সরাইপাড়ায় নতুন কাউন্সিলর চান ভোটাররা, পরিত্রাণ চান মাদক-যানজট থেকে

সাবের আহম্মদ, মো. শামসুল আলম, মো. নুরুল আমিন, আসলাম হোসেন, শওকত আলী।

মো. নুর উদ্দিন, নিজস্ব প্রতিবেদক >>>
প্রাচীনতম পাহাড়তলী বাজার, চট্টগ্রামের চাউলের পাইকারি বাজারকে ঘিরে ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডের অধিবাসীদের জীবিকা। যদিও বৃহত একটি অংশ চাকুরিসহ নানান পেশায় যুক্ত। কিন্তু যারা আদিবাসী তারা এই বৃহত বাজারকে ঘিরে গড়ে ওঠা ব্যবসার সাথেই সম্পৃক্ত। ওয়ার্ডের বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের জায়গা। রয়েছে পাহাড়তলী রেলস্টেশন। রেলের আবাসিক বাসিন্দাদের পানির চাহিদা মেটাতে বৃটিশ আমলে তৈরি করা হয়েছিল বৃহৎ দু’টি জলাধার। স্থানীয়ভাবে এই জলাধার পরিচিতি পায় জোড় ডেবা নামে। বাজারের পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক বড় দিঘী যেটি ভেলুয়ারদিঘীনামে পরিচিত।এখানে প্রায় হাজারখানেক দোকান রয়েছে। এসব দোকানের বেশিরভাগই পাইকারিতে চাউলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য বিক্রি করে।
এই ওয়ার্ডের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে রয়েছে, সরু ও ঘিঞ্জি সড়ক, সড়ক দখল করে ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জলাবদ্ধতা, যানজট এবং সড়ক দখল করে পণ্য পরিবহনের যানবাহনের স্ট্র্যান্ড ইত্যাদি। এছাড়াও একসময় খাওয়ার পানি হিসেবে ব্যবহৃত জোড় ডেবা এখন ব্যবহারের অযোগ্য। ইজারা নিয়ে ডেবার পাড় ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য বসতি। এসব বসতির বর্জ্যে একসময়ের সুপেয় পানির এই জোড়ডেবা এখন দূষিত। দখল ও বসতির ফলে ভেলুয়ারদীঘিও আজ দূষণে নিপতিত। শুধু তাই নয়, ডেবার পাশ দিয়ে যে রেললাইন চলে গেছে সেখানে সন্ধ্যা হলেই বসে মাদকের আসর। পুলিশের খাতায়ও এই জোড় ডেবার পাড়টি মাদকের স্পট হিসেবেই পরিচিত। এই ওয়ার্ডের প্রায় এলাকায় মাদকের একাধিক স্পট, উঠতি তরুণদের মাদকাসক্ততা, কিশোর গ্যাং চর্চা ও চসিকের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম কম থাকা।
এই ওয়ার্ডে বিশেষত ব্যবসাকেন্দ্রিক বাজারের আধিপত্য এবং নিয়ন্ত্রণে এখানে ঘটানো হয়েছে আলোচিত মহিউদ্দিন হত্যাকা-। বর্তমান কাউন্সিলর সাবের আহম্মদ সওদাগরকে এই হত্যাকা-ের প্রধান আসামি করে চার্জশীট দিয়েছে পুলিশ। নানান নাটকীয়তার পরেও কয়েকদিন জেলও খাটেন এই কাউন্সিলর।
মূলত এই ঘটনার পর থেকেই এই অঞ্চলের মানুষ জনপ্রতিনিধি হিসেবে পরিবর্তনের আওতাজ তুলতে থাকে। এছাড়াও যে পরিমাণ বরাদ্দের কথা বলা হচ্ছে এর সমপরিমাণ উন্নয়ন কাজ হয়নি বলেও অধিবাসীদের অভিযোগ রয়েছে। খোঁদ দলেই বর্তমান কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবের আহম্মদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আর হতাশা লক্ষ্য করা গেছে। আর তাই বর্তমান এই কাউন্সিলরের পরিবর্তনে শক্ত অবস্থান নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন দলের একাধিক প্রার্থী। যোগ্যতার বিবেচনায় তাদের অনেকেই এখন এলাকায় হেভিওয়েটপ্রার্থী হিসেবে বিবেচিত। তার মধ্যে এই অঞ্চলের সুপরিচিত ব্যবসায়ী, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আলহাজ্ব নুরুল আমীন,যুগ্ম আহ্বায়কএম শওকত আলী এবং আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আসলাম হোসেন অন্যতম। তাদের পাশাপাশি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাজু চৌধুরীও।
প্রার্থীরা বলেছেন, চট্টগ্রাম নগরের গুরুত্বপূর্ণ একটি জনবহুল অঞ্চল হিসেবে এখানে যে পরিমাণ উন্নয়ন হওয়ার কথা তা হয়নি শুধুমাত্র কাউন্সিলরের অদক্ষতার কারণে। কোনো জনপ্রতিনিধি যদি দিনের ১২টা পর্যন্ত ঘুমান, তাহলে তিনি জনগণের কাজ কখন করবেন? তাই যথাযথভাবে জনগণের চাহিত প্রত্যাশাগুলো পূরণে এখানে একজন ভালো জনপ্রতিনিধির প্রয়োজন যিনি দক্ষতার সাথে কাজ করবেন। নিজেদের মধ্যে এই দক্ষতা, যোগ্যতা আর প্রত্যাশা বাস্তবায়নের ক্ষমতা আছে বলেই আমরা প্রার্থী হয়েছি। চারপ্রার্থীই বলেছেন- দল মনোনয়ন দিলেই তারা নির্বাচন করবেন। তারা বলেছেন, দল যাকেই মনোনয়ন দিবে আমরা তারপক্ষেই কাজ করবো।
অন্যদিকে সাধারণ অধিবাসীদের মতে, আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে নির্বাচনে ভোট দেই, কার্যত বাস্তবে এর বাস্তবায়ন করেন না কাউন্সিলর। আর বর্তমান কাউন্সিলরকেতো দিনের দু’টার আগে পাওয়া কষ্টকর। তিনি ২-৩ ঘন্টার জন্য অফিসে বসেন। বাকী সময় তিনি কি কি করেন তা বলা মুশকিল। এমন ব্যক্তিদের আমরা চাই না। আমরা চাই যে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবেন, দিনে-রাতে সব সময় আমরা যাকে কাছে পাবো তাকেই এবার ভোট দেবো।
এই ওয়ার্ড থেকে একাধিকবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন পাহাড়তলী থানা বিএনপির সভাপতি হাজী বাবুল হক এবং নগর বিএনপির সহ-সভাপতি মো.শামসুল আলম। এবার হাজী বাবুল হক নির্বাচন করবেন না বলে জানিয়েছেন। তবে মো. শামসুল আলম দল নির্বাচনে গেলে এবং দল চাইলে এখানে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভোটারের আগ্রহতো বিএনপির দিকে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ভেঙে দিয়ে ভোট চুরির অভিনব পন্থা, কেন্দ্র দখল ও বিরোধীদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়ার কারণে নির্বাচনে মানুষ ভোট দিচ্ছে না। তারপরও আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা এতে অংশ নেবো কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেলে।

ডিসি/এসআইকে/এমএনইউ