সোমবার টেকনাফে আত্মসমর্পণ করছেন ইয়াবা ব্যবসায়ীরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি >>>
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৯ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬ জনই রোহিঙ্গা। এর আগে ২০১৮ সালের মে থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় বিশেষ অভিযানে ৫৬ রোহিঙ্গাসহ ২০৯ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ডাকাত-সন্ত্রাসী নিহত হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন কাজে বেজায় শঙ্কিত মাদক ব্যবসা ও পাচারের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা। তাই অনেকে ফিরতে চান স্বাভাবিক জীবনে।
তারই অংশ হিসেবে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়িরা আত্মসমর্পণ করছেন বলে জানা গেছে। দীর্ঘ দিন ‘সেফহোমে’ থাকার পর ২০-২৫ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করবেন বলে তথ্য থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই সংখ্যা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। সোমবার সকালে কক্সবাজারের টেকনাফ সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে এসব মাদক ব্যবসায়িরা আত্মসমর্পণ করবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে মঞ্চসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন শেষ করেছে জেলা পুলিশ।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে টেকনাফ উপজেলায় মাইকিংও হয়েছে। জেলা পুলিশ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকার কথা রয়েছে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক এর। সভায় সভাপতিত্ব করবেন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় এসব চিহ্নিত মাদক তথা ইয়াবা ব্যবসায়িরা আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

এই মঞ্চেই মাদক সমপর্ণ করবে মাদক ব্যবসায়ীরা।

এর আগে গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ জন চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। দ্বিতীয় দফায় সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ২০-২৫ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকতা শেষে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে। আত্মসমর্পণ করতে যাওয়াদের মধ্যে টেকনাফের মৌলভীপাড়ার ফজল আহমদের ছেলে রিদোয়ান, নাজিরপাড়ার কালা সওদাগর ও আবদুর রাজ্জাক, মৃত আমির হোসেনের ছেলে আবদুল আমিন আবুল প্রমুখের নাম জানা গেছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানয়েছেন, ‘সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ২৫ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি তোফায়েল আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ২৩ জন চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করার জন্য সেফহোমে অবস্থান করছে বলে শুনেছি। তবে আসলে কতজন আত্মসমর্পণ করবে তা জানতে সোমবার সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে এটি একটি ভালো দিক, কিছু মাদক কারবারি বুঝতে শুরু করেছে এসব অপকর্ম করে আর রক্ষা হবে না। এতে করে মাদক পাচার কমে আসতে শুরু করেছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান থাকায় ইয়াবা ব্যবসা কমে এসেছে। কোনো মাদক কারবারিকে ছাড় দেওয়া হবে না। যেকোনোাবে এই অঞ্চল থেকে মাদক বন্ধ করা হবে’। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি এই রুটটিকে মাদকের আগ্রাসান থেকে রক্ষা করতে। এই অঞ্চলের মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়ে এসবে যুক্ত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের অন্যভাবে আইনী প্রক্রিয়ায় সমাজের মূল¯্রােতে একীভূত করতে। তারা যেহেতু অপরাধ করেছে, আইন অনুযায়ী তাদের বিষয়টি দেখা হচ্ছে। যারা মাদক ব্যবসায়ী এখনো এসব অপরাধে যুক্ত- তাদের বলতে চাই, আমরা সুযোগ দিচ্ছি। এখনো সময় আছে মাদক ব্যবসা থেকে নিজেকে মুক্ত করুন।

ডিসি/এসআইকে/এসইউআইজে