বছরের প্রথম দিনে স্কুলে স্কুলে বই উৎসব

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
প্রতি বছরের মতো এবারও নতুন বছরের প্রথম দিন (১ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয়ভাবে বই বিতরণ উৎসব করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বই উৎসব পালন করবে। তবে জাতীয় নির্বাচনের কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয়ভাবে বই উৎসব পালন করবে না। স্থানীয়ভাবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান করে এবং বিদ্যালয়গুলোতে বই উৎসব পালন করা হবে।
রেওয়াজ অনুযায়ী রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
রবিবার বিকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বছরের প্রথম দিন রাজধানী ঢাকার মিরপুর ২ নম্বরে ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বই উৎসব পালন করা হবে। প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বই বিতরণ কার্যক্রম-‘বই বিতরণ উৎসব-২০২৪’ অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। সে কারণে প্রাথমিকের বই উৎসব করতে নির্বাচন কমিশন অনুমোদন দিয়েছে। আর শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। সে কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে কেন্দ্রীয়ভাবে বই উৎসব পালনের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সে কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে বই উৎসব পালন করা হবে না। তবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রতীকীভাবে বই উৎসব পালন করবে।
এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, স্কুলে স্কুলে বই উৎসব পালন করা হবে। আগামি ১৫ দিনের মধ্যে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং বই বিতরণ শেষ করতে হবে। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকের সব বই এবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় পৌঁছে গেছে। মাধ্যমিক স্তরের সব বই এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছেনি। এখন কিছু প্রতিষ্ঠান বই ছাপার কাজ করছে। এছাড়া মাধ্যমিকের বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাড়াহেুড়ো করে বই ছাপতে গিয়ে কয়েকটি বইয় ছাপা নিম্নমানের হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন কাগজের মান খারাপ হওয়ার কারণে মাধ্যমিক স্তরের বইয়ের মান খারাপ হয়েছে। প্রাথমিকের বই নিয়ে এরকম কোনও অভিযোগ নেই।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, প্রাথমিকের বই অনেক আগেই পৌঁছে গেছে। মাধ্যমিকের বই কিছু ছোট ছোট প্রেস ছাপতে পারেনি। তারা এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে। আশা করি ৭ জানুয়ারি মধ্যে সব শেষ করা সম্ভব হবে।
এনসিটিবি জানায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে মোট ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি পাঠ্যবই ও শিক্ষক সহায়িকা বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে প্রাক-প্রথমিক ৩০ লাখ ৮০ হাজার ২০৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮টি পাঠ্যবই। প্রাথমিকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ২৮৪ জনকে দেওয়া হবে ৮ কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার ৬৯৭টি পাঠ্যবই। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৮৫ হাজার ৭২২ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ২ লাখ ৫ হাজার ৩১টি পাঠ্যবই। এছাড়া প্রাথমিক স্তরের ইবতেদায়ি প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৮ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ২ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭৬টি পাঠ্যবই।
মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ট, থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার ১০৭ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৭টি পাঠ্যবই। দাখিল ষষ্ট থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৮ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৪ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪২টি পাঠ্যবই। ইংরেজি ভার্সনের ষষ্ট থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১১ লাখ ৭২ হাজার ৫৭টি পাঠ্যবই। কারিগরি ট্রেডের জন্য ষষ্ট থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৪ জন শিক্ষার্থীকে ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭০২টি পাঠ্য বই। এসএসসি ভকেশনাল ৬ হাজার ১৫ জন শিক্ষার্থীকে ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৫টি পাঠ্য বই। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া হবে ৭২৮টি বই।
এছাড়া শিক্ষকদের জন্য ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৮টি শিক্ষক সহায়িকা দেওয়া হবে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ