ধার-দেনা-দানে-অনুদানে নির্বাচন করছেন চট্টগ্রামের অধিকাংশ সংসদ সদস্যপ্রার্থী

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ছয় দিন। দরজায় কড়া নাড়ছে জাতীয় নির্বাচন, তাই শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন চট্টগ্রামের ১৬ আসনের প্রার্থীরা। প্রচারযুদ্ধে প্রতিদিনই জমজমাট চলছে ভোটের মাঠ। পৌষের শীত উপেক্ষা করে জোর প্রচারে ব্যস্ত থাকছেন প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্রসহ অন্যান্য সব দলের প্রার্থী উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করেছেন। তবে প্রচারযুদ্ধে বেশি এগিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। শহর কিংবা গ্রামের বেশিরভাগ জায়গায় শোভা পাচ্ছে তাদের পোস্টার, ব্যানার। সমানতালে এগিয়ে বেশিরভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কিন্তু বাকি প্রার্থীদের দেখা মেলা কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের ১২০ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহ ও অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎসের বিবরণীতে প্রার্থীরা উল্লেখ করেছেন তাদের নির্বাচনী ব্যয় মেটানো হবে ধার-দেনা আর দান-অনুদানে।
প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষনে দেখা গেছে, ১২০ প্রার্থীর ৭৯ জনই (৬৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ) তাদের নির্বাচনের ব্যয় বহন করবেন স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে কিংবা দান-অনুদান নিয়ে। এর মধ্যে আবার ১৩ জন প্রার্থী স্বজন ছাড়াও অনুদান নেবেন দল থেকে। নিজের টাকায় নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন মাত্র ২০ জন প্রার্থী। আর ২১ জন প্রার্থী ভোটে কোনো অর্থ-কড়ি খরচ করবেন না। ভোটের খরচের কোনো তথ্য দেননি তারা।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই)
এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল নিজ আয় থেকে নির্বাচনে ব্যয় করছেন ২৪ লাখ টাকা। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন নিজের ব্যবসা থেকে খরচ করছেন ৫ লাখ টাকা। বাকি ৩২ লাখ টাকা ব্যবসায়ী স্ত্রীর কাছ থেকে ধার নিয়েছেন। অন্য প্রার্থীরা স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, দলীয় তহবিল থেকে ধার-কর্জ, অনুদানে নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহ করছেন।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি)
এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী নির্বাচনের সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। নিজের আয় থেকে ব্যয় করছেন ১৫ লাখ টাকা। আর ১০ লাখ টাকা নির্বাহ করছেন স্ত্রী ও দুই ছেলে থেকে ধার-কর্জ নিয়ে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি নিজ আয় থেকে ব্যয় করবেন ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ ব্যয় ধরেছেন ১৫ লাখ টাকা। তিনি ব্যয় করছেন নিজ আয় থেকে। অন্যদিকে ১৮ লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়ব।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ)
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা নির্বাচনে ব্যয় করছেন ২৫ লাখ টাকা। যা তিনি খরচ করছেন নিজস্ব তহবিল থেকে। অন্যদিকে একই আসনে প্রায় ২৪ লাখ টাকা ব্যয় করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী। এরমধ্যে তিনি নিজ তহবিল থেকে খরচ করছেন ৫ লাখ টাকা। বাকি ১৯ লাখ টাকা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে তাকে দান করছেন স্ত্রী ও শ্যালক।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড)
এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসএম আল মামুন নিজ তহবিল হতে নির্বাচনী সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন ২৫ লাখ টাকা। অন্যরা ধার-দেনা ও স্বেচ্ছায় দানে নির্বাচনের ব্যয় নির্বাহ করবেন। তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী লায়ন মোহাম্মদ ইমরান নিজের তহবিল ছাড়াও বন্ধু-শুভাকাঙ্খীদের টাকায় নির্বাচনী ব্যয় করবেন।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী)
এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে তিনি নিজ আয় থেকে ১৫ লাখ টাকা ও স্ত্রীর কাছ থেকে ধার পাবেন ১০ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও)
এই আসনে জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ ব্যয় ধরেছেন নিজ আয় হতে ১০ লাখ টাকা। ২৫টি শিল্প গ্রুপের মালিক সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম অংশীদারি ব্যবসা থেকে নিজ আয় ২ লাখ টাকা দিয়ে নির্বাচনী সম্ভাব্য ব্যয় মেটাবেন। অথচ তার বার্ষিক আয় ৯৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা। বিএনএফ প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ ব্যয় ধরেছেন ৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে নিজ আয় থেকে ২ লাখ টাকা ও স্ত্রী কাছ থেকে ধার পাবেন ৩ লাখ টাকা। সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন ২৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। নিজ আয় ও স্ত্রীর দানে ভোট করবেন তিনি। তৃণমূল বিএনপির সন্তোষ শর্মা নির্বাচনী ব্যয়ের কোনো তথ্য দেননি।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-খুলশী)
এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় ধরেছেন নিজ তহবিল থেকে ২০ লাখ টাকা। সাবেক মেয়র মনজুর আলম নিজ খরচ থেকে ব্যয় করবেন ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ নিজ আয় থেকে খরচ করবেন ১৫ লাখ টাকা। বাকি টাকা ধার-কর্জ ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দানের টাকা খরচ করবেন।
চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর)
এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী এমএ লতিফ নিজ আয় থেকে সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় ধরেছেন ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন নিজ আয় থেকে ১৯ লাখ ও আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার-কর্জ ও দানে নির্বাচন করবেন।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া)
এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী নির্বাচনী সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন নিজ আয়ের ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী নির্বাচনী সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন নিজ আয় থেকে ২৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী)
এই আসনে আছেন ৭ প্রার্থী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ নির্বাচনী সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন নিজ আয় থেকে ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অন্যরা ধার-দেনায় ভোটের খরচ জোগাবেন।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ)
এই আসনে প্রার্থী ৮ জন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী নিজ ও স্ত্রীর আয় থেকে নির্বাচনী সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন ২৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী নিজ তহবিল থেকে ব্যয় ধরেছেন ২৫ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া)
এই আসনে ৭ জন প্রার্থী। বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী নির্বাচনী সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন নিজ আয় থেকে ২৫ লাখ টাকা। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব নিজ আয় থেকে ২০ লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)
এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী নির্বাচনী সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন ২৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে তিনি নিজ সঞ্চিত তহবিল থেকে ১৬ লাখ টাকা, কন্যার কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দান পাবেন ২ লাখ টাকা ও অনাত্মীয়দের থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দান পাবেন ৬ লাখ টাকা।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর