সাধারণ শক্তি নিয়ে আঘাত হানল ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং’

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
বাংলাদেশের উপকূলে ‘সুপার সাইক্লোন’ আঘাত হানতে যাচ্ছে বলে কিছুদিন আগেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচার হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত যে ঘূর্ণিঝড়টি দেশে আঘাত হেনেছে তাকে সাধারণ শক্তির ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগ।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর অগ্রভাগ আঘাত করে দেশের উপকূলে। এর পর রাত ৯ টার দিকে ভোলার পাশ দিয়ে বরিশাল ও চট্টগ্রামের উপকূলে ‍উঠে আসে সিত্রাং ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুরো ঝড়টি উঠে আসে স্থলভাগে। তারপর ক্রমশ দুর্বল হয়ে আসে এটি।
সোমবার সন্ধ্যায় যখন ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং দেশের উপকূলে আঘাত হানছিল, তখন কক্সবাজারে প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ৭৪ কিলোমিটার রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং প্রতিঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার বেগে গোপালগঞ্জে আঘাত হেনেছে’।
দেশের উপকূলের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন বেগে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এর মধ্যে গোপালগঞ্জে যে ৭৫ কিলোমিটার গতিতে আঘাত করেছে, সেটিই সর্বোচ্চ গতিবেগ বলে রেকর্ড করেছে আবহাওয়া বিভাগ। তিনি জানান, সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে সিত্রাং সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানার ধারণা করা হলেও উপকূল অতিক্রমের সময় এর গতিবেগ ছিল ৬২ থেকে ৭০ কিলোমিটার।
ওমর ফারুক বলেন, ‘শুরুর দিকের গতিবেগ আমাদের হিসাব করা হয় না। সর্বসাকুল্যে গতিবেগ কত পাওয়া যায়, তা আমরা জানিয়ে থাকি’।
ঘূর্ণিঝড়কে সাধারণত চারটি ভাগে ভাগ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এগুলো হলো- ঘূর্ণিঝড়, তীব্র ঘূর্ণিঝড়, অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় এবং সুপার সাইক্লোন।
ওমর ফারুক বলেন, ‘সিত্রাংয়ের গতিবেগ ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে থাকার কথা। তবে তার কম ছিল। এরপর ৮৯ থেকে ১০০ কিলোমিটার হলে সেটি তীব্র ঘূর্ণিঝড় হবে। এভাবে প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ে আলাদা আলাদা বাতাসের গতিবেগ থাকবে’।
আর তাই ‘সিত্রাং’কে সাধারণ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে অভিহিত করেছেন আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ‘এটা তো ঘূর্ণিঝড়ের প্রথম স্টেজ। মানে সর্বনিম্ন। ফলে এটাকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড় বলা যায়’।
উপকূলে ৯-১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস
সাধারণ মানের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ৯ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা যে তথ্য উপাত্ত পেয়েছি তাতে ঘূর্ণিঝড় আঘাত করার সময়ের তথ্য তো পাওয়া যায় না। তবে তার আগে থেকেই যে পূর্বাভাস ছিল দুই মিটারের বেশি জলোচ্ছ্বাস হবে। আমরা বরগুনা ও ভোলার কয়েকটি স্টেশন থেকে সোমবার রাত ৯টা ও ১০টার দিকের যে তথ্য পেয়েছি সেগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে এক থেকে দেড় মিটার পানি বেশি ছিল। বলা যাবে ৯ থেকে ১০ ফিট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস ছিল। আর জোয়ারের পানির উচ্চতা ছিল স্থানভেদে ৫ থেকে ৮ ফিট’।
ভোলা, বরিশাল, বরগুনার অংশে জলোচ্ছ্বাসের পরিমাণ বেশি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক জায়গায়, বিশেষ করে বরগুনাতে অনেক পানি প্রবেশ করেছে’।
জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলে উঠে আসা পানি মঙ্গলবার ভোর থেকেই নামতে শুরু করেছে বলেও জানান তিনি। আরিফুজ্জামান বলেন, ‘যেহেতু ঘূর্ণিঝড়টি মধ্যরাতে আঘাত হেনেছে এবং দ্রুত উত্তর-পূর্বদিকে চলে গেছে, তাই ভোর থেকেই এটার প্রভাব আর নেই। অনেক জায়গায় পানি নেমে গেছে। এখন ভাঙনের সমস্যা আছে’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ