চসিক নির্বাচন : মেয়রপদে মনোনয়নপত্র নিলেন বৃহত্তর কাট্টলীর ৪ জন

এম মনজুর আলম, খোরশেদ আলম সুজন, হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান ও এরশাদুল আমীন।

ইসলাম শফিক, প্রধান প্রতিবেদক >>>
এম মনজুর আলম, হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান, খোরশেদ আলম সুজন- এই তিনজন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী উত্তর কাট্টলীর সন্তান। অন্যদিকে এরশাদুল আমীন দক্ষিণ কাট্টলী এলাকার সন্তান। তারা চারজনই বংশগত ও অবস্থানগত কারণে বৃহত্তর কাট্টলীর কৃতি সন্তান। তবে প্রচার-প্রচারণা দিক থেকে এরশাদুল আমিন ও হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন এদিক দিয়ে আলোচনায় বেশ এগিয়ে। চারজনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশি।
আওয়ামী লীগের হয়ে চারবার উত্তর কাট্টলীর কমিশনার হওয়া এম মনজুর আলম মাঝে বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলটির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। প্রায় ৯ বারের এই ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন পূর্ণাঙ্গ মেয়র। সেই সাথে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টাও নির্বাচিত হন। ৫ বছর মেয়র থাকাকালীন বিএনপির সকল কর্মসূচি পালন করেছেন তিনি। নিজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ঘরে টাঙিয়েছেন জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছবি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আবারো বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে মেয়র নির্বাচন করেন। সেই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, দখল ও জোর করে ভোট কেড়ে নেয়ার প্রতিবাদে রাগে-ক্ষোভে নির্বাচন বর্জন করেন এবং সাথে সাথে বিএনপিসহ সব ধরণের রাজনৈতিক কর্মকা- আর করবেন না বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু দেড় বছরের মাথায় নিরবতাকে ভেঙে তিনি ধীরে ধীরে আবার সক্রিয় হন। কিন্তু বিএনপি থেকে নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ নির্বাচন এবং মেয়র নির্বাচন করার অভিপ্রায়ে নানান সামাজিক কাজে সরব হন। তার সকল জায়গা থেকে নেমে যায় জিয়াউর রহমান ও বেগম জিয়ার ছবি। তার এই দল-বদলের বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তারা তাকে পুঁজিবাদী রাজনীতির প্রতীক ও পল্টিবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগ থেকে চট্টগ্রাম- ১০ আসনে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। এবার আসন্ন সিটি নির্বাচনে তিনি জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন দলটির সমর্থন নিয়ে মেয়রপদে নির্বাচনের।
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা খোরশেদ আলম সুজন উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের বাসিন্দা। নগর জুড়ে নানান কর্মকা-ে আলোচিত এই নেতা এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন চেয়েও ব্যর্থ হন। এবার তিনি আসন্ন সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে দলটি থেকে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি মনে করেন, তিনি দীর্ঘ ৪২ বছর বঞ্চনার শিকার। এবার তিনি মেয়র নির্বাচনের জন্য সমর্থন চেয়ে দেখতে চান বঞ্চনার রং কত ধরণের। নানান কারণে তিনি বেশ আলোচিত। একটি নাগরিক অধিকারমূলক সংগঠন গঠনের মাধ্যমে তিনি নিয়মিত বিভিন্ন ইস্যুতে মানববন্ধন, সেমিনার, সাক্ষাৎ- ইত্যাদি কর্মসূচি দিয়ে সব সময়ই পত্রিকার পাতায় থাকেন। তার কর্মসূচির ইস্যুগুলো সরকার বিরোধী মন্তব্য করে খোদ দলটির মধ্যেই তাকে নিয়ে সমালোচনা আছে বলে জানান দলটির বিভিন্ন সারির নেতৃবৃন্দ। তুমুল সমালোচনা থাকলেও তিনি দলটির মেয়র নোমিনেশন চান।
চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতির অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সাবেক মন্ত্রী মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরী উত্তর কাট্টলীর সন্তান। তারই মেঝো ছেলে হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান এর আগে জাতীয় সংসদ সদস্যপদে ক্ষমতাসীন দলটির মনোনয়ন চেয়েছেন কিন্তু পাননি। এবার তিনি আসন্ন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিতে দলটির সমর্থন আদায়ের জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। সর্বশেষ তিনি দলীয় নোমিনেশন ফরম তুলে তা জমাও দিয়েছেন। ব্যবসায়ী এই নেতা আশা করছেন তিনি এবার মেয়রপদে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাবেন। তার বড় ভাই মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উত্তর কাট্টলীর পার্শ্ববর্তী এলাকা দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা এরশাদুল আমীন সাবেক মন্ত্রী ডা. মো. আফছারুল আমীন এমপির ছোট ভাই। তিনিও এবার সিটি নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন। কিনেছেন মনোনয়ন ফরম, জমাও দিয়েছেন। তিনি নগরীর পিএইচ আমীন একাডেমি প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিষদের সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও নগর কেন্দ্রীক রাজনীতিতে ততটা সক্রিয় নন, যতটা সক্রিয় নিজের এলাকায়। সংশ্লিষ্টদের মতে, নগরময় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই প্রাথমিক ধাপ হিসেবে তিনি মেয়রপদে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তিনি দৃঢ়ভাবে মেয়র নির্বাচন করার চিন্তায় নয়, নিজের পরিচিতি জানান দিতেই এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে অনেকের ধারণা।
কাট্টলী থেকে রেকর্ড সংখ্যক চারজন ব্যক্তি সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র নেয়ায় এলাকায় সর্বত্রই আলোচনার ঝড় বইছে। এমন ঘটনায় এই অঞ্চলের মানুষ কিছুটা আনন্দিত হলেও শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় সমর্থন পাচ্ছেন কি না তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

ডিসি/এসআইকে