হজের খুতবায় মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের আহ্বান

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
আরাফাত ময়দানে পবিত্র হজের খুতবায় বিশ্ব উম্মাহর ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়েছে।  একইসাথে সবাই যেন আরও বেশি কল্যাণমূলক কাজ করতে পারেন, সেজন্য দোয়া করা হয়।  খুতবা দেন সৌদি রাজনীতিক এবং দেশটির সাবেক বিচারমন্ত্রী শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা।
শুক্রবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩ টায় শুরু হয় খুতবা।  সেখানে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতি বজায় রেখে চলতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।  যেহেতু আল্লাহ বলেছেন- তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সম্মিলিতভাবে আকড়ে ধরো।  এর মাধ্যমেই মুসলিম উম্মাহর যে অস্তিত্ব রয়েছে, সেই অস্তিত্ব বলিষ্ঠ ও শক্তিশালী হবে’।
সাবেক এই বিচারমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলামকে যদি আমরা ব্যবহার করতে পারি, তাহলে এর মাধ্যমে আমরা সবাইকে একত্রিত করতে পারব এবং মানবতার কল্যাণ সাধন করতে পারব।  ইসলাম সবার কল্যাণকে ভালোবেসেছে এবং মানুষের অন্তরে সম্প্রীতি তৈরি করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে।  ফলে, সাহাবারা এ পথেই চলেছেন’।
ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম খুতবায় বলেন, ‘ইসলাম সম্বন্ধে যেসব বিকৃত চিন্তা ও মিশ্র বক্তব্য রয়েছে, সেগুলোর দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, যেন আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারি’।
খুতবার শুরুতে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কোনো সাদৃশ্য নেই।  তিনি সর্বদ্রষ্টা, সর্বশ্রোতা। আসমান এবং জমিনে মহান আল্লাহ তাঁর বিধান কার্যকর রয়েছে। তিনি সব কিছুর খবর রাখেন’।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা সালাম জানান।  এরপর তিনি বলেন, ‘খোদাভীতি অর্জন করলে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারব।  দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ মূলত আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের তাকওয়ার (খোদাভীতি) মধ্যে রয়েছে’।
খুতবায় সাবেক বিচারমন্ত্রী বলেন, ‘আল্লাহ বলেছেন- তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে ভয় করো।  আল্লাহ বিশ্বাসীদের সঙ্গে রয়েছেন’।  তিনি বলেন, ‘আমরা কেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে ভয় করব না?  কল্যাণ এবং অকল্যাণ দুটোই তাঁর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।  সুতরাং, আল্লাহকে ভয় করতে হবে। যেহেতু আল্লাহ বলেছেন- যদি কোনো বান্দাকে কোনো অনিষ্ট পেয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহই তা দূর করেন।  তিনি ছাড়া আর কেউ দূর করতে পারেন না।  কোনো কল্যাণ যদি লাভ করতে চায়, অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি কল্যাণ দিতে চান, তাহলে তিনি তা লাভ করতে পারেন’।
খুতবায় সাবেক বিচারমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ব্যতীত কারও ইবাদত করা যাবে না, সে যে-ই হোক না কেন’।  তিনি বলেন, ‘আল্লাহ বলেছেন, তোমরা ইবাদত করো, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন।  তিনি আসমানকে তোমাদের জন্য ছাদ এবং জমিনকে বসবাস উপযোগী করেছেন।  তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁকে ভয় করো।  এটা তোমাদের জন্য উত্তম হবে, যদি তোমরা তা বুঝতে পারো’।
ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম বলেন, ‘এজন্য আমাদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের তৌহিদের দিকে আহ্বান করতে হবে এবং সেই পথেই আমাদেরকে অগ্রসর হতে হবে।… সব নবীরা তাঁদের দাওয়াতে মানুষকে আল্লাহর ইবাদতের কথা বলেছেন’।
খুতবায় ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা সালাম তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর সাক্ষ্য দেওয়া নাজাতের মূল চাবিকাঠি’।
এরপর ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির গুরুত্ব তুলে ধরেন। হজ যে ফরজ হয়েছে, সে বিষয়টি ইংগিত দিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘ইবাদত করার ক্ষেত্রে রাসুল (সা.)-কে অনুসরণ করতে হবে। যে হজ করতে আসবেন তার বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন- যে ব্যক্তি হজে ইহরাম বাধবে, তিনি যেন অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কোনো কাজ না করেন। কোনো বিবাদে লিপ্ত না হন’।
ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম বলেন, ‘আমাকেসহ আপনাদের এই উপদেশ দিচ্ছি যেন ভালো কাজের জন্য অগ্রগামী হতে পারেন, ভালো কাজে অগ্রসর হতে পারেন। যেহেতু আল্লাহ মুত্ত্বাকিদের জন্য বেহেশত তৈরি করেছেন’।
সাবেক বিচারমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম খুতবায় বলেন, ‘আল্লাহ নিজেই রাসুল (সা.) সম্বন্ধে বলেছেন যে, আপনি মহান চরিত্রের ওপরে অধিষ্ঠিত। সুতরাং, আমরা রাসুল (সা.)- কে অনুসরণ করব’। তিনি বলেন, ‘মানুষদের সঙ্গে যখন কথা বলবেন, তখন সুন্দর আচরণ করবেন। মানুষের সঙ্গে উত্তম কথা বলবেন। যেহেতু আল্লাহ বলেছেন- মানুষের সঙ্গে যখন কথা বলো, উত্তম কথা বলো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যখন নির্বোধ এবং অজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলব, তখন আল্লাহ বলেছেন- তোমরা ক্ষমার পথ অবলম্বন করো এবং পরিচিত বিষয়গুলোকে গ্রহণ করো এবং নির্বোধদের থেকে নিজেদের বিরত রাখো’।
‘মুসলিমদের যে মূল্যবোধ আছে সেই মূল্যবোধ থেকে অজ্ঞ লোকদের সঙ্গে বিবাদে জড়াবে না’ উল্লেখ করেন তিনি।
খুতবার শেষের দিকে ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আরাফাত ময়দানে রাসুল (সা.) যে খুতবা দিয়েছিলেন তা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে যোহর, আছরের নামাজ ও কসর আদায়ের কথা উল্লেখ করেন। রাসুল (সা.) এই দিনে বেশি বেশি দোয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন বলেও জানান।
পরে ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম মুসলিম উম্মাহসহ সেখানে উপস্থিত সবার মঙ্গল কামনা করে দোয়া করেন। আরবি ভাষায় দেওয়া খুতবা আরও ১৩টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। হজের খুতবার বাংলা অনুবাদ করেন মোহাম্মদ শোয়াইব রশীদ। তার সহকারী ছিলেন খলিলুর রহমান।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ