রাজনৈতিক সম্প্রীতিপূর্ণ চট্টগ্রাম ফিরে পেতে চান তরুণ প্রজন্ম

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল ভৌমিক বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্প্রীতি আজ বিলুপ্ত। তরুণ প্রজন্ম নিজেদের বিশ্বাস থেকে যে রাজনৈতিক দলে সম্পৃক্ত হলো, সেই দলের কর্মকা- পছন্দ না হওয়ার দরুন অন্যদলে যোগ দিতে পারছে না নানান কারণে। দল বদল কিংবা নিজের পছন্দ-অপছন্দের স্বাধীনতাটুকু তাদের নেই। ফলে তরুণ প্রজন্ম ব্যাপকভাবে অপরাজনীতিতে ধাবিত হচ্ছে। কিন্তু এক সময় এই সংস্কৃতি ছিল না। চট্টগ্রামের এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নিজ দলের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেছেন। জনস্বার্থের জন্য তিনি পিছপা হননি। দলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তিনিতো ধ্বংস হননি। বরং তিনি সবার কাছে সমাদৃত হয়েছেন। বীর চট্টলার অগ্নিপুরুষ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। তাই সাদাকে সাদা বলা, কালোকে কালো বলার সংস্কৃতি দলের নেতা-কর্মীদের চর্চা করতে হবে। এতে সম্প্রতি বাড়বে। মাঠের রাজনীতির বাইরে নেতাতে-নেতাতে ব্যক্তিগত সৌহার্দ্য থাকতে হবে। এই চর্চা থাকলে দলগুলোতে সম্প্রীতি বাড়বে। অপরাজনীতির সুযোগ কমে যাবে।
গতকাল বুধবার (১১ অক্টোবর) সকালে নগরের একটি রেস্টুরেন্টে ‘রাজনৈতিক সম্প্রীতি’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। আন্দোলন সংগ্রাম ও রাজনৈতিক সম্প্রীতির চারণভূমি চট্টগ্রামে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি সর্বদা রাজনৈতিক সম্প্রীতি এবং সহনশীলতা অনুশীলন করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়াসে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসী ফোরাম এই কর্মশালার আয়োজন করে।
এতে সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, পেশাজীবী ও তরুণ-যুব সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ’ প্রকল্পের আওতায় গঠিত মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসী ফোরাম একটি বহুদলীয় স্বেচ্ছাসেবী রাজনৈতিক ফোরাম যা বাংলাদেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির তরুণ নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠিত। প্রকল্পের আওতায় দলগুলোর পলিটিক্যাল ফেলো ও মাস্টার ট্রেইনারদের সমন্বয়ে ফোরামটি গঠিত।
কর্মশালার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসী ফোরাম চট্টগ্রামের প্রেসিডেন্ট ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী সনাতন চক্রবর্তী বিজয়। এই কর্মশালার উদ্দেশ্য নিয়ে বক্তব্য রাখেন ডেমোক্রেসী ইন্টারন্যাশনাল চট্টগ্রামের সিনিয়র রিজিওনাল ম্যানেজার মো. সদরুল আমিন। মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসী ফোরাম চট্টগ্রামের কার্যক্রম তুলে ধরেন সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী।
কর্মশালার মূল কার্যক্রম পরিচালনা করেন ডেমোক্রেসী ইন্টারন্যাশনাল চট্টগ্রামের রিজিওনাল কোঅর্ডিনেটর মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সম্প্রীতি বিনির্মাণে ও রাজনৈতিক সম্প্রীতি জোরদার করতে রাজনৈতিক দলগুলো কি কি উদ্যোগ নিতে পারেন, রাজনৈতিক সম্প্রীতি জোরদার করতে মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সমাজ, কি ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে মতামত প্রদান করেন। একই সাথে অংশগ্রহণকারীদের মতামত দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলকে প্রদানের লক্ষ্যে গণসাক্ষরও সংগ্রহ করা হয়।
এতো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম নারী নেত্রী ও সংগঠক জেসমিন সুলতানা পারু, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল, এনজিও প্রতিনিধি লিটন চৌধুরী, ক্যাব প্রতিনিধি কাজী ইকবাল বাহার সাবেরী, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি কবি শারুদ নিজাম, সাংবাদিক ডেইজি মওদুদ। নাগরিক এই কর্মশালায় মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসী ফোরামের সদস্যবৃন্দ, সাংবাদিক, শিক্ষক, এনজিও প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, যুব রেডক্রিসেন্ট, বিএনসিসি, লিও, যুব স্বেচ্ছাসেবক প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালা বাস্তবায়নে সহায়তা করেন ডেমোক্রেসী ইন্টারন্যাশনাল চট্টগ্রামের ইলেকটোরাল প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট তামান্না আহমেদ বহ্নি ও অপারেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট আবুল হাসান চৌধুরী রণি।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর