বিচিত্র বিশ্ব ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
নরখাদকের গল্প জানেন তো? পৃথিবীতে কত বিচিত্র মানুষ আছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই। এবার যেই জাতির কথা বলছি তারা নরখাদক নয়। তবে মানুষের মগজ খায়। তাও আবার মৃত মানুষের। এটাই তাদের রীতি। কাদের কথা বলছি? আফ্রিকান জাতিরা এমন সব অদ্ভুত রীতিতে বিশ্বাসী। পালন করা নানা বিদঘুটে আচার। চলুন আজ আপনাদের এই জাতির কথা জানাবো। যারা মৃত মানুষের মগজ খেয়ে রীতি পালন করেন।
নরখাদক আদিম মানবেরা যে এই সেদিনও বহাল তবিয়তে বসবাস করছে, সেটাও এক আশ্চর্যের ব্যাপার। তাদেরই এক জাতভাই এই জাতি। যাদের খাদ্যই ছিল মানুষের মগজ! আর তার ভেতরেই নাকি লুকিয়ে ছিল একটা মারণ রোগের প্রতিষেধক! ওশিয়ানিয়ার এক ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্র পাপুয়া নিউগিনি। অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখানেও স্থানবিশেষে বিভিন্ন গোষ্ঠীর আদিম মানুষেরা বসবাস করতেন। সেইরকমই একটি অঞ্চল ছিল ফোর। এখানকার বাসিন্দারাই ছিলেন নরখাদক।
আরো ভালো করে বললে নর-মগজ খাদক। তবে যে কারোরই মগজ খেয়ে ফেলবে, ব্যাপারটা এমন নয়। খেতে হবে নিকট আত্মীয়ের মগজ। যখনই এদের পরিবারের কেউ মারা যান, তখনই তার ঘিলু খাবার হিসেবে খেয়ে নেন তারা। তখনকার সময় গোষ্ঠীবিবাদ তো লেগেই থাকত। অন্য গোষ্ঠীকে হারালে মৃতদের ঘিলুও খেতেন এরা। এক কথায় বীভৎস ব্যাপার! কিন্তু এদের কাছে এটাই ধর্মীয় প্রথা। তাদের কাছে এটি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। নিত্যদিনের অন্যান্য কাজের মতোই। ভাবতেই অবাক লাগে পঞ্চাশ-ষাটের দশকে যখন বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটছে ধীরে ধীরে। চাঁদে মানুষ পৌঁছে গেছে, সেসময়ও এখানে এই প্রথা রমরমিয়ে চলেছে।
তবে সমস্যা শুরু হয় ষাটের দশকে এসে। এই সময় হঠাৎই অজানা এক রোগ ছড়িয়ে পড়তে লাগল পাপুয়া নিউগিনিতে। বিশেষ করে এই জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে। তারা যেসব জায়গায় থাকেন সেইসব অঞ্চলগুলোই আক্রান্ত হতে থাকে বেশি। স্থানীয় ভাষায় রোগটিকে বলা হত কুরু। প্রথমে কথা বলার শক্তি হারাতেন এরপর চলাফেরার। সবশেষ পরিণতি মৃত্যু। একটা সময় প্রায় মহামারি আঁকার ধারণ করে এই রোগ। শেষ পর্যন্ত রীতিমতো আইন করে নিউগিনি সরকার ঘিলু খাওয়া বন্ধ করে দেয়। আশ্চর্যজনকভাবে তারপর থেকে রোগটা কমতে থাকে। রোগের কারণ সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। মানুষের মস্তিস্কের ভেতরের দূষিত অংশগুলো থেকেই এই রোগের সৃষ্টি হয়েছিল বলে অনুমান চিকিৎসকদের।
সেই সময়টাতে আরো একটি রোগের সংক্রমণ শুরু হয়। নাম ম্যাড কাউ। গরু থেকে মানুষের মধ্যে এই রোগ সংক্রমিত হত। এজন্যই এমন নাম দেয়া হয়। দেশ বিদেশের বিজ্ঞানীরা এর প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণা করতে লাগলেন। এই সময় লন্ডন ইউনিভার্সিটির এক গবেষক এক অদ্ভুত জিনিস দেখেন। মনে পড়ে যায় মাত্র কয়েকদিন আগেই কুরু রোগের কথা। সেখানেই তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখেন, কুরু রোগে মানুষ মারা গিয়েছিলেন ঠিকই। এমন বেশ কিছু মানুষ ছিলেন, যারা কুরু আক্রান্তের মগজ খেয়েও দিব্যি বেঁচেছিলেন। তিনি আরো দেখেন, ম্যাড কাউ আর কুরু রোগের লক্ষণও মোটামুটিভাবে একই। তিনি সেই লোকের ডিএনএ বা জিন জোগাড় করতে থাকেন। সেখান থেকে তৈরি করেন প্রতিষেধক। এরপর এই জাতি এই রোগগুলো থেকে রেহাই পায়।
এই গবেষক আরো প্রমাণ করেন, জাপানিদের বাদ দিলে পৃথিবীর সব প্রজাতির মানুষের পূর্বপুরুষই কোনো না কোনো সময় মানুষখেকো ছিল। কাজেই সবার মধ্যে ওই বিশেষ জিনটি রয়েছে। কিন্তু ওই মুহূর্তে গবেষণা করে ওষুধ বের করে অনেক লোকের প্রাণ তো বাঁচিয়েছিলেন ওই গবেষক! তবে যাই হোক না কেন আধুনিক বিশ্বে রীতির নামে এসব কুসংস্কার মানছে এই জাতি। এছাড়াও মৃত মানুষকে কবর না দেয়া, মৃতদেহকে শকুনকে উৎসর্গ করা, মৃতদেহ পুড়িয়ে স্যুপ বানিয়েও খায় অনেক জাতি।
ডিসি/এসআইকে/প্রমি