রাউজানে মানা হচ্ছে না ভর্তি নীতিমালা : চুয়েট স্কুলে ভর্তি ফি ৯৮৫০ টাকা

চুয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তিফি নেয়া হচ্ছে ৯ হাজার ৮৫০ টাকা।

এম. কামাল উদ্দিন রাউজান >>>
উত্তর চট্টগ্রামের রাউজানে মানা হচ্ছে না ভর্তি নীতিমালা। উপজেলার মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়, বেসরকারি কেজি স্কুল, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোতে সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত টাকা ভর্তি ফি হিসাবে নেওয়া হচ্ছে
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিভিন্ন নথিপত্র থেকে জানা গেছে, উপজেলার চুয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রাথমিকে ১ম, ২য় শ্রেণিতে ভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে ৯ হাজার ৮৫০ টাকা। আর পুন:ভর্তিতে ৬ হাজার ১০০ টাকা। তিন মাসের বেতন ২ হাজার ২৫০ টাকা বাদ দিলে ৩ হাজার ৮৫০ টাকা পুন: ভর্তিতে নেয়া হচ্ছে। চুয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার দাবি তিনি সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী টাকা নিচ্ছেন। অতিরিক্ত কোনো টাকা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে না। ৯ হাজার ৮৫০ টাকার মধ্যে (২ হাজার ২৫০ টাকা) তিন মাসের বেতনসহ বলে তিনি জানান।
এছাড়াও রাউজান উপজেলা সদরের মুন্সির ঘাটায় রাউজান ইংলিশ স্কুলে ভর্তি ফি ২ হাজার ৫০০ টাকা, রাউজান সুলতান পুর ছিটিয়া পাড়া নবারুন স্কুলে ভর্তি ফি ১ হাজার ২০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। রাউজানের দক্ষিণ হিংগলায় মুনিরিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা থেকে জুনিয়র দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসা থেকে টিসিতে প্রতিজন থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন অভিভাবকেরা। অন্যদিকে রাউজান আর আর এ সি সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি ফি ৬ষ্ঠ র শ্রেণি থেকে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত ৭৫০ টাকা। সেশন ফি নেওয়া হচ্ছে ৭ম শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ৮৫০ টাকা। ৯ম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সেশন ফি নেওয়া হচ্ছে ৮৫০ টাকা।
রাউজান সুরেশ বিদ্যায়তনের শিক্ষার্থী তুহিন আকতার জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি হতে তার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। চুয়েট ক্যম্পাস ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে ৯ হাজার ৮৫০ টাকা।
রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে কিন্ডার গার্ঢেন কেজি স্কুল, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এসব স্কুলে সরকারি কোনো নিয়ম-নীতি না মেনে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে বেশী। রাউজানের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কোনো ভর্তি ফি ও কোনো সেশন ফি ব্যতিত ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করানো হলেও বেসরকারি কেজি স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের পরিচালকেরা চটকদারী বিজ্ঞাপনে রাউজানে বিভিন্ন এলাকায় বিল বোর্ড টাঙিয়ে দেওয়ায় এলাকার লোকজন তাদের ছেলে মেয়েদেরকে উন্নত শিক্ষার আশায় এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করছেন।
রাউজান নবারুন স্কুলের শিক্ষক রতন কান্তি নাথ বলেন, নবারুন স্কুলে ভর্তি ফি ১ হাজার ২০০ টাকা, মাসিক বেতন ৩৫০ টাকা। রাউজান ইংলিশ স্কুলের পরিচালক ইউছুপ আমিন বলেন, রাউজান ইংলিশ স্কুলে ভর্তি ফি ২ হাজার ৫০০ টাকা, মাসিক বেতন ৮০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। রাউজান আর আর এ সি সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসতাক আহম্মদ বলেন, রাউজান আর আর এ সি সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত ৭৫০ টাকা। সেশন ফি নেওয়া হচ্ছে ৭ম শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ৮৫০ টাকা। ৯ম শ্রেণি থেকে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সেশন ফি নেওয়া হচ্ছে ৮৫০ টাকা করে।
এপ্রসঙ্গে রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেনায়েদ কবির সোহাগ দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, সরকারি নিয়মের বাইরে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির জন্য অতিরিক্ত ফি নেওয়া হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, স্কুলে ভর্তি ও সেশনসহ অন্যান্য ফি বেশি নেওয়া হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্কুল ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তির ক্ষেত্রে উপজেলা পৌর এলাকায় ১ হাজার ও মফস্বলে পাঁচশত টাকার বেশি শিক্ষার্থীদের থেকে নিতে পারবে না বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া এক শ্রেণি থেকে আরেক শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও পুনঃভর্তি ফি নেওয়া যাবে না। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়ন ফি খাতেও কোনো অর্থ নিতে পারবে না।
গত ৩০ ডিসেম্বর অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাধ্যমিক, নি¤œ মাধ্যমিক ও সংযুক্তি প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের (সংশোধিত) পরিপত্র এবং ২০১৮ সালের ভর্তি নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। বেসরকারি স্কুল ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগর অন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় (ঢাকা ছাড়া) ভর্তিতে তিন হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। অন্যদিকে মফস্বল এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে সেশন ফিসহ সর্বোচ্চ ভর্তি ফি হবে ৫০০ টাকা। পৌর (উপজেলা) এলাকায় ১ হাজার টাকা। পৌর (জেলা সদর) এলাকায় ২ হাজার টাকা। বেসরকারি স্কুল ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে অবশ্যই লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিশুর বয়স কমপক্ষে ছয় বছর হতে হবে। এই বয়স যাচাইয়ে ভর্তির আবেদন ফরমের সঙ্গে জন্মনিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। লটারিতে ভর্তি কমিটির সদস্যদের উপস্থিতি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা ছাড়াও একইসাথে অপেক্ষমান তালিকা প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচিত শিক্ষার্থী নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ভর্তি না হলে ওই তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির শূণ্য আসনে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করতে হবে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে। মেধাক্রম অনুসারে। তবে জেএসসি-জেডিসির ফলের ভিত্তিতেই নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে। নবম শ্রেণিতে ভর্তিতে কোনো পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। বেসরকারি স্কুল ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের পূর্ণমান হবে ৫০। এর মধ্যে বাংলায় ১৫, ইংরেজিতে ১৫ এবং গণিতে ২০ নম্বরের উত্তর দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। সময় থাকবে এক ঘণ্টা। আর চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নের পূর্ণমান থাকবে ১০০। বাংলায় ৩০, ইংরেজিতে ৩০ এবং গণিতে ৪০ নম্বরসহ মোট ১০০ নম্বরের উত্তর করতে হবে। সময় থাকবে দুই ঘণ্টা। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের বাইরে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। আর প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে হবে পাঠ্যপুস্তক থেকেই। এর বাইরে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারি স্কুল ও স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য ২০১৬ সালের জারি করা পরিপত্র (সংশোধিত) অনুযায়ী এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ২০১৮ সালের ভর্তি নীতিমালা বহির্ভুত অর্থ আদায় সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিসি/এসআইকে/এমকাউ