১০, ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে নোবেল মাহমুদ মাসুমের মনোনয়নপত্র দাখিল : জিডি করলেন নিছার উদ্দিন, মামলা সুমনের বিরুদ্ধে

উম্মে সালমা, নগর প্রতিবেদক >>>
আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে সামনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি)। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১ ওয়ার্ডেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এবার দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল বড় ধরণের সমস্যায় পড়েছে। মেয়র পদে চমকের পর কাউন্সিলর পদে চমক প্রত্যাশিত হলেও ঘটেছে বিপরীত। নগরের ৪১ ওয়ার্ডেই নামে-বেনামে দলটির বিভিন্ন পদবীধারী নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। কেউ কেউ নিজে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে না গেলেও কৌশলে অপছন্দের প্রার্থীকে ঠেকাতে নিয়েছেন ভিন্ন পরিকল্পনা।

ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু।

তবে বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি আলোচনা ছিল দুই ওয়ার্ডের বর্তমান দুই কাউন্সিলর ও দলীয় মনোনীত প্রার্থীর সাধারণ ডায়েরি এবং তথ্য-প্রযুক্তি আইনে মামলার ঘটনা। চট্টগ্রাম নগরীর ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অপপ্রচারের কারণে আকবরশাহ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন চসিকের বর্তমান পর্ষদের প্যানেল মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। অন্যদিকে ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানহানি, ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে ২১ নম্বর জামাল খান ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও আ’লীগ দলীয় প্রার্থী শৈবাল দাশ সুমনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন একই দলের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন, যিনি নিজেও কাউন্সিলরপ্রার্থী।

শৈবাল দাশ সুমন।

অন্যদিকে ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে নাগরিক সমাজের ব্যানারে নির্বাচন করার প্রত্যয়ে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন যুবলীগ নেতা মনোয়ার-উল আলম চৌধুরী নোবেল। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তরুণ ব্যবসায়ী মো. মাহমুদুর রহমান। আর ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে দলীয় সভাপতিসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আলোচিত মুখ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম। এই তিনজনই এলাকায় নির্বাচনী মাঠে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আবারো প্রার্থী হওয়া ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বৃহস্পতিবার থানায় করা তার জিডিতে উল্লেখ করেছেন, আমার কিছু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে আমার ব্যক্তিগত সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আমার প্রতিপক্ষ বিভিন্ন নামে বেনামে ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স, প্রিন্ট ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। এসব মিথ্যা ও বিভ্রান্তমূলক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে আমার আত্মসম্মান ক্ষুন্ন ও সামাজিক মর্যাদা এবং মানহানি ঘটাতে পারে। বিষয়টির আইনানুগ প্রতিকার ও ভবিষ্যতের জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। জিডিতে এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মনোনয়নপত্র দাখিল করেন মনোয়ার উল আলম চৌধুরী নোবেল।

অন্যদিকে ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানহানি, ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে ২১ নম্বর জামাল খান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, তার ভাই রাজিব দাশ সুজয়সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করেছেন ক্ষমতাসীন দলের উক্ত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরপ্রার্থী ও যুগ্ম সম্পাদক মো. নাছির উদ্দিন। বৃহস্পতিবার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল আদালত ঢাকায় করা মামলা আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিএমপির কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিষিয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদির আইনজীবী অ্যাড. বেনজির।
মামলার বাদি নাছির উদ্দিন বলেন, জামালখানের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের প্ররোচনায় তার পক্ষের লোকজন আমাকে রাজাকারের ছেলে বলে বিভিন্ন কটূক্তি করেছে এবং গালমন্দ করেছে। শৈবাল দাশ সুমনের বড় ভাই রাজীব দাশ সুজয় সরাসরি আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আমার মান-সম্মান হানি করেছে। এ জন্য আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।

মনোনয়নপত্র দাখিল করেন মাহমুদুর রহমান।

এদিকে কাউন্সিলরপদে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন নির্বাচন করা প্রসঙ্গে ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলরপ্রার্থী মনোয়ার উল আলম চৌধুরী নোবেল বলেন, বর্তমান কাউন্সিলরে বিকল্প খুঁজছে উত্তর কাট্টলীবাসী। এলাকার মুরুব্বি এবং সকল শ্রেণিপেশার ভোটারদের চাপে আমি আমার প্রার্থিতা দাখিল করেছি। নির্বাচনে আমার জয় হবে ইনশাল্লাহ। এই ওয়ার্ডটি ঐতিহ্যবাহী হলেও অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে অনেক পিছিয়ে। এলাকার ছেলে হিসেবে এটা মেনে নেয়া কঠিন। সে জন্য আমি নির্বাচন করছি।
১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে দলের বিরুদ্ধে গিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচন করতে মনোনয়ন দাখিল করা মাহমুদুর রহমান জানান, আমাদের ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্ন ও ভালো অনেক প্রার্থী থাকলেও তৃণমূল কিংবা ওয়ার্ড কমিটির কারো সাথে আলোচনা বা মতামত না নিয়ে যে প্রার্থী দেয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে স্থানীয়তের বিরূপ ধারণা আছে। তারা একজন ভালো ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব চান। আমি তাই মুরুব্বিদের পরামর্শে নাগরিক কমিটির ব্যানারে এখানে নির্বাচন করছি। ইনশাআল্লাহ আমি নির্বাচিত হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ওয়ার্ডটি উপহার দেবো। কারণ যাকে প্রার্থী করা হয়েছে তাকে মানুষ পছন্দ করে না। সে নির্বাচনে জিততে পারবে না বলেই আমি ওয়ার্ডটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য ধরে রাখতে চাই।

মনোনয়নপত্র দাখিল করেন দিদারুল আলম মাসুম।

১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলরপ্রার্থী দিদারুল আলম মাসুম বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে সে দলের কেউ না। কোনো পদেও নেই। মিথ্যা তথ্য দিয়ে সিনিয়র নেতাদের ভুল বুঝিয়ে সে প্রার্থীতায় সমর্থন পেয়েছে। কিন্তু ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগ আমার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতেই আমি নির্বাচন করছি।

ডিসি/এসআইকে/ইউএস