চট্টগ্রামেও ‘হাফ ভাড়া’র দাবিতে রাস্তায় শিক্ষার্থীরা

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
গণপরিবহনে ‘হাফ ভাড়া’র সুবিধা চেয়ে চট্টগ্রামেও আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে নগরের ২ নম্বর গেট মোড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একটি সমাবেশ শুরু হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
বক্তব্যে তারা বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর গণপরিবহনে ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। অনেক সিএনজিচালিত বাসও ভাড়া বাড়িয়েছে। আগে যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেওয়া হতো, সেটা এখন নেওয়া হয় না। ফলে শিক্ষার্থীদের প্রায় তিন গুণ ভাড়া বেশি দিতে হচ্ছে। হাফ ভাড়া শিক্ষার্থীদের ভিক্ষা নয়, অধিকার। সরকারকে অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন করে শিক্ষার্থীদের এ সুবিধা দিতে হবে।
নগরের ইসলামিয়া কলেজের এইচএসসি শিক্ষার্থী আবদুল আল জাওয়াদ বলেন, আগে আমরা যেখানে পাঁচ টাকা ভাড়া দিতাম, সেখানে এখন ভাড়া দিতে হচ্ছে ১৫ টাকা। কারণ আগে ১০ টাকার ক্ষেত্রে হাফ সুবিধায় পাঁচ টাকা দেওয়া যেত। এখন ১০ টাকার ভাড়া বেড়ে ১৫ টাকা হয়েছে। আবার হাফ ভাড়াও নিচ্ছেন না চালক-হেলপাররা। বাসভাড়া বাড়লেও আমাদের বাবার আয় বাড়েনি। তাই আমরা অবিলম্বে গাড়ি ও লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহনে হাফ সুবিধা বহাল চাই।
ছাত্র হিসেবে অন্য কোনো ক্ষেত্রে হাফ সুবিধা পান কি না জানতে চাইলে এ শিক্ষার্থী বলেন, আমরা আগে থেকে শুধু গণপরিবহনে হাফ সুবিধা পেতাম। এখন সেই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না বিধায় আন্দোলনে নেমেছি। আবার ছাত্র হিসেবে আমাদের প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়, তাই গণপরিবহনের সুবিধাটা আমাদের জরুরি। অন্য কিছু তেমন আমাদের কম প্রয়োজন হয়।
এদিকে বাসমালিকরা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবি মানা সম্ভব নয়। তারা বলছেন, গণপরিবহন ব্যক্তি মালিকানাধীন। ব্যক্তিগত গাড়িতে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব না। সরকার যদি কোনো ধরনের প্রণোদনা কিংবা সুযোগ-সুবিধা দেয়, তাহলে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। আবার শিক্ষার্থীরা তাদের বাসা ভাড়া, খাওয়ার হোটেল কিংবা অন্য কোনো ক্ষেত্রে সুবিধা পায় না। তারা শুধু গণপরিবহনে হাফ সুবিধা চায়, যেটি আসলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্ভব নয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বাসমালিক সংঘটনের নেতা মো. শাহজাহান বলেন, সরকার যদি আমাদের কোনো ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয় আমরা সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি বিবেচনা করতে পারবো। শিক্ষার্থীরা সরকারি বিনোদন কেন্দ্রে পর্যন্ত এক টাকা ছাড় পায় না, সেখানে আমরা কীভাবে তাদের ছাড় দিতে পারি। এটা আমাদের ব্যবসা। অনেকে সারাজীবন সঞ্চয় করে একটি গাড়ি ক্রয় করে এবং সেই গাড়িটির আয় দিয়ে তার পরিবার চলে। আমরা অথবা সরকার কীভাবে তার ব্যক্তিগত গাড়িতে হাফ ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবে।
নগর পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোখলেসুর রহমান বলেন, ২ নম্বর গেট মোড়ে শিক্ষার্থীরা সকালে আন্দোলন করেছে। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও মিছিল শেষ হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা গণপরিবহনে হাফ ভাড়া সুবিধার পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ডিজেল-কেরোসিনের দাম পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। গত ৩ নভেম্বর রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ডিজেল-কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। নতুন দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়।
এ নিয়ে পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘটের ঘোষণা না দেওয়া হলেও ৫ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৭ নভেম্বর ডিজেলচালিত গাড়িতে ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণার পর বাস চলাচল শুরু হয়। এরপর থেকে শিক্ষার্থীদের আর হাফ ভাড়ার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ ওঠে।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর