নায়িকা হতে চাওয়া তরুণীদের সতর্ক করলেন অভিনেত্রী নূতন

বিনোদন ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
ঢাকাই সিনেমার একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নূতন। এফডিসিতে ছিল তার তুমুল কর্মব্যস্ততা।  এখন অভিনয়ে নিয়মিত নন, এফডিসিতেও তেমন আসেন না।  তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সরব তিনি।  প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন এ অভিনেত্রী।
শনিবার (২ জুলাই) রাতে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন নূতন।  যারা সিনেমায় অভিনয় করতে চান বা নায়িকা হতে চান, তাদের উদ্দেশে বেশ কিছু উপদেশ দিয়েছেন তিনি।  পাশাপাশি চলচ্চিত্রের বেশ কিছু বিষয়ে খোলামেলা আলাপ করেছেন তিনি।
নূতন জানান, অনেক মেয়ে ছবি দিয়ে, ভয়েস দিয়ে বলে, আপু নায়িকা হতে চাই। কোনো পথ নেই, বাবা-মা রাজি না।  স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই, হেল্প করেন। তাদের জন্য বলি, বাবা-মা না চাইলে এই পথ তোমাদের জন্য না।  দু-তিন দিন নাম কামিয়ে লাভ নেই, স্রোতে হারিয়ে যাবে।  তখন আরো সমস্যা।  সবাই জানবে নায়িকা, আসলে তুমি কিছুই না।  এখনকার ৮০ শতাংশ নায়িকা এই সমস্যায় আছেন।
নিজের ক্যারিয়ারের উদাহরণ টেনে তিনি লেখেন, আমার মা চাইতেন, আমি নায়িকা হই।  তাই আমি নায়িকা হয়েছি, হারিয়ে যাইনি।  মা-বাবা যা চায়, তাই করো।  তাদের দোয়া ছাড়া সামনে যাওয়া যাবে না।  শুধু পরিশ্রম দিয়ে জীবনে কিছু হয় না।  যদি বাবা-মায়ের সাপোর্ট থাকে, অভিনয়-নাচ শিখে থাকো, তাহলে বলব আগে মিনিমাম পড়াশোনা শেষ করে আসো।  কারণ শিক্ষা অনেক জরুরি।  শিক্ষা মানে তোমার ব্যাকআপ।  এখানে কিছু নাহলে নায়িকা নাম দিয়ে আর শিক্ষা কাজে লাগিয়ে টিকে থাকতে পারবা।  শিক্ষা থাকলে কেউ তোমাকে ভুলভাবে পরিচালিত করতে পারবে না।
তিনি আরো লিখেছেন, আগের দিন নেই যে, এক ছবি করে সাইনিং মানি দিয়ে গাড়ি কিনে ফেলেছি।  দেশের মানুষ চিনেছে, ম্যাম বলে ডাকা, রাস্তায় জ্যাম লাগা, তারা হওয়া-তা এখন নেই।  সুতরাং ভেবেচিন্তে এসো।  নায়িকা হব, মানুষ চিনবে, ফেসবুক লাইক-এসব আসলে পেটে ভাত দিবে না।  বরং অসম্মানিত হবে, সবাই বলবে ইনি নামে নায়িকা কাজে অন্যটা।  দুই নম্বর নায়িকা, রাতের নায়িকা, লাইনের নায়িকা, চলে না-এসব বলবে।  এই মুহূর্তে কেউ ফিল্মের নায়িকা হবে, সেটা ভাবতেই আমার ভয় লাগে।  এখন ফিল্মে সম্মানও নেই। মানুষের মুখে অসম্মানিত হওয়ার জন্য তোমার জন্ম হয়নি।
বর্তমান সময়ের তথাকথিত কিছু নায়িকাকে ইঙ্গিত করে নূতন লেখেন, ফেসবুকে ছবি, অনলাইন নিউজ দেখে যাদের তোমরা নায়িকা ভাবো তারাই জানে নিজেরা কীভাবে জীবনযাপন করছে, কতটা নির্মমতা বয়ে বেড়াচ্ছে।  সুতরাং ভালোভাবে বাঁচতে হলে বুঝে-শুনে পা ফেলতে হবে।
নায়িকা হতে চাওয়া তরুণীদের সতর্ক করে তিনি লিখেছেন, চলচ্চিত্র জীবনের একটা অংশ, তবে জীবন নয়।  চলচ্চিত্রের নেশায় ডুবে নিজের নিশ্চিত ভবিষ্যত অন্ধকারে ফেলো না।  যে কাজ যতটা সহজ সে কাজের পরিণতি ততই ভয়াবহ।  কারো কাছে গিয়ে প্রতারিত হয়ো না।  কেউ কাউকে শিল্পী বানাতে পারে না।  যারা শখের বসে নায়িকা হতে চাও তারা আসতে পারো।  ফেসবুকে নায়িকা হতে ফিল্ম করা লাগে না।  দু-তিন লাখ টাকা খরচ করে দুইটা সিনেমার মহরত করলেই হবে।  ভালো থেকো।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে মূল থেকে পার্শ্ব প্রায় তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন নূতন।  সত্তর-আশির দশকে সুজাতা, সুচন্দা, কবরী, শাবানা, ববিতার ভিড়ে তিনিও এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আলো ছড়িয়েছেন। তার অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘রাজনর্তকী’, ‘পাগলা রাজা’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘বসুন্ধরা’, ‘প্রাণসজনী’ ‘প্রেমবন্ধন’, ‘স্ত্রীর পাওনা’, ‘মানসী’, ‘রাজমহল’, অবিচার’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘বদলা’, ‘ননদভাবি’, ‘রাঙাভাবি’, ‘অলংকার’, ‘বদনাম’, ‘শাহজাদা’, ‘কন্যাবদল’, তাজ ও তলোয়া’, ‘কাবিন’, সোনার চেয়ে দামি, ‘ বাঁশিওয়ালা’, ‘সত্য-মিথ্যা’, পাহাড়ি ফুল, অশান্ত, ‘মালামতি’ ‘বাঁশিওয়ালা’, ‘আবদুল্লাহ’। প্রায় সব ছবিতেই বিশেষত্ব পেয়েছেন অপূর্ব নৃত্যশৈলীর কারণে।  কীর্তনিয়া, শাস্ত্রীয়, কত্থক, ভারতনাট্যম, সর্পনৃত্য, বাউল, ফোক, আধুনিক, ওয়েস্টার্ন-চরিত্র অনুযায়ী নানা ধরনের নৃত্য সমাহারে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ