নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
নগরের বায়েজিদ, আকবরশাহ, পাঁচলাইশ, কোতোয়ালীসহ বিভিন্ন এলাকার ছোট ছোট শিশুদের কাউকে টাকার লোভ দেখিয়ে বা কাউকে চকোলেটের লোভ দেখিয়ে সিএনজি অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যেত। পরে ধর্ষণ শেষে ফের যেখান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানে বা তার আশেপাশে এনে নামিয়ে দিত এসব শিশুদের। বেশ কয়েকটি নামেই এই ধর্ষক পরিচিতি। সিএনজি অটোরিকশা চালানো পেশা হলেও মো. বেলাল হোসেন দফাদার প্রকাশ বেলাল প্রকাশ রসু খাঁ বেলাল প্রকাশ সিরিয়াল রেপিস্ট বেলাল হিসেবে পরিচিত ছিল সে।অসংখ্য শিশুর এই ধর্ষক পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক হলেও করতো মাদক পরিবহন। তার নেশা ছিল শিশুদের ধর্ষণ।
সিরিয়াল ধর্ষক বেলাল হোসেন দফাদারের সম্পর্কে এসব তথ্য জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) সিএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। এর আগে নগরের বায়েজিদ থানাধীন শান্তিনগর আবাসিক এলাকার বিপরীতে সমবায় আবাসিক এলাকায় বায়েজিদ থানা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন সিরিয়াল শিশু ধর্ষক বেলাল হোসেন দফাদার। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি এলজি, আটটি কার্তুজের খোসা, একটি সিএনজি অটোরিকশা, ৫০০ পিস ইয়াবা ও ১৫টি যৌন উত্তেজক ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় সিএমপির বায়েজিদ জোনের সহকারী কমিশনার পরিত্রান তালুকদার, ওসি প্রিটন সরকারসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। এ ঘটনায় বায়েজিদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোহাম্মদ নাসিম বাদি হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করেছেন।
বায়েজিদ জোনের সহকারী কমিশনার পরিত্রান তালুকদার জানান, বেলাল হোসেন দফাদারের বিরুদ্ধে বায়েজিদ ও আকবরশাহ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সম্প্রতি বেলাল বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। আমরা তাকে খুঁজছিলাম এতদিন।
সিআরবি পাহাড় ছিল বেলালের প্রিয় জায়গা!
বায়েজিদ থানার এসআই গোলাম মোহাম্মদ নাসিম জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের সিএনজি অটোরিকশায় তুলে নিয়ে সিআরবি এলাকার একটি পাহাড়ে চলে যেতো বেলাল। সেখানে এসব শিশুদের ধর্ষণ করে বিকৃত উল্লাসে মেতে উঠতো। এসব শিশুদের কাউকে টাকার লোভ দেখিয়ে আবার কাউকে চকোলেটের লোভ দেখিয়ে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে নিতো। তিনি বলেন, এসব শিশুদের কেউ চিৎকার করতে চাইলে তাদের ভয় দেখাতো বেলাল। তার টার্গেট নিম্নবিত্ত পরিবারের ছোট শিশুরা।
অর্ধ শতাধিক শিশুকে ধর্ষণ
বেলাল হোসেন দফাদারের নেশার মতো ছিল শিশুদের ধর্ষণ। ২০১৬ থেকে বেলাল এ কাজে জড়িত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। দিন দিন বেলালের কাছে তা নেশায় পরিণত হয়। ৩/৪ দিন পরপরই বেলাল সুযোগ খুঁজতো। এসআই গোলাম মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ১৫ টির মতো ঘটনা জানতে পেরেছি আমরা। এছাড়া ধারণা করছি বেলাল অর্ধ শতাধিক শিশুকে ধর্ষণ করেছে। কারণ তার কাছে এটা নেশার মতো ছিল। ৩/৪ দিন পরপরই বেলাল ধর্ষণের সুযোগ খুঁজতো। তিনি বলেন, বেলাল হোসেন দফাদার এখন পর্যন্ত চারটি বিয়ে করেছে। ১ম, ২য় ও ৩য় স্ত্রী তাকে ফেলে চলে গেছে। সর্বশেষ ৪র্থ স্ত্রীর সঙ্গে বেলাল সীতাকুণ্ড উপজেলার কালুশাহ মাজার এলাকায় বসবাস করছিল।
চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক অটোরিকশা চালক নিহত হয়েছেন, যার বিরুদ্ধে শিশু ধর্ষণের এক ডজন মামলা রয়েছে থানায়। গত বুধবার গভীর রাতে চট্টগ্রামের সমবায় আবাসিক এলাকায় গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে বলে বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি প্রিটন সরকার জানিয়েছেন। নিহত বেলাল হোসেন দফাদারের বয়স ৩৭ বছর, বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। চট্টগ্রামে তিনি অটোরিকশা চালাতেন। ওসি প্রিটন সরকার বলেন, ‘বেলাল একজন সিরিয়াল শিশু ধর্ষক। ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের লোকজনের বসবাস আছে এমন এলাকার শিশুদের ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে সে ধর্ষণ করত’।
বায়েজিদ ও আকবরশাহ থানায় বেলালের বিরুদ্ধে শিশু ধর্ষণের অন্তত ১২টি মামলা আছে জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ২০১৬ সালে এক শিশুকে ‘ফুসলিয়ে নিয়ে’ যাওয়ার সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে বেশকিছু দিন কারাগারে ছিলেন বেলাল। জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার সে একই কাজে জড়িয়ে পড়ে। বেলাল ১০ বছরের কম বয়েসী মেয়ে শিশুদের টার্গেট করত। তাদের ফুসলিয়ে সিএনজিতে তুলে নির্জন জায়গায় নিয়ে ধর্ষণ করত। আবার রেখে যেত ওই এলাকায়’।
গত ১২, ১৭ ও ২০ জুলাই এভাবে সে বায়েজিদ এলাকার তিন শিশুকে ধর্ষণ করে বলে থানায় অভিযোগ পায় পুলিশ। ওসি প্রিটন সরকার বলছেন, সমবায় আবাসিক এলাকায় বেলাল ও তার সহযোগীরা অবস্থান করছে খবর পেয়ে পুলিশ বুধবার গভীর রাতে সেখানে অভিযানে যায়। পুলিশ দেখে বেলালের সহযোগীরা গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও গুলি চালায়। গোলাগুলি থামলে বেলালকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে বেলালকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান ওসি।
ডিসি/এসআইকে/এমএনইউ