বলয়কেন্দ্রিক রাজনীতি দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে বাড়িয়েছে প্রার্থীর সংখ্যা

মোরশেদ আকতার চৌধুরী, মো. সাইফুল আলম, অধ্যাপক মো. ইসমাইল, সুজিত দাশ।

সাদিয়া জাহান প্রমি, নিজস্ব প্রতিবেদক
বিস্তীর্ণ নগরীর বৃহত সাগর উপকূল, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আধিক্য আর নানান অঞ্চলের মানুষের সম্মিলিত বসবাস চসিকের ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে। নানান কারণে এই ওয়ার্ডের মানুষের অনেক প্রত্যাশা থাকলেও বর্তমান কাউন্সিলর বাতার প্রতিনিধিদের প্রতি সন্তুষ্ট নন এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ- এমনটাই জানা গেলো তাদের সাথে কথা বলে। এছাড়াও তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করে দুইবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও শুধুমাত্র বলয়কেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে এই অঞ্চলে বর্তমান কাউন্সিলরের বিপক্ষে ক্ষোভ ও বৈপরিত্য মনোভাবের উদ্ভব হয়েছে- এমনটাই দাবি এই অঞ্চলের রাজনীতি সচেতন মহলের। ফলে ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক গ্রুপিং, সমন্বয়হীন উন্নয়ন কার্য এবং নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ির কারণে এই অঞ্চলে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ-কাউন্সিলর গ্রুপ দ্বিমুখী অবস্থানে থেকেছে সব সময়। এছাড়াও রয়েছে অনুসারি প্রথার রাজনীতি।
এই ওয়ার্ডের বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠী জনপ্রতিনিধি পদে পরিবর্তন চাইলেও নানান কারণে বর্তমান কাউন্সিলর আশাবাদি তিনিই পাবেন দলীয় মনোনয়ন। তার মতে- এখানে গত ১০ বছরে তিনি যে উন্নয়ন ঘটিয়েছেন, তা অতীতে আর কেউ করতে পারেননি।
জোরগুঞ্জন রয়েছে, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এই এলাকার এমপি ও বাসিন্দা। তিনিও বর্তমান কাউন্সিলরের নানান কর্মকা-ে অসন্তুষ্ট। তিনি অধ্যাপক ইসমাইলকে কাউন্সিলরপদে নির্বাচন করতে উৎসাহিত করছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের অভিযোগ, এলাকায় সন্ত্রাসী, অপরাধীদের দিয়ে উন্নয়ন কাজ করানোয় বর্তমান কাউন্সিলর অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ। কাঙ্খিত উন্নয়ন সেবা বঞ্চনার শিকার এই অঞ্চলের মানুষ। অপরিকল্পিত বিভিন্ন কাজে তিনি ইতোমধ্যে সংবাদের শিরোনামও হয়েছেন। নালার মাঝখানে বিদ্যুতের খাম্বা বসানোর দৃশ্যও আলোচিত হয়েছে। এছাড়াও দল ক্ষমতায় থাকলেও কাউকেই সম্মান দিতে জানেন না তিনি। বর্তমান সরকার যে হারে উন্নয়ন বরাদ্দ দিচ্ছে তা দিয়ে অনেক ওয়ার্ডের দৃশ্যত উন্নয়ন হলেও এই ওয়ার্ডে তা হয়নি। কাউন্সিলরের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, অদক্ষতা, সমন্বয়হীনতা আর স্থানীয়দের সম্পৃক্ত না করে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাস্তান, চাঁদাবাজদের বেষ্টনীতে উন্নয়ন কার্য চালানোয় প্রকৃত উন্নয়ন হয়নি। তাই এই অঞ্চলের মানুষ ভালো একজন জনপ্রতিনিধি চাইছেন।
তবে নগর আওয়ামী লীগের সদস্য বর্তমান কাউন্সিলর মোরশেদ আকতার চৌধুরী বরাবরেই মতোই এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে তার জনপ্রিয়তার পক্ষে জনতার সায় আছে বলে জানান। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাঁর বিকল্প নেই বলেও তিনি মনে করেন। তবে তিনি বলেছেন, দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলেই তিনি নির্বাচন করবেন।
                                           নতুন কাউন্সিলর প্রার্থীদের তৎপরতা
এই ওয়ার্ডে বিগত দশক ধরে ওয়ার্ডের অধিবাসীদের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ব্যবসায়ী অধ্যাপক মো. ইসমাইল। সবচেয়ে সরব এই নেতা তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত আলহাজ্ব খলিলুর রহমান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প, রোজায় ইফতার ও সেহেরি সামগ্রী প্রদান, ঈদে নতুন পোশাক, বিনামূল্যে ওষুধ সেবা প্রদানমূলক কর্মসূচি ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়াও এই ওয়ার্ডের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেকার জনগোষ্ঠীকে চাকুরি দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বলা চলে নির্বাচনী সময়ে নয়, পুরো দশকজুড়ে তিনি এখানে তার সামাজিক নানান কর্মকা- অব্যাহত রেখেছেন যা অন্য প্রার্থীদের বেলায় দেখা যায়নি। এছাড়াও ওয়ার্ডে দলীয় রাজনীতিকেও সরব রেখেছেন সব ধরণের রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে। এদিক দিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক আলোচনায় থাকা ব্যক্তি।
অন্যদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন পর্যন্ত অনেকের নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন পাহাড়তলী থানা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক সুজিত দাশ। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় থাকলেও মো. নুরুল হুদা চৌধুরীর নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো কর্মতৎপরতা দেখা যায়নি। তৎপরতা দেখা যায়নি আরেক প্রার্থী ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক বাবলুরও। তিনি গত ২০০৫ ও ২০১০ সালেও নির্বাচন করেছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে এবার দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড থেকে বিএনপি থেকে নির্বাচন করার আগ্রহ দেখিয়েছেন ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, বর্তমান দখল আর জোর করে ভোটাধিকার ছিনিয়ে নেয়ার আগ্রাসী নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের অনীহার প্রকাশ পেয়েছে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে। দল যদি অংশ নেয় এবং আমাকে যদি মনোনীত করে তাহলে গণতন্ত্রকে বারংবার ধ্বংস করার প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করতে আমি নির্বাচন করবো।
স্থানীয় ভোটাররা জানান, গত সিটি নির্বাচনের আগেও প্রার্থীরা এলাকার রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিলেও তা নিষ্ফল ছিল। এই এলাকায় যানজটের সমস্যা খুব বেশি। আর ফইল্লাতলী বাজারে রাস্তার উপর টেম্পো যত্রতত্রভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। তার উপর রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। এছাড়াও রয়েছে জলাবদ্ধতা সমস্যা। বর্ষাকালে রাস্তায় পানি জমে থাকে। এমনকি দোকানের মধ্যেও পানি ঢুকে যায়। ড্রেনগুলোর কোনো সংস্কার হয়নি। সড়ক দখল করে চাঁদার বিনিময়ে ভাসমান দোকান বসানোয় অধিবাসীরা পড়েন দুর্ভোগে।তাই কাউন্সিলর যেই হোক না কেন- তার কাছে এই সমস্যাগুলোর সমাধান চান ওয়ার্ডের ভোটারেরা। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গতবারের নির্বাচনী ইশতিহারে এখানকার বর্তমান কাউন্সিলর মোর্শেদ আকতার চৌধুরী জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে মহেশখালের দুই পাড়ে ১২ ফুট প্রশস্ত একটি সড়ক করার কথা। যেখানে ৫ ফুট ড্রেনের জন্যে এবং ৭ ফুট রাস্তা নির্মাণের কথা ছিল। সেটিও হয়নি। ফলে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে রেহাই পাচ্ছে না অধিবাসীরা।

ডিসি/এসআইকে/এসজেপি