উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে উন্নয়নে বৈষম্যের অভিযোগ

বাঁ থেকে মো. জহুরুল আলম জসিম, আব্দুস সাত্তার সেলিম, মো. নুরুল আবছার মিয়া, সৈয়দ সরোয়ার মোর্শেদ কচি ও এরশাদ মামুন।

রিতু আকতার, নিজস্ব প্রতিবেদক >>>
প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের বসবাসস্থল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড। ৫.৩৬ বর্গকিলোমিটারের এ ওয়ার্ডে আয়তনের তুলনায় বসবাসকারীদর সংখ্যা বেশি। দেশের বিভিন্ন জেলার অধিবাসীদের বসতি এখানে হওয়ায় নানান কারণে সব সময়ই আলোচনায় থাকে এই অঞ্চলটি। এই ওয়ার্ডে গ্রুপিং রাজনীতির কারণে মাদক, সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাংসহ নানান অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনেও রাজনীতিকে ব্যবহার অন্যতম সমস্যা। নানান কারণে গুরুত্ব বহন করলেও এই ওয়ার্ডে যথেষ্ট উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। কিন্তু উন্নয়ন কর্মকা-ে বৈষম্যও বেশ লক্ষ্যণীয়। সরেজমিনে পরিদর্শন এবং স্থানীয়দের মতে- এই ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে বৃহত্তর ফিরোজশাহ এলাকায়। কিন্তু নোয়াপাড়া, ফয়’স লেক, বিশ্ব কলোনী, শাপলা আবাসিক ও তৎসংলগ্ন শিল্পনগরী বরাবরের মতোই অবহেলায় নিমজ্জিত। স্থানীয়দের অভিযোগ- কাউন্সিলরের বিচরণ ও বসবাস ফিরোজশাহ’য় হওয়ার কারণে ওই এলাকার প্রতিটি অলি-গলিতে যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে সেভাবে উন্নয়ন করা হয়নি বিশাল জনবসতিপূর্ণ নোয়াপাড়া, মালিপাড়া, শাপলা আবাসিকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এটিকে বৈষম্য হিসেবে দেখছেন উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
এখানকার সাধারণ মানুষ এই সমস্যার পাশাপাশি বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও। এ ওয়ার্ডের ফয়’স লেক, বেলতলী ঘোনা, শাপলা, জয়ন্তিকাসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় এখনো পৌঁছায়নি নাগরিক সুবিধা। জলাবদ্ধতা ও ভাঙ্গা রাস্তাঘাটতো রয়েছেই। অনুন্নত রয়েছে এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থাও। রয়েছে খেলার মাঠের পাশাপাশি সুপেয় পানির সংকটও ।
এর বাইরেও এখানকার রাজনীতিতে গ্রুপিং এর কারণে একাধিক কিশোর গ্যাং ও অপরাধী চক্র বেড়েছে প্রশ্নাতীতভাবে। নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে এসব অপরাধী গ্রুপগুলোকে ব্যবহার করেন এখানকার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতারা। ফলে নানানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ। উঠতি কিশোর-তরুণরা রাজনীতির নামে বিপথগামী হচ্ছে। এছাড়াও বিশাল বিশাল পাহাড়, টিলা কেটে সমতল করে অবৈধভাবে বন্টন, সেই সব এলাকায় যেতে সড়ক তৈরি বর্তমান কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমকে বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তার বিরুদ্ধেও ভূমিদস্যুতা, সরকারি পাহাড় কাটা, কিশোর গ্যাং পরিচালনাসহ বিভিন্ন অভিযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে মামলা। সবকিছুকে ছাপিয়ে তিনিই এখানে জনপ্রিয় কাউন্সিলর, তার বিপরীতে ক্ষমতাসীন দলের অন্য যারা প্রার্থী আছেন তারা ভোটারদের মনজয়ের শক্ত প্রার্থী নন বলে জানান বিকল্পপ্রার্থীরা। বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মকা-ের কারণে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন বর্তমান কাউন্সিলর- এমনটাই মত সংশ্লিষ্ট মহলের। তবে বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস সাত্তার সেলিমও এখানে বেশ জনপ্রিয়। ভোটার ও বিএনপি প্রার্থী ও সমর্থকদের দাবি- নিরপেক্ষ ও কেন্দ্রদখলহীন নির্বাচন হলে এখানে আব্দুস সাত্তার সেলিমই এগিয়ে।
আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বর্তমান কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জহুরুল আলম জসিম ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন পাহাড়তলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান মো. নুরুল আবছার মিয়া, উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক সৈয়দ সরোয়ার মোর্শেদ কচি ও এরশাদ মামুন। এরশাদ মামুন গতবারও নির্বাচন করেছেন এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পাননি। অন্যদিকে সরোয়ার মোর্শেদ কচি এবার প্রথম নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। একেবারে শেষের দিকে এসে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়ে চমক দিয়েছেন পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল আবছার মিয়া। তিনি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করার জন্য দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেন তাহলে বর্তমান কাউন্সিলর জসিমের জন্য দুঃসংবাদ বলেই মনে করেন দলটির নেতৃবৃন্দ। সব মিলিয়ে এখানে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী বিবেচনায় জসিমকে তার সমর্থকেরা ফেবারিট মনে করলেও শেষ পর্যন্ত নুরুল আবছার মিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে পুরো হিসেবই উল্টে যেতে পারে বলে এখানকার রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাধারণ মানুষের ধারণা। এছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বেসরকারি কারা পরিদর্শক মো. নুরুল আলম মিঞা নির্বাচন করবেন বললেও এলাকায় তার কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। উল্লেখ করা যেতে পারে- এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের চার সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির জসিম ছাড়া বাকী তিনজনই একাট্টা। সেই দিক দিয়ে জসিম অনেকটাই কোণঠাসা হলেও উন্নয়ন কর্মকা-ের জন্য তিনি কিছুটা ভারমুক্ত বলে সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ওয়ার্ডে প্রচুর জনপ্রিয়তা থাকার পরেও নির্বাচনে আগ্রহী নন ক্ষমতাসীনদের হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত বিএনপির প্রার্থীরা। তাদের দাবি, জোর করে কেন্দ্র দখল, ভোটারদের ভোট না দিতে দেয়া, নানানভাবে কর্মীদের আতঙ্কে রেখে নির্বাচনী কাজ থেকে দূরের রাখার অপকৌশলকে ছাপিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক নির্বাচন দিয়ে ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে আলোচিত। এই পরিস্থিতিতে অর্থ খরচ করে, রাতদিন প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে ভোটের দিন নিরপেক্ষ ভোট এবং ভোটারদের ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে সৃষ্ট অনিহা নির্বাচন করার উৎসাহে বাধা দিচ্ছে। তারপরেও দলীয় সিদ্ধান্ত এবং গণতন্ত্র যে আজ অন্ধকারে সেটিকে বারংবার প্রমাণ করতে আমরা সক্ষমহয়েছি। এবারো দল চাইলে আমরা নির্বাচন করবো। এই ওয়ার্ডে বিএনপির একমাত্র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন সাবেক কাউন্সিলর, আকবরশাহ থানা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সাত্তার সেলিম। তিনি ২০১০ সালে এখানে নির্বাচন করে কাউন্সিলর হন। এছাড়াও নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন ২০০৫ সাল এবং ২০১৫ সালেও।
তবে বর্তমান কাউন্সিলর ভোটারদের কাছে আবারও সুযোগ চান তার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে। অন্য কাউন্সিলরপ্রার্থীরা এলাকার মাদক, সন্ত্রাস, ভূমিদস্যুতা, চাঁদাবাজি বন্ধ করে এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন, সড়ক-উপ-সড়কের উন্নয়ন, নাগরিক চাহিদা পূরণ ও শিক্ষাক্ষেত্র সম্প্রসারণে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।

ডিসি/এসআইকে/আএ