নানান অব্যবস্থাপনায় সম্পন্ন কক্সবাজার ডিসির বলী খেলা

কক্সবাজার প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
করোনা মহামারিতে দু’বছর বন্ধ থাকার পর উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে কক্সবাজার ডিসি সাহেবের বলী খেলার ৬৫তম আসর শনিবার (৭ মে) সম্পন্ন হয়েছে।  আয়োজক ও ক্রীড়া প্রেমীদের মনে নতুন চ্যাম্পিয়নের আশা থাকলেও সে আশা পূরণ হয়নি দুইদিনের এই বলী খেলার আয়োজনে।  পুরুষ ফাইনালে কেউ কাউকে পরাজিত করতে না পেরে জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের চ্যাম্পিয়ন কুস্তিবিদ লিটন বিশ্বাস ও উখিয়ার নুর মুহাম্মদ বলীর মাঝে অপেশাদারি আচরণের কলহে খেলা সমাপ্ত করা হয়েছে।  পরে উভয়কে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ণ ঘোষণা করে আয়োজক কমিটি।  খেলার ফলাফল ও দুই প্রধান বলী একজন অপরজনকে আঘাত করতে চাওয়ার ঘটনায় চরম অসন্তোষ দেখা দেয় দর্শকদের মাঝে।
কিন্তু, কক্সবাজারের দীর্ঘ ঐতিহ্যের এ খেলায় কিছুটা বিনোদন দিয়েছে নারী বলী জুটি সেনা সদস্য পিভি রায় ও আনসারের ফাতেমা।  একাধিক বার লড়ে সেনাবাহিনীর পিভির কাছে পরাস্ত হন আনসারের ফাতেমা।  তারা দু’জনই জাতীয় কুস্তি টিমের খেলোয়াড় এবং দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক নানা টুর্নামেন্টে লড়েছেন।
তবে, এবারের বলীখেলাকে তামাশা বলে উল্লেখ করে মাঠে এসেও বলী ধরেননি দেশ সেরা রামুর দিদার বলীকে একসময় পরাস্ত করা উখিয়ার শামশু বলী।  তার অভিযোগ, সীমাহীন অব্যবস্থাপনা আর আয়োজক কমিটি ইচ্ছে মতো চালানো হয়েছে এবারের খেলা।  স্থানীয় বলিদের সাথে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পক্ষপাতদুষ্টু আচরণের অভিযোগও করেন তিনি।  এ কারণে তিনি মাঠে এসেও এবার প্রতিযোগিতায় অংশ নেননি।  একই সাথে আগামিতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের কোনো বলীকে আর কক্সবাজার ডিসির বলী খেলায় অংশ না দিতেও অনুরোধ জানান শামসু বলী।
গিয়াস উদ্দিন বলির অভিযোগ, চারজনকে হারানোর পরও তাকে মূল্যায়ন না করে ভাড়ায় আনা এক বলিকে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়েছে।
এবছরের জব্বারের বলি খেলার চ্যাম্পিয়ন কক্সবাজারের চকরিয়ার জীবন বলির দাবি, তিনি হার মানেননি, এরপরও তিনি পরাস্ত হয়েছেন দাবি করে রেফারী ও আয়োজক কমিটি তাকে বাদ দিয়ে উখিয়ার নুর মোহাম্মদ বলিকে ফাইনালিষ্ট হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন।
তার মতে, বলি খেলার নিয়ম-ই জানেন না আয়োজকরা।  পুরাতন বা অভিজ্ঞ কোনো বলীকে রেফারি হিসেবে রাখা হয়নি।
শনিবার বিকেলে কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে বলী খেলার সমাপনীতে হাজারখানেক ক্রীড়া প্রেমীর উপস্থিতিতে চরম অব্যবস্থাপনায় খেলা সমাপ্ত হয়।  গ্যালারির সকল দর্শক মাঠে নেমে বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি করে।  এছাড়াও মেলার প্রথমদিন থেকে প্রকাশ্যে জুয়া চালানো হয় বলে অভিযোগ তুলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।  জুয়াতে তরুণরাই বেশি অংশ নেয় বলে জানান তারা।
বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ।  অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।
পুরস্কার বিতরণকালে বক্তারা বলেন, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুব সমাজকে উৎসাহি করতে গ্রামে বলী খেলার প্রচলন হয়।  যা বৃটিশ পরবর্তী সময়ে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যে রূপ নেয়।  ধীরে ধীরে এ বলী খেলা আজ ঐতিহ্য রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে দেখা দিয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবালের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাব সভাপতি আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ আবদুল খালেক, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, সহ-সভাপতি অনুপ বড়ুয়া অপু প্রমুখ।
পুরস্কার বিতরণ শেষে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সকল ক্রীড়ার লক্ষ্য আনন্দ উপভোগ করানো।  ডিসির বলী খেলা একটি ঐতিহ্য।  এখানে কিছু ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে।  সামনের দিনে আরো সুচারুভাবে খেলা সম্পন্ন করার উদ্যোগ থাকবে।
বলী খেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব আলী রেজা তসলিম জানান, ডিসির বলী খেলায় এ-ক্যাটাগরির যুগ্ম চ্যাম্পিয়নকে ১৫ হাজার, বি-ক্যাটাগরীতে চ্যাম্পিয়ন ১০ ও রানার্স আপ ৭ হাজার, সি-ক্যটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন ৭ ও রানার্স আপ বলীকে ৫ হাজার টাকা সম্মানী ও মেডেল দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৫৬ সালে এসডিও সাহেবের বলী খেলা হিসেবে এর যাত্র শুরু হয়।  ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ কক্সবাজার জেলায় উন্নীত হওয়ার পর এটি ডিসি সাহেবের বলী খেলা হিসেবে যুগ যুগ ধরে সমুদ্র নগরীর মানুষের বাঙ্গালীয়ানার বিনোদনের অংশ হিসেবে চলে আসছে।

ডিসি/এসআইকে/এফআরইউ