যৌতুকের চাপে বিয়ের আগে আত্মহত্যা

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি >>>
যৌতুক আমাদের সমাজের জন্য বিরাট অভিশাপ। যৌতুকের কারণে আত্মহত্যা বা খুন হয়েছেন অনেক বধূ/তরুণী। যৌতুক সামাজিক ব্যাধি, আর এই ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্রই। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, স্বাক্ষরজ্ঞানহীন- সব পরিবারেই এমন ব্যাধির বিস্তৃতি ঘটেছে। এরই উদাহরণ সৃষ্টি করলো চট্টগ্রামের সীতাকু- উপজেলার বাঁশবাড়িয়ার তুশা। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার আগেই জীবন দিয়ে সে জানান দিলো যৌতুক সবাই দিতে পারে না। প্রেমের গভীর সম্পর্কে আপন করে নিলেও বরের বাড়িতে যাওয়ার পূর্বেই লাশ হলো ফেরদৌস তুশা নামের ১৭ বছরের এই কিশোরী। স্বামীর বাড়ি গিয়ে সংসার করার স্বপ্নে নতুন জীবন শুরু করার আগেই শত দুঃখ অভিমানে পরপারে চলে যেতে হলো তাকে।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭ টার সময় বাঁশবাড়িয়া এলাকা থেকে পুলিশ গলায় ফাঁস দেওয়া তুুুুশার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। সীতাকু- মডেল থানার পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে।
জানা গেছে, উপজেলার শীতলপুরের লালবাগ এলাকার জাফর ইকবালের ছেলে ইমতিয়াজ হোসেন শিবলুর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বাঁশবাড়িয়া এলাকার মো. রফিকের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস তুশা’র। গত কয়েক মাস আগে তারা কোর্ট ম্যারেজও করে।
প্রথমে বিষয়টি তাদের পরিবার মেনে না নিলেও পরে তুশার পরিবার মেনে নেয়। কিন্তু বাঁধসাধে শিবলুর মা মাজেদা বেগম, তিনি কোনোভাবেই এই বিয়ে মানতে নারাজ। তবে শিবলু অনেক বুঝিয়ে কয়েকদিন আগে তার মাকে রাজি করান। আর এতে মাজেদা বেগম তুশার পরিবারের উপর চাপিয়ে দেন বিশাল যৌতুকের তালিকা।
তুশার খালাতো ভাই রায়হান বলেন, শিবলুর মা মাজেদা বেগম বিয়ের পর তার ছেলেকে একটা পাকা ঘর করে দিতে বলেন। এছাড়া বিয়েতে দুই হাজার লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা, বিভিন্ন পদের ফার্ণিচারসহ অন্যান্য যৌতুক দাবি করেন। যদি তা দেয়া না হয় তাহলে তুশাকে ঘরে তুলবেন না, বরং তালাক দেওয়ানোর হুমকি দেন।
শিবলুর মামা দেলোয়ার হোসেন বলেন, যৌতুক দিতে না পারলে তাকে তালাকের নোটিশ দাও, আমি এক সপ্তাহের মধ্যে আরেকটি মেয়ে বিয়ে করাবো। দুইদিন আগে শিবলু ফোন করে তুশাকে বলেন, আমার মায়ের চাওয়া দাবিগুলো যদি পূরণে রাজি না হও তাহলে শনিবার তোমার কাছে ডিভোর্স লেটার যাবে।
তুশা শিবলুকে জানায় তাদের পক্ষে এই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রেমিকের মায়ের সুরে কথা বলা আর যৌতুকের দাবি তেকে সরে না আসায় রাগে, ক্ষোভে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তুশা।
পুলিশ এই বিষয়ে তদন্ত করে পরে অভিযোগের ভিত্তিতে আইনী ব্যবস্থা নিবে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।

ডিসি/এসআইকে/এমজেএ