অস্বাভাবিক গোল, আজীবন নিষিদ্ধ চার ফুটবল ক্লাব

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
দুই ম্যাচে মোট গোল হলো ৯৪টি! অবিশ্বাস্য শোনালেও ঘটনাটা সত্যি।  দক্ষিণ আফ্রিকান চতুর্থ বিভাগের দুটি ম্যাচে হলো এই ৯৪টি গোল।  যার একটি শেষ হয়েছে ৩৩-১ এবং অন্যটি শেষ হয়েছে ৫৯-১ গোলে।  যার মধ্যে ৪১টি গোলই হয়েছে আত্মঘাতী থেকে।
তোলপাড় করা এই ঘটনায় নজর পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকান ফুটবল কর্তৃপক্ষেরও।  ফিক্সিংয়ের অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকান ফুটবল ফেডারেশন মাতিয়াসি এফসি, শিবুলানি ডেঞ্জারার্স টাইগার্স, কটোকো হ্যাপি বয়েজ এবং এনসামি মাইটি বার্ডস- এই চারটি ক্লাবকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
টাইগার্স এবং মাতিয়াসি লড়াই করছিল চতুর্থ বিভাগ ফুটবল লিগের শীর্ষস্থানের জন্য।  যাতে তারা তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লিগে উন্নীত হতে পারে।  শিবুলানি ডেঞ্জারার্স টাইগার্স ৩৩-১ ব্যবধানে হারিয়েছে হ্যাপি বয়েজকে এবং এনসামি মাইটি বার্ডসকে ৫৯-১ ব্যবধানে হারিয়েছে মাতিয়াসি এফসি।
এই দুই ম্যাচে ৯৪ গোলের ঘটনা অবশ্যই নজর কেড়েছে দেশটির ফুটবল কর্মকর্তাদের এবং এ নিয়ে তদন্ত শেষে তারা দেখতে পেয়েছে, এখানে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। যে কারণে, আজীবনের জন্য এই চারটি দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকান চতুর্থ বিভাগের ফুটবলে কী ঘটেছিল?
মোপানি রিজিয়নের প্রেসিডেন্ট ভিনসেন্ট রামপাগো বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের তদন্তে উঠে এসেছে, মাতিয়াসি এবং এনসামি চেয়েছে শিবুলানি টাইগার্সকে থামিয়ে দিতে। যারা (শিবুলানি) এ সময় ৩ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে শীর্ষে ছিল। আবার দ্বিতীয় স্থানে থাকা মাতিয়াসির সঙ্গে গোল ব্যবধানও তাদের ১৬টি। শীর্ষে থাকার জন্য তারা ম্যাচ ফিক্সিংয়ে রাজী হয়। যে কারণে, একে অন্যকে আটকানোর জন্য ম্যাচের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। মাতিয়াসি যখন প্রথমার্ধে ২২-০ গোলে এগিয়ে, শিবুলানি তখন কটোকো হ্যাপি বয়েজের খেলোয়াড়দের মাঠে সংঘবদ্ধ করে এবং একে একে তাদের খেলোয়াড়দের মাঠ থেকে তুলে নেয়। তারা বলে যে, তারা নাকি খুবই ক্লান্ত। এক সময় দেখা গেলো হ্যাপি বয়েজের মাত্র সাতজন খেলোয়াড় মাঠে রয়েছে। একই সময়ে মাতিয়াসি ম্যাচে রেফারি খেলোয়াড়দের লাল কার্ড দেখানো শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত দেখা গেলো তাদের প্রতিপক্ষ দলের মাত্র ৭ জন খেলোয়াড় মাঠে রয়েছে। লিগে আগের ম্যাচে এই চারটি দল যখন একে অপরের মুখোমুখি হয়, তখনকার ফল ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সেবার মাতিয়াসি ২-১ গোলে মাইটি বার্ডসকে হারায় এবং শিবুলানি ডেঞ্জারার্স টাইগার্স ২-২ গোলে ড্র করে হ্যাপি বয়েজের সঙ্গে’।
কর্মকর্তারা বলছেন, অনেকগুলো গোল ম্যাচ অফিসিয়ালসরা সঠিকভাবে খাতায়ও লিপিবদ্ধ করেনি। ভিনসেন্ট রামপাগো আরো বলেন, ‘আমরা শুধু দেখেছি রেফারি লিখেছেন, খেলোয়াড় নাম্বার-২ করেছেন ১০ গোল, খেলোয়াড় নাম্বার-৫ করেছেন ২০ গোল। কিন্তু আমরা জেনেছি, সেখানে ৪১টি আত্মঘাতী গোল হয়েছে। তাহলে রেফারিরা কিভাবে এই গোলগুলো রেকর্ড করেছে?’
‘ফুটবলের জন্য কোনো সম্মান নেই’
শুধুমাত্র ক্লাবগুলোকে বহিষ্কার করাই নয়, সংশ্লিষ্ট দলগুলোর কর্মকর্তাদেরও নিষিদ্ধ করা হয়েছে ৫ থেকে ৮ মৌসুমের জন্য। রামপাগো বলেন, ‘এসব মানুষগুলোর ফুটবলের প্রতি কোনো সম্মান নেই। আমরা কোনোভাবেই এ ধরনের ঘটনা আর ঘটতে দিতে পারি না। কি ধরনের দুঃখজনক ঘটনা যে, এখানে এই বাজে উদাহরণগুলো তৈরি হয়েছে অনেকগুলো তরুণ খেলোয়াড় কর্তৃক! কারণ, টুর্নামেন্টের নিয়মই হচ্ছে, এই লিগে প্রতিটি দল অবশ্যই ৫জন ফুটবলারকে মাঠে নামাতে হবে, যাদের বয়স ২১-এর কম। এ ধরনের লিগ আয়োজনের ক্ষেত্রে আমাদের মূল উদ্দেশ্যই হলো যে, তরুণ ফুটবলারদের তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে আনা। যাতে করে আগামী দিনে তারা জাতীয় দলের জন্য গড়ে উঠতে পারে’।
ক্লাব কর্মকর্তারা কী বলছে?
মাইটি বার্ডস ক্লাবের কোচ নেইল থাওয়ালা বলেন, ‘আমি পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। কোনোভাবেই এ ঘটনাকে রোধ করতে পারিনি। অনেক চেষ্টা করেও। শিবুলানি ডেঞ্জারার্স টাইগার্সের ম্যাচের বিপক্ষে আমাদের ম্যাচে যে রেফারি ছিল, তাকে বলেছি- আগের ম্যাচেও আমরা ভালো খেলেছিলাম। আমরা চারটি গোল করেছি। কিন্তু প্রতিটি গোলই রেফারি বাতিল করে দিয়েছেন। কিন্তু ওরা আমাদের নেটে বল জড়াচ্ছে আর রেফারি বলছেন, এটা গোল। কিন্তু আমরা যখন বিষয়টা নিয়ে রিপোর্ট করি, তখন বলা হয় রেফারির সিদ্ধান্তই ফাইনাল। খেলোয়াড়দের মন-মানসিকতা কোনোভাবেই ম্যাচে ছিল না। কারণ, তারা জানতো, তারা যদি এই ম্যাচে জেতে, তাহলে কোনোভাবেই তা তাদের জন্য কাজে আসবে না। আমি কোচ হিসেবে তাদেরকে চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনো কাজে আসেনি’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ