বিদ্রোহী মুক্ত বিএনপি কি পারবে?

সাদিয়া জাহান প্রমী ও বেলাল করিম জিহান, নগর প্রতিবেদক >>>
আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনেকটাই বিদ্রোহীর ভারমুক্ত বিএনপি। নগরের ৩৬টি ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ১০৮ জন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও একটি ওয়ার্ডে দুই বিদ্রোহীপ্রার্থী এবং আরেকটি ওয়ার্ডে বিএনপির এককপ্রার্থী ঋণখেলাপী সংক্রান্ত ঝামেলায় মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় সেখানে দলটির আর কোনো প্রার্থী নেই। সেই হিসেবে ৪১ ওয়ার্ডের ৩৯টি ওয়ার্ডেই বিএনপি এককপ্রার্থী দিতে পেরে বেশ উৎফুল্ল।
আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফলাফল নিজেদের ঘরে তুলতে চাইলেও বাস্তবে কি তা পারবে দলটি? বিএনপির একাধিক নেতৃবৃন্দ দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, বিএনপি বেশ সংগঠিত। কিন্তু মধ্যরাতের সরকারের অতীতের সব নির্বাচন দেশবাসী ও বিশ্ব দেখেছে। ভোটাররা নিজেদের পছন্দের ভোট দিতে না পারায় কেন্দ্রবিমুখ হয়েছে যা ইতোমধ্যে ঢাকার দুই সিটি এবং চট্টগ্রামের চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসনের সংসদ উপ-নির্বাচনে দেখা গেছে। তবে সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। সরকারি দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী কোন্দলের সুযোগ এবার হয়তো বিএনপি নিতে পারবে। এবার আমাদের মেয়রপ্রার্থী থেকে শুরু করে কাউন্সিলরপ্রার্থী- সবাই সৎ ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব। আওয়ামী লীগের হয়ে যারা নির্বাচন করছেন তারা অপরিপক্ষ এবং নানান দোষে দূষিত। সেই দিক দিয়ে বিএনপিকেই ভোটাররা পছন্দে রেখেছেন বলে আমাদের বিশ্বাস। সাধারণ ভোটারেরা যদি ভোট দেয়ার সুযোগ পান তাহলে বিএনপির প্রার্থীরা সবাই বিজয়ী হবে- এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম (মিষ্টি কুমড়া), ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডে এয়াকুব চৌধুরী (এয়ার কন্ডিশনার), ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে মো. ইলিয়াছ (ঠেলাগাড়ি), ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডে মাহবুবুল আলম (মিষ্টি কুমড়া), ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মো. আজম (মিষ্টি কুমড়া), ৬ নম্বর পূর্ব-ষোলশহর ওয়ার্ডে মুহাম্মদ হাসান লিটন (রেডিও), ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে ইসকান্দার মির্জা (ঘুড়ি), ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডে হাসান চৌধুরী (রেডিও), ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে আবদুস সাত্তার সেলিম (লাটিম), ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে রফিক উদ্দীন চৌধুরী (ঘুড়ি), ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে সোহরাব হোসেন চৌধুরী (লাটিম), ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে শামসুল আলম (ঘুড়ি), ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর আলম (ঘুড়ি), ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে আবদুল হালিম প্রকাশ শাহ আলী (রেডিও), ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডে চৌধুরী সায়েফুদ্দীন রাশেদ সিদ্দিকী (মিষ্টি কুমড়া), ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডে সালাউদ্দীন কাউসার (ঘুড়ি), ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর এ কে এম আরিফুল ইসলাম ডিউক (মিষ্টি কুমড়া), ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ইয়াছিন চৌধুরী আছু (টিফিন ক্যারিয়ার), ২০ নম্বর দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডে লিয়াকত আলী (মিষ্টি কুমড়া), ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডে আবু মোহাম্মদ মহসীন চৌধুরী (মিষ্টি কুমড়া), ২২ নম্বর এনায়েত বাজার ওয়ার্ডে আবদুল মালেক (মিষ্টি কুমড়া), ২৩ নম্বর উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে মোহাম্মদ মহসীন (ঘুড়ি), ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে এসএম ফরিদুল আলম (ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট), ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডে শহীদ মো. চৌধুরী (ঘুড়ি), ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে মোহাম্মদ সেকান্দর (টিফিন ক্যারিয়ার), ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে জামাল উদ্দিন জসিম (লাটিম), ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন (মিষ্টি কুমড়া), ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে হাবিবুর রহমান (রেডিও), ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে মোহাম্মদ দিদারুর রহমান (রেডিও), ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে নুর মোহাম্মদ লেদু (ঘুড়ি), ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ডে ছাদেকুর রহমান (ঠেলাগাড়ি), ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসমাইল বালি (লাটিম), ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ডে অ্যাড. তারিক আহমদ (মিষ্টি কুমড়া), ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডে মো. হারুন (টিফিন ক্যারিয়ার), ৩৭ নম্বর উত্তর-মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে মো. ওসমান (ঘুড়ি), ৩৮ নম্বর দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে হানিফ সওদাগর (মিষ্টি কুমড়া), ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডে সরফরাজ কাদের রাসেল (রেডিও), ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে মোহাম্মদ হারুন (ঘুড়ি) এবং ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে নুরুল আবছার (মিষ্টি কুমড়া) বিএনপির এককপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
শুধুমাত্র ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে ঋণ খেলাপী সংক্রান্ত ঝামেলায় প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় এখানে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। অন্যদিকে ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে এবারো বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন মো. আবুল হাশেম (লাটিম)। তবে আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিরও দুইজন বিদ্রোহী প্রার্থী এখানে রয়েছেন। তারা হলেন মহানগর বিএনপির সদস্য আজিজুর রহমান বাবুল (ঘুড়ি) ও মহসীন আলী চৌধুরী (মিষ্টি কুমড়া)।
অন্যদিকে সাধারণ ওয়ার্ডেরপ্রার্থীদের মতো সংরক্ষিত আসনের নারী প্রার্থীরাও নিজ নিজ এলাকায় বিদ্রোহ ঠেকাতে পেরেছেন। ১৪ সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মধ্যে দু’টি ছাড়া বাকী সবগুলোতে বিএনপি এককপ্রার্থী হিসেবে নারীদের রাখতে পেরেছে।
জানা গেছে, ১ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে রোকসানা বেগম (হেলিকপ্টার), ২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোছাম্মৎ শাহেনেওয়াজ চৌধুরী (গ্লাস), ৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে জিন্নাতুল নেছা জিনু (গ্লাস), ৪ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সকিনা বেগম (মোবাইল ফোন) ও বিদ্রোহী প্রার্থী ইসমত আরা জেরিন (আনারস), ৫ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি (মোবাইল ফোন) ও বিদ্রোহী প্রার্থী রেজিয়া বেগম (আনারস), ৬ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মাহমুদা সুলতানা (মোবাইল), ৭ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে পারভীন আকতার চৌধুরী (চশমা), ৮ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে আরজুন নাহার মান্না (গ্লাস), ৯ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে খালেদা বোরহান (মোবাইল), ১০ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর জেসমিনা খানম (আনারস), ১১ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কামরুন নাহার লিজা (স্টীল আলমারী), ১২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে শাহিদা খানম (আনারস), ১৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মনোয়ারা বেগম (আনারস) এবং ১৪ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে জাহিদা হোসাইন (আনারস)।

ডিসি/এসআইকে/এসজেপি-বিকেজে