চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের শান্তিরহাটে অশান্তি

দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট মোড়ে অসহনীয় যানজটে প্রতিনিয়ত অশান্তিতে ভুগছেন সাধারণ মানুষ। এই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বন্ধের দিনও। ফলে প্রতিদিনই অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়েন এই পথে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষ। হাইওয়ে পুলিশের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ এই হাইওয়ে সড়কে প্রতিদিন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও তা নিরসনে কাজ করতে দেখা যায় না হাইওয়ে পুলিশকে। ফলে প্রায় প্রতিদিনই যানজটের কবলে পড়ে তীব্র ভোগান্তি সইতে হচ্ছে যাত্রীদের।
যাত্রীদের অভিযোগ, যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ কোনো কাজ করে না। তারা পটিয়ার বাইপাস ও মনসা বাদামতল এলাকায় গাড়ির কাগজপত্র যাচাইয়ের নামে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত থাকেন বেশিরভাগ সময়। কাগজপত্রবিহীন গাড়ি আটক হলেও সেসব গাড়ি হাইওয়ে থানায় নেয়ার বদলে নির্জন স্থানে নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠে প্রতিনিয়ত। যেসব চালক টাকা দিতে ব্যর্থ হন সেসব যানবাহন নিয়ে যাওয়া হয় হাইওয়ে থানায়।
তবে এই যানজটের জন্য হাইওয়ে পুলিশের ওসি (টিআই) স্নেহাংশ বিকাশ যানজটের পেছনে ভিআইপিদের যাতায়াত ও পটিয়ার সংসদ সদস্যকে দায়ী করেছেন। তাঁর দাবি, ভিআইপিদের চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত যানজট তৈরি হচ্ছে। এরমধ্যে ওভারপাসের জন্যও যানজট বেড়েছে।
যাত্রীরা জানান, শান্তিরহাট এলাকা জনবহুল হলেও সেখানে হাইওয়ে পুলিশের কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নেই। এ কারণে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজটের কবলে পড়তে হয় যাত্রীদের। জানা যায়, স্থানীয়ভাবে তৈরি তিন চাকা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও চার চাকার মাহেন্দ্র গাড়ি হাইওয়ে মহাসড়কে চালাতে মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে চক্র। যেসব গাড়িতে টোকেন নাই তাদের কেবল আটক করা হয়।
মোহাম্মদ হাসান নামের এক মাহিন্দ্র গাড়ির মালিক জানান, হাইওয়ে রোডে যেতে হলে হাইওয়ে পুলিশকে মাসিক নির্দিষ্ট অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করতে হবে। শান্তিরহাট সিএনজি সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ সেলিমসহ কয়েকজন এসব চাঁদা আদায় করছেন। ফলে শান্তিরহাট এলাকায় অবৈধ গাড়ির চলাচল বাড়ার পাশাপাশি রাস্তার পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ পার্কিং স্টেশন। এর ফলে ওই এলাকায় প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে সেলিমকে ফোন দেয়া হলেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে পুলিশের ওসি (টিআই) স্নেহাংশ বিকাশ জানান, ভিআইপিদের চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত যানজট তৈরি হচ্ছে। এ রাস্তা দিয়ে ভিআইপি গেলেই সমস্যার তৈরি হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা মানুষের সচেতনতার অভাব। আমরা নিয়মিত ১০টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করে আমাদের টার্গেট পূরণ করি। এ কারণে আগের চেয়ে অনেক ভালো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তিনি বলেন, শান্তিরহাট এলাকায় পটিয়া আসনের এমপি রাস্তার উপর ফুট ওভারব্রিজ তৈরি করায় যানজট বেশি হচ্ছে। যানজট নিরসনে তাদের কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা পুলিশ ইচ্ছে করলে শান্তিরহাট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ দিতে পারে। গাড়ি থেকে চাঁদাবাজি ও নির্জন স্থানে নিয়ে গাড়ি ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান দায়িত্বশীল এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে পটিয়া আসনের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ফুট ওভারব্রিজের কাজ সম্পন্ন হলে এর সুফল পাবে পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। হাইওয়ে পুলিশের ওসি যে কথা বলেছেন নিয়ম মোতাবেক তিনি সে ধরণের বক্তব্য দিতে পারেন না।
পটিয়া-ক্রসিং হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, শান্তিরহাটসহ বেশ কয়েকটি স্পটে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় মানুষের চলাচলে চরমভাবে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি সওজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। শান্তিরহাট এলাকায় সওজ কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা করে পরিবহন যাতায়াতের ব্যবস্থা করে না দিলে অশান্তি আরো বাড়তে পারে। সড়ক খারাপ হওয়ায় পুলিশ ওই এলাকায় যানজট কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) দোহাজারীর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল মিয়া বলেন, মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্পটে মূল সড়কের দুই পাশে ব্রিক সলিন দ্বারা পথচারীদের চলাচলের জন্য রাস্তা করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় পানি জমে থাকার বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। শীঘ্রই ব্যবস্থা নিবো আমরা।
যা কিছুই হোক, এই পথে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষ শান্তিরহাটের এই অশান্তি থেকে রেহাই পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন।

ডিসি/এসআইকে/এসইউ