চট্টগ্রাম টেস্ট জয়ের পথে পাকিস্তান

ক্রীড়া ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
সিরিজের প্রথম টেস্ট জিততে ২০২ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ।  চট্টগ্রামে এই লক্ষ্য তাড়ায় জয়ের সুবাসও পেতে শুরু করেছে পাকিস্তান।  চতুর্থ দিন শেষে দুই ওপেনার বিনা উইকেটে তুলে ফেলেছেন ১০৯ রান।  জয়ের জন্য আরও প্রয়োজন ৯৩ রান।
চা পানের বিরতির আগে থেকে এবং তৃতীয় সেশনের পুরোভাগেই আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছেন দুই ওপেনার আবিদ আলী ও আব্দুল্লাহ শফিক। হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন দুজনেই। পাশাপাশি দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি পার্টনারশিপের দেখা পেয়েছেন। আবিদ আলী ব্যাট করছেন ৫৬ রানে, সঙ্গী আব্দুল্লাহ শফিক ৫৩ রানে। এখন পঞ্চম ও শেষদিনে অতিমানবীয় কিছু না হলে এই টেস্ট জিততে যাচ্ছে পাকিস্তান।
অবশ্য এই জুটি গড়ার মাঝে সুযোগও তৈরি করেছিল স্বাগতিকরা। তাইজুলের ২৬তম ওভারের প্রথম বলে এলবিডব্লিউর আবেদন করেছিল বাংলাদেশ। অনফিল্ড আম্পায়ার সাড়া দেননি তাতে। তখন ব্যাটিং প্রান্তে ছিলেন শফিক। রিভিউ নিয়েও সফলতা মেলেনি তাতে। পরের বলেও লিডিং এজ হয়ে ক্যাচ উঠেছিল। কিন্তু ফিল্ডার না থাকায় জীবন পান পাকিস্তানি ওপেনার। ঘূর্ণি বলে তাইজুল বেশ কয়েকবার ভড়কে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সাফল্য মেলেনি কোনোভাবে।
অথচ চট্টগ্রামে চতুর্থ দিনের সকালটা যেমন ছিল, সেখানে এই লক্ষ্যটাকেও অকল্পনীয় মনে হচ্ছিল। লিডটা চ্যালেঞ্জিং পজিশনে রাখা গেছে লিটন দাসের হাফসেঞ্চুরির কল্যাণে। অবশ্য বাংলাদেশকে রুখে রাখতে বড় ভূমিকা ছিল আগের দিন গতি ঝড় তোলা শাহীন আফ্রিদির। লিটনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেই লেজ ছেঁটে দিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন এই পেসার। তার কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ১৫৭ রানে।
গতকাল রবিবার বিকালের শুরুর ধসটা নেমেছিল শাহীনের গতি-ঝড়ের কারণে। ৩৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দিন শেষ করেছিল। চতুর্থ দিনও তার এই গতি-ঝড় লিডটাকে বেশি বাড়তে দেয়নি। ৩২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন। তিনটি নেন অফস্পিনার সাজিদ, দুটি নেন হাসান আলী।
দৃশ্যটা এমন হতো না, যদি না সকাল সকাল মুশফিকুর রহিম ধোঁকায় ফিরে যেতেন! হাসান আলীর প্রথম ওভারে চার মেরে ভালো শুরুর বার্তা দিয়েছিলেন। এক বল বিরতি দিলে তৃতীয় বলে যায় অঘটন। হাসান আলীর ইনসুইঙ্গার বুঝতেই পারেননি। মুশফিক বল ছেড়ে দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু বল এত ভেতরে ঢুকে অফ স্টাম্প উপড়ে যাবে, তিনি বোধহয় ভাবেননি! ফেরার আগে ৩৩ বলে ১৬ রান করেছেন মুশফিক।
তারপর লিড বাড়ানোর তাড়নায় জুটি গড়েন লিটন-ইয়াসির। তারা রান বাড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই জুটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি ইয়াসির রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরলে।
ইনিংস মেরামতের পথে ৩০তম ওভারে শাহীনের শর্ট বল হেলমেটে লাগে ইয়াসিরের। তখনও ব্যাট করে যাচ্ছিলেন। পরের ওভারে আর ক্রিজে থাকেননি অভিষিক্ত ব্যাটার। অস্বস্তিতে রিটায়ার্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে গেছেন। এর আগে লিটনকে সঙ্গে নিয়ে যোগ করেছেন ৪৭ রান। এরপর মিরাজ-লিটন মিলে পাকিস্তানিদের হতাশা বাড়িয়েছেন। যোগ করেছেন ২৫ রান। এই জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে আরও চাপে ফেলেছিলেন অফস্পিনার সাজিদ খান। এলবিডব্লিউতে ফেরান মিরাজকে (১১)।
সফরকারীরা তার পরেও রান-চাকা রুখতে পারেনি লিটন দাসের দৃঢ়তায়। প্রথম সেশনে ২টি উইকেট পড়লেও বাংলাদেশ ৭৬ রান যোগ করতে পেরেছিল তার কারণে।
মধ্যাহ্নভোজনের পর দ্রুতগতিতে রান যোগ করতে থাকেন লিটন ও ইয়াসিরের কনকাশন বদলি সোহান। ৩৮ রান যোগ করে এই জুটি মাথাব্যথারও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এই জুটি ভেঙে যায় নুরুল হাসান মেরে খেলতে গেলে। সাজিদের বলে নুরুল ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ১৫ রান করে।
সোহানের বিদায়ের পর পর ফিরে যান লিটনও। ৫৯ রান করা এই ব্যাটারকে এলবিডব্লিউতে বিদায় দিয়েছেন শাহীন আফ্রিদি। একই ওভারে গ্লাভসবন্দি করিয়েছেন রাহীকেও। সাজিদ পরের ওভারে তাইজুলকেও ফেরালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে এখানেই।
বাংলাদেশকে ৩৩০ রানে প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে দেওয়ার পর পাকিস্তানও বেশি সুবিধা করতে পারেনি নিজেদের ইনিংসে। তাইজুলের ঘূর্ণিতে গুটিয়ে গেছে ২৮৬ রানেই। এখন শেষ দিন ফলাফলের অপেক্ষা।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ