৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই বিপর্যয় ঘটবে চট্টগ্রামে!

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
সম্প্রতি পরপর দুইটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এসব অঞ্চলের মানুষের মধ্যে। টানা এ ভূকম্পন বড় ভূমিকম্পের আভাস কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন- অবস্থানগত কারণে রিখটার স্কেলে সাত দশমিক পাঁচ থেকে আট দশমিক পাঁচ মাত্রার বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে চট্টগ্রাম। এই মাত্রায় ভূমিকম্প হলে নগরীর দেড় লাখ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এক্ষেত্রে ভূমিকম্প সহনীয় নয় এমন ভবন চিহ্নিত করে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে এখনই প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
যে কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে চট্টগ্রাম
চুয়েটের সাবেক ভিসি এবং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি)-এর উপাচার্য জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হতে পারে বাংলাদেশ-মিয়ানমার, বাংলাদেশ-ভারত এবং মিয়ানমার-ভারত (পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বে) সীমান্ত এলাকায়। এসব এলাকায় ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি হতে পারে। আর তা হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার। চট্টগ্রাম নগরীর দুই লাখ বিল্ডিংয়ের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ ভবন ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর ৭০ শতাংশ ভবন ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছে বলে মনে করেন এ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, এরমধ্যে যে ভবনগুলো ঝুঁকিতে আছে, সেগুলোর শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। এ ধরনের কাজে বিভিন্ন দেশে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়। আমাদের দেশেও এ ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
ভূমিকম্প হলে তার পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও প্রস্তুতি সংশ্লিষ্ট সংস্থার নেই বলে মনে করেন চুয়েটের সাবেক এই ভিসি। তিনি মনে করেন, ভূমিকম্পের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা দরকার। ভূমিকম্প হলে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে। উদ্ধার করার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি দরকার তা ক্রয় করতে হবে দ্রুত।
গত ২৬ নভেম্বর (শুক্রবার) ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূকম্পন অনুভূত হয়। ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার বলছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল চট্টগ্রাম থেকে ১৭৫ কিলোমিটার পূর্বে। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ছিল ৪২ কিলোমিটার।
এরপর শনিবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল ৩টা ৪৭ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে চট্টগ্রামে আবার মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ৪ দশমিক ২ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর।
পরপর দুটি ভূমিকম্পের বিষয়ে চুয়েটের সাবেক ভিসি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই দুটি ভূমিকম্প নিশ্চিতভাবেই যে বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিচ্ছে তা নয়। তবে ঝুঁকি অবশ্যই আছে। যে এলাকা থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে তা কিন্তু আগেই চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই অঞ্চল থেকে ভূমিকম্প আবারও হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভূ-অভ্যন্তরে টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষই ভূমিকম্পের কারণ। তারা বলেন, টেকটনিক প্লেটগুলোর সংযোগস্থল বা ফল্ট লাইনের ওপর থাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বা ইপিআই-হাইপো সেন্টার।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব আর্থকোয়াক ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ভূমিকম্পের জন্য যে কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ ফল্ট লাইন আছে তার বেশ কয়েকটা বাংলাদেশের আশপাশে অবস্থান করছে। চট্টগ্রাম অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় পড়েছে। এ অঞ্চলে যে ফল্ট লাইন আছে তাতে ৭.৫ থেকে ৮.৫ মাত্রায় ভূমিকম্প হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ভূ-স্তরের ইউরোশিয়ান বা বার্মিজ প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেটের ভূ-অবস্থানগত ভূমিকম্প জোনের মধ্যেই রয়েছে চট্টগ্রাম। এগুলোর সংযোগস্থল আশপাশের এলাকাতেই। তাই বলা যায় এই জোনটা ভেরি অ্যাক্টিভ।
তিনি বলেন, শুক্রবার যে এলাকা থেকে ভূমিকম্প হয়েছে ভবিষ্যতে সেখান থেকে আরও বড় মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। এসব ভূমিকম্প জানান দিচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য এখনই সতর্ক হতে হবে।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর