বজ্রপাতে বছরজুড়ে দেশে ৩২৯ মৃত্যু

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চলতি বছর সাড়ে ৯ মাসেই দেশে বজ্রপাতে অন্তত ৩২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। তিনি বলেছেন, সবগুলো মৃত্যুই হয়েছে খোলা স্থানে। সরকার তাই বজ্রপাত আশ্রয়কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করছে।
আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস সামনে রেখে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও বুধবার নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করবে।
গত এক দশকে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও জরুরি ভিত্তিতে জান-মাল রক্ষার ব্যবস্থাপনায় উন্নতি হয়েছে অনেক। তাতে ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমলেও বজ্রপাত ও বন্যার মত দুর্যোগ শঙ্কা বাড়াচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সে বছর বজ্রপাতে মারা গিয়েছিলেন ২২৬ জন। এরপর ২০১৬ সালে ৩৯১ জন এবং ২০১৮ সালে ৩৫৯ জনের মৃত্যু হয় বজ্রপাতে।২০১৯ সালে সেই সংখ্যা কিছুটা কমে আসে, ১৯৮ জনের মৃত্যু হয় ওই বছর।
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৯ হাজার পরিবার পাবে ঘর
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বছর নদী ভাঙ্গনের শিকার ৯ হাজার ৪৪৫ পরিবারকে বাড়ি দেওয়া হবে। এ বছর তীব্র বন্যা না হলেও ব্যাপক নদী ভাঙন হয়েছে। নদী ভাঙনের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করেছি। দেখা যাচ্ছে, ৯ হাজার ৪৪৫টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে সেই তালিকা পাঠানো হয়েছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, “অপাতত অস্থায়ীভাবে তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা সবাই ২ শতাংশ জায়গাসহ বাড়ি পাবে।
ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি রোধে ‘ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড’ প্রণয়ন করার কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সকল দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা সফলতা অর্জন করেছি, কিন্তু সত্যি কথা বলতে গেলে ভূমিকম্পে আমরা এখনো সে রকম সফলতা পাইনি। তবে বিল্ডিং কোড মেনে যদি আগামীতে ভবন তৈরি করা হয়, তাহলে সেগুলো ভূমিকম্প সহনীয় হবে।কারণ এগুলোকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে”।
আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের প্রস্তুতি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও মুজিব শতবর্ষে দিবসটি ‘যথাযোগ্য মর্যাদায়’ পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ৫০ বছর পূর্ত উদযাপনেরও আয়োজন করা হয়েছে।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে- ‘দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে কাজ করি একসাথে’।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ।দুর্যোগের কারণে নিয়মিত ক্ষয়ক্ষতির পরও ষাটের দশক পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ধারণা ছিল মূলত ত্রাণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্রিক। এখন দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দুর্যোগ সহনীয় টেকসই নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পিতভাবে কাঠামোগত ও অকাঠামোগত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৩ মে ১১০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, ৩০টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, ৩০টি জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র এবং পাঁচটি মুজিব কিল্লার উদ্বোধন এবং ৫০টি মুজিব কিল্লার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর সময়ে তার নির্দেশনায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা থেকে মানুষের জানমাল রক্ষায় মাটির কিল্লা নির্মাণ করা হত, সেগুলোই সাধারণের কাছে মুজিব কিল্লা নামে পরিচিত। তারই আধুনিক রূপে উপকূলীয় ও বন্যাপ্রবণ ১৪৮টি উপজেলায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়নের কাজ চলছে।
দুর্যোগে এসব কিল্লায় মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। অন্যসময় সামাজিক অনুষ্ঠান ও হাটবাজার হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।
উপকূলীয় এলাকায় বয়ষ্ক, গর্ভবতী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব ৩২০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় দুই লাখ ৫৬ হাজার মানুষ এবং ৪৪ হাজার গবাদিপশু আশ্রয় নিতে পারবে।
বন্যা ও ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ২৩০টি দ্বিতল বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে সরকার, সেখানে প্রায় ৯২ হাজার মানুষ এবং ২৩ হাজার গবাদিপশুর আশ্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগের পর মানুষের মাঝে প্রাথমিক জরুরি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানোর জন্য ৬৪ জেলায় ৬৬টি জেলা ত্রাণ গুদাম ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে, এর অধিকাংশের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
বন্যাপ্রবণ ১৯টি জেলার জন্য ৬০টি মাল্টিপারপাস এক্সেসিবল রেস্কিউ বোট সরবরাহ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বড় ধরনের দুর্যোগে অনুসন্ধান ও উদ্ধারে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনওসি) প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে”।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ