নির্বাচনের আগেই কক্সবাজারে ট্রেন নিতে চায় সরকার

কক্সবাজার প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
প্রকল্পের ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।  বাকি ২৭ শতাংশ কাজ বর্ধিত মেয়াদ ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা।  তবে, আগামি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ট্রেন নিতে চায় সরকার।  ২০২৩ সালের জুনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে দোহাজারী-ঘুনধুম রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।  যে কারণে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
দোহাজারী-ঘুনধুম রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. মফিজুর রহমান জানান, ‘প্রকল্পের ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ। বাকি ২৭ শতাংশ কাজ শেষ হলেই কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল করবে’।  তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্প মেয়াদ।  কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের আগেই রেললাইন চালু হবে।  আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।
তিনি জানান, ১০২ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত রেল লাইনের স্লিপার বসানো হয়েছে।  কক্সবাজার অংশে জমি আগেভাগে পাওয়ায় সেদিকে কাজ বেশি এগিয়েছে।  রেলস্টেশন, ব্রিজ কালভার্টের কাজও দ্রুতগতিতে চলছে।  এ পর্যন্ত ৭ হাজার কোটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে বলেও তিনি জানান।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, দু’টি লটে চীনের চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন ও দেশীয় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন ও দেশীয় তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি দু’টি লটে কাজ করছে।  চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে ঘুনধুম রেললাইন প্রকল্পে ৯টি স্টেশন আছে। এরমধ্যে দু’টি স্টেশনের কাজ প্রায় শেষ।  বাকি সাতটির কাজও চলমান আছে।  ৩৯টি ছোটবড় ব্রিজ ও ২২৮টি কালভার্টের কাজও প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে।  সিগনাল ব্যবস্থা, লেভেলক্রসিং ও অত্যাধুনিক অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থাও সংযোজন করা হচ্ছে এ প্রকল্পে।  চুনতি অভয়ারণ্যের মধ্যদিয়ে বন্যহাতি চলাচলের জন্য আন্ডারপাস ও ওভারপাস তৈরি করা হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও কক্সবাজার অংশের চকরিয়ায় রেললাইন বসানো হয়েছে বেশি।  দোহাজারি, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া এবং কক্সবাজারের কাছাকাছি কিছু অংশে এখনো রেললাইন বসানো হয়নি।  এখনো ৫৭ কিলোমিটার রেললাইন বসানো কাজ বাকি আছে’।
ঢাকা-কক্সবাজার রুটে সরাসরি ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পটি অন্যতম।  যে কারণে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন রেললাইন প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়।  ২০১৮ সালে কাজ শুরু হলেও ২০২২ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।  কিন্তু করোনা মহামারিতে কাজের গতি কমলে আবারো দুইবছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়।  সে হিসেবে ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা আছে।  যদিও তার আগে কাজ শেষ করতে বেশ তৎপর প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।  চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন চালু হলে ট্রান্স এশিয়ান রেললাইন নির্মাণের যে প্রক্রিয়া সেটি আরোও তরান্বিত হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হলে পর্যটন নগরীতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে।  এতে সরকারের রাজস্ব আয় আরও বাড়বে।  এছাড়াও কৃষি, মৎস্য ও শিল্পক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন হবে।

ডিসি/এসআইকে/এফআরইউ