বোয়ালখালীতে ভুট্টার বাম্পার ফলন, মাড়াই যন্ত্র না থাকায় দুশ্চিন্তায় কৃষক

শাহাদাত হোসাইন জুনাঈদী, বোয়ালখালী প্রতিনিধি >>>
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে ভুট্টার রেকর্ড পরিমাণ চাষ হয়েছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এখানকার কৃষকেরা।  এবার বাম্পার ফলন হয়েছে বলে দাবী স্থানীয় কৃষকদের।  এসব উৎপাদিত ভুট্টা বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ারও আশা করছেন তারা।  এখন কৃষকের ঘরে ঘরে ভুট্টা মাড়াইয়ের ব্যস্ততা চলছে।  এবার ভুট্টা আকার যেমন বড় হয়েছে তেমনি দানাও অনেক বেশী।  কিন্তু উপযুক্ত মাড়াইয়ের যন্ত্রপাতি না থাকায় একটু চিন্তিত কৃষক।  ভুট্টা চাষে খরচ কম এবং রোগবালাই না থাকায় কৃষকের আগ্রহ রয়েছে এই চাষে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর পৌরসভা ও কড়লডেঙ্গা মিলে প্রায় ১০-১২ একর জমি ভুট্টা চাষ করলেও এবছর পৌরসভা ও উপজেলা মিলে ৩০ একর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে।  যা থেকে ৭৫ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হবে বলে আশা করছে সরকারি এই দপ্তরটি।
উপজেলার কানুনগোপাড়া গ্রামের কৃষক এস এম বাবর (৪৯) দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, চলতি মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি।  কৃষি অফিসের পরামর্শে উন্নত জাতের এনএইচ-৭৭২০ ভুট্টা চাষ করেছি।  এই জাতের ভুট্টায় বিঘাপ্রতি ৩৫-৪০ মণ ফলন পাওয়া যায়।  বাজারে দামও ভালো রয়েছে।  কিন্তু ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র না থাকায় একটু চিন্তায় আছি।  তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে এখন প্রতি মণ ভুট্টা ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  প্রতি বিঘা জমি চাষ করতে (চাষ, বীজ, সার, সেচ) খরচ হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা।  ভালো ফলন হলে এতে প্রতি বিঘাতে লাভ হবে প্রায় ২০ হাজার টাকা।
উপজেলার আমুচিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মাহবুবুল আলম দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, আমার নিজস্ব জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ভুট্টা চাষে সার কম লাগে।  এছাড়া সেচ, কীটনাশক ও নিড়ানি লাগে না। একেবারে কম খরচে ও স্বল্প সময়ে এ ফসল ঘরে তোলা যায়।  বর্তমান বাজারে চাহিদা ও দাম দুটোই ভালো রয়েছে’।
পৌরসভার পশ্চিম গোমদন্ডী মৌসুমি খামারের সত্ত্বাধিকারী মুহাম্মদ মামুন দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, বোয়ালখালী কৃষি অফিসারেো বীজ ও সার সহায়তায় করেছেন।  তাদের সঠিক দিকনির্দেশনায় এবার প্রথম ভুট্টা চাষ করেছি; তাতে লাভবানও হয়েছি।
উপজেলার উপ সহকারী কৃষি অফিসার মুহাম্মদ ফরিদুল আলম দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, প্রতি বছরই ধানের দরপতনের কারণেই কৃষকদের লোকশান গুণতে হচ্ছে।  তাই ভুট্টা অল্প খরচে লাভজনক হওয়ায়, বিকল্প হিসেবে অন্য ফসলের পাশাপাশি ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন স্থানীয়রা।  কম খরচে বেশি লাভের আশায় কৃষকরা এবার বোরো ধানের জমিতে আগাম জাতের ও অধিক ফলনশীল পুষ্টি সমৃদ্ধ দানাদার জাতীয় ভুট্টা চাষ করছেন।  এছাড়াও ভুট্টার রোগবালাই দমনে মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
বোয়ালখালী কৃষি অফিসার মুহাম্মদ আতিক উল্লাহ দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, চলতি বছর বিঘাপ্রতি ভুট্টা উৎপাদনের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৫-৪০ মণ।  বাজারে ভালো দাম ও চাহিদা রয়েছে।  এবার পৌরসভার কধুরখীল, আমুচিয়া, কড়লডেঙ্গা, পশ্চিম গোমদন্ডীসহ বিভিন্ন জায়গায় ভুট্টার চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে সফল হয়েছি।  কৃষকদের উন্নত জাতের এনএইচ ৭৭২০, এন কে পোটি (হাইব্রিড), সুপার সাইন ২৭৪০ ভুট্টা চাষ করতে দিয়েছি।  এতে করে কৃষকদের ভালো ফলন হয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/এসএইচজে