মাটির গর্তে ১৭ বছর!

অন্যরকম ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
ফরিদপুরে বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের পশ্চিম চরবর্ণি গ্রামের ভ্যানচালক মো. নুরুল মোল্যার ছেলে মো. রবিউল মোল্লা প্রায় দেড়যুগ ধরে একটি মাটির গর্তে শিকলবন্দি।  অল্প জ্বর থেকে শুরু হয়ে এখন সম্পূর্ণ মানসিক ভারসাম্যহীন এ যুবককে নিয়ে দিশেহারা পরিবার।  মায়ের কান্না, বাবার চিন্তা কোনোকিছুই স্পর্শ করে না রবিউলকে।  তিন ছেলের মধ্যে বড় রবিউলকে নিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে বাড়ির সবাই।
শুক্রবার (৩০ জুলাই) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়ির চারচালা পশ্চিম পোতায় একটি টিনের ঘরে কোমরে শেকল লাগানো রবিউলের।  প্রায় ১১ ফুট ব্যাসের ও ৬ ফুট গভীর গোলাকার গভীর মাটির গর্তে হাত দিয়ে মাটি খুঁড়ছে সে।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৭ বছরের শিকলবন্দি জীবনে ঘরটির মাটির মেঝে হাত দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে রবিউল নিজেই তৈরি করেছেন নিজের থাকার অন্য জগত।
রবিউলের মা আসমানী বেগম বলেন, ৯ বছর বয়সে তার জ্বর হয়েছিল।  অসুস্থতার দুই-তিন বছর পর আস্তে আস্তে হাত-পা শুকিয়ে যেতে থাকে।  পরিবারের সাধ্যমতো কবিরাজ-ডাক্তার সব দেখানো হলেও আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি রবিউল।  শীত-গরম কোনো অনুভূতিই টের পায় না।  শরীরে কখনোই কাপড় রাখে না রবিউল।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, পাগল হয়েছে বলে ছেলেডারে মাইরে ফেলিনি।  যেভাবেই হোক ওকে বাঁচাই রাখছি।  এখন আল্লাহ ওরে যতদিন দুনিয়ায় রাখে।  সন্ধ্যা হলি ছেলের জন্যি মন কাঁন্দে, আমি আর আলাদা ঘরে টিকতি পারিনে।
রবিউলের বাবা মো. নুরুল মোল্লা বলেন, রবিউল অসুস্থ হওয়ার পর তার ওজনের সমান টাকা ফেলেও তারে আর ভালো করতে পারিনে।  এহন আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিছি।  তিনি আরো বলেন, শিকল খুলে দিলেই রবিউল পুরো বাড়ি ভাঙচুর ও তছনছ করে।  এদিক-ওদিক হারিয়ে যায়।  তাই মন না মানলেও বাধ্য হয়ে প্রায় ১৭ বছর ধরে ওকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি।
ময়না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসির মো. সেলিম বলেন, অসুস্থ রবিউলের বিষয়টি আমার জানা আছে।  কিন্তু পরিবারটি কখনো আমাদের কাছে আসেনি বিধায় কোনো সহযোগিতা করা হয়নি।  রবিউলের চিকিৎসায় বড় অংকের টাকা প্রয়োজন কিন্তু আমাদের ইউনিয়নের এ ধরণের তহবিল নেই।  ওই ওয়ার্ডের মেম্বার মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন রবিউলের নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড আছে।
শুক্রবার (৩০ জুলাই) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বোয়ালমারীর ইউএনও ঝোটন চন্দ।  তিনি বলেন, ফেসবুকে শিকলবন্দি ওই তরুণের ছবি দেখে এরই মধ্যে আমি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে পরিবারটিকে পাঁচ হাজার টাকা ও সরকারি খাদ্য সহায়তা দিয়েছি।  প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় ঘটনাটি আগে আমাদের নজরে আসেনি।  সমাজসেবা অধিদফরের মাধ্যমে মানসিক ভারসাম্যহীন রবিউলের চিকিৎসায় অর্থ সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হবে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ