থানচির দূর্গম অঞ্চলে প্রাকৃতিক ঝর্ণা থেকে মিলছে জলবিদ্যুৎ

বান্দরবান প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
থানচি উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরের দূর্গম পাহাড়ি পল্লী নকতাহো পাড়ায় প্রাকৃতিক ঝিড়িতে বাঁধ দিয়ে ঝর্ণার প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে স্বল্পখরচে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করেছেন চট্টগ্রামের ছেলে মোহাম্মদ মহসিন। বিদ্যুৎ পেয়ে খুশি পাহাড়ি পল্লীর বাসিন্দারাও।
নকতোহা পাড়ার ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন স্বাধীনতার পর থেকেই বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। এখন জলবিদ্যুতের মাধ্যমে আলো পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন পাহাড়ি পল্লীর ৪২টি পরিবার। তবে পাড়ার পাশেই ঝিড়িতে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও বৈদ্যুতিক তার ও অন্য জিনিসপত্রের চড়ামূল্যের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ হচ্ছে না সবার।
মোহাম্মদ মহসীন জানান, শৈশবে লেখাপড়ার পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপে কাজ করতাম। কাজ শিখে নিজেই গড়ে তুলেছি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ। গত ৬ মাস আগে থানচির বাসিন্দা বন্ধু মাংসার ¤্রাে’র সহযোগিতায় নিজস্ব অর্থায়নে সদর ইউনিয়ন থেকে দুই কিলোমিটার দূরের দূর্গম নকতোহা ত্রিপুরা পাড়ার ক্যংছুঙ ঝিরিতে পরীক্ষামূলকভাবে জলবিদ্যুৎ উদ্ভাবনের উদ্যোগ নিই।
তিনি জানান, পাহাড়ের শত বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতার পরও ঝিড়িতে স্বল্প উচ্চতায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ঝর্ণার প্রবাহকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে এই বিদ্যুৎ উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছি। পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে আমার। বর্তমানে এই প্রকল্প থেকে ৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। যা দিয়ে ৪২টি পরিবারকে আলোর আওতায় আনা সম্ভব। তবে ফ্যান, টিভি ও ফ্রিজসহ অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে হলে এই প্রকল্পে আরও প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে।
নকতোহা পাড়ার কারবারি জানান, নকতোহা পাড়াটি থানচির সদর ইউনিয়নের খুব কাছে হলেও আমরা বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত। মহসিন যখন এই প্রকল্পটির কাজ শুরু করেছিল তখন পাড়াবাসীরা বিশ্বাস করতে পারেনি এখান থেকে আলো মিলবে।
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ডেভিড ত্রিপুরা ও পাড়ার বাসিন্দা রমেন ত্রিপুরা জানান, পাহাড়ি ঝিড়ি ও ঝর্ণায় বাঁধ দিয়ে স্বল্পখরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন দেখে অবাক হওয়ার পাশাপাশি পাড়াবাসীরা খুব খুশি। এই প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হলেও আর্থিক সমস্যার কারণে পুরো পাড়াবাসী বিদ্যুৎ সরবরাহ নিতে পারছেন না। স্বল্পখরচে দীর্ঘমেয়াদি এরকম প্রকল্পে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দূর্গম এলাকার বিদ্যুৎ বঞ্চিত বাসিন্দারা উপকৃত হবে।
থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অং প্রু ¤্রাে জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫২ বছর অতিবাহিত হতে চললেও এখনও বান্দরবানের থানচি উপজেলার বিভিন্ন দূর্গম এলাকায় বসবাসরত অসংখ্য পাহাড়ি পরিবার বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত রয়েছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এরকম প্রকল্পের মাধ্যমে এসব এলাকার লোকজনদের বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হবে।

ডিসি/এসআইকে/এসপিআর