিতে প্রতিপক্ষের ওপর ছড়ি ঘোরালেও বাইরে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলতেন মুমিনুল। দেশের মাটিতে সেঞ্চুরি আছে, কিন্তু বিদেশের মাটিতে নেই, এমন ব্যাটসম্যানদের তালিকায় সেঞ্চুরি সংখ্যায় এতদিন সবার ওপরে ছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তবে আজ থেকে ওই তালিকা থেকে কাটা গেলো মুমিনুলের নাম।
শান্তর ব্যাটে নতুন আশা
প্রথম দিনের দ্বিতীয় ওভারে সাইফ হাসানের বিদায়ের পর মাঠে নেমেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সেই হিসাবে বলা যায়, ক্যান্ডি টেস্টের শুরু থেকে ব্যাট করেছেন তিনি। গোটা দিন উইকেট অক্ষত রেখে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর দ্বিতীয় দিনেও সমানতালে লড়ে যাচ্ছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। প্রায় দেড় দিন ব্যাট করে অবশেষে থামলেন শান্ত। ডাবল সেঞ্চুরির আশা জাগালেও বিদায় নিয়েছেন ১৬৩ রানে।
এরই সঙ্গে শেষ হয় শ্রীলঙ্কার উইকেট না পাওয়ার অপেক্ষা। ৮৬ ওভার পর স্বাগিতকরা পায় প্রথম উইকেট। বুধবার তামিম ইকবাল ৩৯তম ওভারে আউট হওয়ার পর আজ (বৃহস্পতিবার) শান্ত ফেরেন ১২৫তম ওভারে। লঙ্কানদের ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন লাহিরু কুমারা। অনেক চেষ্টার পর নিজের বলে নিজেই ক্যাচ তালুবন্দি করে শান্তকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়েছেন এই পেসার।
যাওয়ার আগে শান্ত খেলে গেছেন ১৬৩ রানের ঝলমলে ইনিংস। ক্যারিয়ারসেরা ৩৭৮ বলের লম্বা ইনিংসটি সাজিয়েছেন ১৭ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায়।
এই বাংলাদেশেকে দেশের মাটিতেও পাওয়া যায়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যাটিং ব্যর্থতায় যে ক্ষত লেগেছিল, সেই ঘা শুকিয়ে অপ্রতিরোধ্য এক বাংলাদেশের ছবি দেখা যাচ্ছে ক্যান্ডিতে। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে প্রথম দিন শাসনের পর দ্বিতীয় দিনেও একই ঢংয়ে সফরকারীরা। প্রথম সেশনে তো উইকেটই হারায়নি!
জুটির রেকর্ড
১৬৩ রানের ইনিংস খেলার পথে মুমিনুলকে নিয়ে শান্ত গড়ে গেছেন তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড জুটি। বাংলাদেশ অধিনায়কের সঙ্গে তিনি গড়েছেন ২৪২ রানের জুটি। ভেঙেছেন এই মুমিনুল ও মুশফিকুর রহিমের আগের ২৩৬ রানের জুটি।
ডিসি/এসআইকে/এমএসএ