খসরু-নোমানের দ্বন্দ্বের আগুনে দগ্ধ চট্টগ্রাম বিএনপি

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
আব্দুল্লাহ আল নোমানের হাত ধরেই বিএনপির রাজনীতিতে পদার্পণ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।  চট্টগ্রামের সন্তান এই দুই শীর্ষ নেতাকে গুরু-শিষ্য বলেই জানে নেতা-কর্মীরা।  কিন্তু সময়ের ব্যবধানে গুরুকে পেছন ফেলে এগিয়ে যান খসরু।  পেছনে পড়ে থাকা নোমান তাই জ্বলেছেন শিষ্যের এমন এগিয়ে যাওয়াকে।  তবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নয়, রাজনীতিতে গুরুকে ধীরে ধীরে কোণঠাসা করার সন্দেহে এই গুরু-শিষ্য আজ দুইমুখী অবস্থানে।  আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বর্তমোনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল- বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য।  অন্যদিকে আব্দুল্লাহ আল নোমান দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।  গুরুকে পেছন ফেলে এক দৌড়ে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অন্যতম একটি পদ ধরে ফেলা খসরুর মতোই একই কমিটির সদস্যপদ প্রত্যাশি ছিলেন নোমানও।
 এ নিয়ে নোমানপন্থীরা বেশ আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন।  নোমানও বেশকিছুদিন রাগে-ক্ষোভে দলীয় কর্মসূচিতে থাকেননি।  খুব মাঝেমধ্যে নিজপন্থী কর্মীদের ধরে রাখতে দুই-একটি কর্মসূচিতে থাকেন অগ্রভাগে।  তবে আড়ালেই থাকছেন মাসের অধিকাংশ সময়।
আবদুল্লাহ আল নোমানকেও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য করার কথা ছিল।  অন্যদিকে একই পদের প্রত্যাশা করেছিলেন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান। তিনি পদত্যাগ করেছেন বছর হতে চললো।  পদত্যাগের কথা ছিল নোমানেরও, তবে তিনি পদত্যাগ না করে রাজনীতির মাঠ থেকে নিজেকে গুঁটিয়ে নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির একাধিক নেতা ও কর্মী জানান, নোমান-খসরু দ্বন্দ্বের কারণে চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির কার্যক্রম দ্বিধাবিভক্ত।  এ দুই নেতার হাতেই জিম্মি চট্টগ্রামের বিশেষত চট্টগ্রাম নগরের নেতা ও কর্মীরা।  বিএনপির সর্বোচ্চ ফোরামে থাকার সুবাধে চট্টগ্রামের নেতা ও কর্মীদের একটি বড় একটি অংশ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।  আরেক অংশের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন আবদুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গে, তবে পরিস্থিতির কারণে তাও কম।  এই দুই ধারার বিপরীতে অন্য যে সকল নেতা ও কর্মীরা রয়েছেন তারা চট্টগ্রাম বিএনপিতে নোমান-খসরুর গ্রুপকে একটি ধারায় আনতে চায়।  সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করতে চায় কিন্তু দুই শীর্ষ নেতার কোন্দলে তা সম্ভব হচ্ছে না।
দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ার পর থেকে যেকোনো দলীয় কার্যক্রমে তাকেই প্রধান অতিথি করা হয়।  এতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডগুলোতে অংশগ্রহণ করা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন আবদুল্লাহ আল নোমান।  এ কারণে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন- আমীর খসরু যেখানে প্রধান অতিথি, সেখানে যেন তাকে আমন্ত্রণ জানানো না হয়।  নোমানের এমন আহ্বানের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বিএনপির নেতা-কর্মীরা।  এ কারণে দীর্ঘদিন সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ডে একসঙ্গে দেখা যায়নি গুরু-শিষ্যকে।
আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে এই দুই নেতাকে মাঠে একসঙ্গে চাইছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।  কিন্তু তা এখনো হয়ে না ওঠায় দেখা দিয়েছে বিপত্তি।  নির্বাচনে বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়েছে হাইকমান্ড।  তার নেতৃত্বেই চলছে নির্বাচনী কার্যক্রম। এ অবস্থায় নোমানকে মেয়র প্রার্থী শাহাদাতের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে নেতা-কর্মীরা।  এমনটি হলে চট্টগ্রাম বিএনপির নেতৃত্বে কিছুটা হলেও ভারসাম্য আসবে।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ।  চসিক নির্বাচনেও আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকতে চাই।  এ জন্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আবদুল্লাহ আল নোমানকে একসঙ্গে নির্বাচনের মাঠে আনার চেষ্টা চলছে।
অন্যদিকে নগর বিএনপির সভাপতি ও চসিক নির্বাচনে দলীয় মেয়রপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, দুই নেতাকে একসঙ্গে মাঠে দেখা না গেলেও বিগত সকল কর্মসূচিতে কিন্তু তাঁরা সরব ছিলেন।  আমরা চাইছি দুইজনকে একমঞ্চে বসাতে।  সে জন্য যা করার আমরা করছি।  তাঁরা দুইজন যদি এক সাথে বসেন, তাহলে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণসঞ্চার হবে।  তীব্র উদ্যোমে বিএনপির যে প্রতিবাদ কর্মসূচি, জালিম সরকারের সমস্ত অপকর্মের বিরুদ্ধে যে কর্মসূচি, তাদের হটাবার যে কর্মসূচি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে কর্মসূচি তা চট্টগ্রাম থেকেই সফল হবে।

ডিসি/এসআইকে/এনএজে