যে দ্বীপে ২০ হাজার মানুষের জন্য মাত্র চারটি টয়লেট, দিন-রাত চলে পাপ কর্ম

বিচিত্র বিশ্বে ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
লেক ভিক্টোরিয়ায় ভাসছে কুখ্যাত এক দ্বীপ।  নাম তার রেম্বা।  যেখানে যৌনকর্মী, মাদক ও মদের এক স্বর্গরাজ্য।  রেম্বা দ্বীপের টিনের চালের বাড়িগুলো দিনে দুইবার ভাড়া দেয়া হয়।  লেক ভিক্টোরিয়া সম্পর্কে অনেকেই জানেন।  আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম এবং পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তমহ্রদ এটি।  কেনিয়া, তানজানিয়া এবং উগান্ডার মধ্যবর্তী একটি সুউচ্চ মালভূমির উপর অবস্থিত এই হ্রদের দৈর্ঘ্য ৩৫৯ কি.মি ও প্রস্থে ৩৩৭ কি.মি.।  আয়তনে হ্রদটি প্রায় ৬০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।
পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম হ্রদ লেক ভিক্টোরিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রায় তিন হাজার দ্বীপ।  এগুলোর মধ্যে অনেক দ্বীপেই আছে জনবসতি।  এই হ্রদ থেকে মাছ শিকার করেই চলে এসব জনবসতির জীবন।  এসব যাযাবর মানুষদের নেই নিজস্ব বাড়ি-ঘর।  আজ এই দ্বীপ, তো কাল ওই দ্বীপে ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়ায় তারা।
লেক ভিক্টোরিয়ার হাজারো দ্বীপের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে রেম্বা।  কুখ্যাত ও বিতর্কিত এই রেম্বা দ্বীপে চলে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ড।  যৌনকর্মী, আফ্রিকার কুখ্যাত অপরাধী, ড্রাগ পাচারকারীদের গা ঢাকা দেয়ার শীর্ষস্থান হলো এই রেম্বা আইল্যান্ড।  মাত্র দুই হাজার বর্গ মিটারের এই দ্বীপের জনসংখ্যা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ১৩১ জন।
তবে এর বর্তমান জনসংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি।  রেম্বা নামক ক্ষুদ্র দ্বীপটি যেন আরেক ছোট্ট আফ্রিকা।  সেখানে রয়েছে আফ্রিকার সব দেশেরই মানুষ।  ছোট্ট এই দ্বীপে নেই পা ফেলার জায়গা।  গিজগিজ করছে মানুষ।  এইটুকু দ্বীপে গায়ে গায়ে ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে আছে করোগেটেড টিনের চালাঘর।
রেম্বাতে স্বাস্থ্য ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কথা কেউ ভাবেন না।  দ্বীপের চারদিকে আবর্জনার স্তূপ।  দ্বীপটির চারপাশে মলমূত্র থেকে শুরু করে ব্যবহৃত স্যানিটারি প্যাড, কন্ডোম, ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ ও সুঁচ পড়ে থাকে।  সেই সঙ্গে মাছ পচা গন্ধ তো রয়েছেই।  অবাক করা বিষয় হলো, এই পরিবেশেই বাস করছে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
রেম্বা দ্বীপের টিনের ছাউনি দেয়া বাড়িগুলো প্রতিদিন দুইবার ভাড়া দেয়া হয়।  ঘরগুলো দিনে একজন ও রাতে আরেকজন ভাড়া নেয়।  যারা রাতে মাছ ধরেন, দিনের জন্য ঘর ভাড়া নেন।  কেউ দিনে মাছ ধরলে ঘর ভাড়া নেন রাতটুকুর জন্যই।  ভাড়া ১২০০ থেকে ছয় হাজার টাকা।  এই বাড়িগুলোকে বলে উসিসেমে।  কিছু বাড়ি যৌনকর্মীরা ভাড়া নিয়ে রাখেন তাদের ব্যবসা চালানোর জন্য।  প্রতিদিন ভোরে এই দ্বীপ থেকে ২০০ মানুষ বের হয়ে যায় আর ৪৯০ জন নতুন মানুষ ঢোকেন।
আপনার চোখ কপালে উঠবে এদের পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থার কথা জানলে!  ২০ হাজার মানুষের জন্য দ্বীপে আছে মাত্র চারটি পাবলিক টয়লেট।  মাটির ভেতরে করা গর্ত আর চার দিকে বেড়া এটাই টয়লেট।  দ্বীপে কয়েকটি ওষুধের দোকান রয়েছে।  আর দোকানগুলো চালায় হাতুরে ডাক্তারেরা।  ভুল ওষুধে শিশুর মৃত্যু সেখানকার নৈমিত্তিক ঘটনা।  বেশিরভাগ দোকানই মাদকজাতীয় ট্যাবলেট, অন্যান্য ওষুধ ও কন্ডোম দিয়ে ঠাসা।  যৌনরোগ ও এইডস দ্রুত ছড়াচ্ছে দ্বীপটিতে, তবুও তাদের নেই কোনো মাথা ব্যথা!
এই দুই হাজার বর্গমিটার দ্বীপের মধ্যে আছে, মাছের আড়ত, একটি গির্জা, একটি মসজিদ, জুয়ার অসংখ্য কাউন্টার, মদ ও ড্রাগের পাব, সেলুন, ওষুধের দোকান, খাবার হোটেল ও হাজার তিনেক যৌনকর্মী।  চলে জুয়া খেলার প্রতিযোগিতা, লোকে এখানে যেমন আমির হয়, তেমনি ফকিরও হয়।  এখানে দেহব্যবসা বেআইনি নয়।
সারাদিন মাছ শিকার করে লেকের চারদিক থেকে এসে ভিড়ে মাছ ভর্তি নৌকো।  সেই মাছগুলো রেম্বা দ্বীপের আড়তে বেচে মৎস্যজীবীরা।  মাছ বেচা টাকা দিয়ে পতিতা সঙ্গ করে বা সেই টাকা ড্রাগ ও মদে উড়িয়ে পরদিন আবার নৌকা নিয়ে জলে নামেন হাজারো মৎস্যজীবী।
একজন যৌনকর্মী দিনে ভারতীয় মুদ্রায় পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করেন।  দ্বীপে ব্যাঙ্ক নেই, তাই যৌনকর্মীরা টাকা রাখতে বাধ্য হন নিজের পোশাকের মধ্যে।  কখনো সেই টাকা অন্যজন কেড়ে নেয়।  তাই কয়েক সপ্তাহ পরপরই টাকাকড়ি লুকিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যান অনেক যৌনকর্মী।  সঙ্গে করে বয়ে নিয়ে যান যৌন রোগ।
রেম্বা দ্বীপের ওইসব টিনের ঘরে মেলে বিভিন্ন বয়সের যৌনকর্মীদের।  জায়গা না থাকায় একই ঘরে ১০ থেকে ১২ জন যৌনকর্মী একই সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হন।  অন্যদিকে ঘরের বাইরে অপেক্ষায় থাকেন আরো খদ্দেররা।  যৌনকর্মীদের শিশুরা রাস্তায় খেলে বেড়ায়, অপরিচিত লোকদের হাতে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়, আর টিনের ঘরে যৌনশোষিত হয় তাদের মায়েরা।
কুখ্যাত রেম্বা দ্বীপে রয়েছে আবার পুলিশও, তাদের সংখ্যা মাত্র নয় জন।  এই কয়জন পুলিশের পক্ষে তো আর ২০ হাজার মানুষকে সামলানো সম্ভব নয়।  এই দ্বীপের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা কেনিয়ার মাসাইদের (দ্বীপের ক্ষমতাশীল সেনাবাহিনী) পয়সা দিয়ে পোষেন।  অপরাধ করে আইনের হাত এড়িয়ে রেম্বাতে লুকিয়ে থাকেন এসব প্রভাবশালীরা।  আর রেম্বা থেকে জলপথে পার্শ্ববর্তী যে কোনো দেশে পালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত সহজ।  তাই রেম্বা দ্বীপ দুর্বল প্রশাসনের আওতায় থেকে হয়েছে কুখ্যাত।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ