পরস্পরের মধ্যে সৌহার্দ্য বজায় রাখো : হজের খুতবায় কাবার ইমাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক।  ইন্নাল হামদা, ওয়াননি’মাতা, লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাক…’।  এমন মধুর ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে পবিত্র আরাফাতের পাহাড়ঘেরা ময়দান ছাপিয়ে আকাশ-বাতাস মুখর ও প্রকম্পিত হলো আজ।  এদিকে মসজিদে নামিরা থেকে দেওয়া হয় হজের খুতবা।  এ বছর হজে খুতবা দিয়েছেন সৌদি আরবের বিশিষ্ট আলেম, মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা।
মসজিদে নামিরা থেকে বাংলাদেশ সময় সোমবার (১৯ জুলাই) ৩টা ৩০ মিনিটে খুতবা শুরু করেন তিনি।  প্রায় ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা মূল খুতবা আরবিতে দেয়া হয়।  তবে আরো ১০ ভাষায় অনুবাদ করা হয়- বাংলা, ইংরেজি, ফ্রেন্স, তুর্কি, মালাইউ, চায়নিজ, উর্দু, ফার্সি, রাশিয়ান ও হাউসা।  এবারের হজে অংশগ্রহণকারী উপস্থিত হাজিদের সুস্থতা কামনায় দোয়াও করেন তিনি।
শুরুতেই তিনি মহান আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়ার মাধ্যমে খুতবাহ শুরু করেন।  খুতবায় রাসুলের (সা.) একটি হাদিস পড়েন, যার মূল কথা হলো- কোনো মুসলমানের যদি সক্ষমতা অর্জন হয়, তাহলে জীবনে একবার হলেও তাকে অবশ্যই হজ করতে হবে।
খুতবায় শায়খ শায়খ ড. বান্দার বালিলা বলেন, আল্লাহতাআলা বলেছেন, তোমরা আমি ছাড়া কারো ইবাদত করবে না এবং কাউকে শরিক মানবে না।  নবীজি (সা.) বর্ণনা করেছেন, তোমরা পৃথিবীতে বসবাসকারীদের ওপরে দয়া করো, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর দয়া করবেন।  মুসলমানদের উচিত পরস্পরের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সদ্ভাব বজায় রাখা।
রাসুল (সা.) বলেছেন, যদি কোনো এলাকায় কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে থাকে তবে সেখানে যাবেন না।  কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে, আল্লাহ তা’আলার রজ্জুকে শক্তভাবে ধরো।  এবং মত পার্থক্যে যেওনা।  পরস্পরের মাঝে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা সম্পর্ক তৈরি কর।  বিদ্বেষ ও শত্রুতা খতম কর।  পৃথিবীতে ভারসাম্যতা তৈরি করা।  আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ক্ষমা করা।
খতিব বলেন, আল্লাহর রহমত থেকে সেই ব্যক্তিই নিরাশ হয় যে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে।  আল্লাহ তা’আলা যেভাবে তোমার ওপর অনুগ্রহ করেছেন তেমনি তুমিও অন্যের ওপর অনুগ্রহ করো।  আল্লাহতা’আলার রহমত অনুগ্রহকারীদের নিকটবর্তী থাকে সবসময়।  আল্লাহতা’আলা পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন।  আল্লাহতা’আলার নির্দেশ হলো পিতা-মাতার পরে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভালো আচরণ করো।
শায়খ বালিলা আরও বলেন, হে মানব সম্প্রদায়, আল্লাহতা’আলা তোমাদের ন্যায় ও ইনসাফের নির্দেশ দিয়েছেন।  ইসলামে মানবজাতির জন্য এমন বিধি-বিধান রাখা হয়েছে, যার মাধ্যমে সমশ্রেণির মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।  ইনসাফ ও ন্যায় বিচার ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ।  এটি ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য।  আমাদের আচার-আচরণ ও ব্যবহারে এ বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে হবে।
দয়াময় আল্লাহতা’আলা বলেছেন, আমার রহমত আমার আজাবের ওপর প্রাধান্য পায়।  নবীজি (সা.) বলেছেন জান্নাতে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।  রাসুল (সা.) বলেছেন, নিজের অধীনস্থদের সঙ্গে ভালো আচরণ করো।  নিজের অধীনস্থ চাকর-বাকরদের তাদের শক্তি-সামর্থের ওপরে বোঝা চাপিয়ে দেবে না।  অন্যকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুরা করারও নির্দেশনা দিয়েছেন আল্লাহ।
খুতবায় বলা হয়, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমারা নামাজ আদায় কর।  নিজের মনকে হেফাজত কর।  আল্লাহর ওয়াস্তে তোমার প্রতিশ্রুতি পূরণ কর।  আল্লাহ বললেন, শয়তান আপনাকে বিপথগামী করার চেষ্টা করবে।  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
আল্লাহতা’আলা বলেছেন, তোমার জন্য কুরআনকে নাজিল করা হয়েছে যেন তুমি হেদায়েত পাও।  আর আল্লাহ যাকে চান তাকে হেদায়েত দেন।  নিজের আত্মশুদ্ধি কর এবং তাকওয়া অবলম্বন করো।  নিজের রবের ইবাদত এমনভাবে করো যেন তিনি তোমাকে দেখছেন।
কাবার ইমাম খুতবায় আরও বলেছেন, যে ফজিলত হল আপনি আল্লাহর ইবাদত করেন যেন আপনি তাকে দেখছেন।  যদি এটি সম্ভব না হয় তবে ভাববেন যে তিনি আপনাকে দেখছেন।  আল্লাহ বলেন, কোনো বান্দা যদি নিজের উপর অন্যায় করে তবে তার জন্য তওবা করার দরজা উন্মুক্ত রয়েছে।
হজের খুতবায় আরো বলা হয়, আল্লাহ বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি।  তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, মহানবী হলেন সর্বশেষ নবী।  তোমরা তোমাদের নামাজ সংরক্ষণ কর, নামাজের ব্যপারে যত্নবান হও।  আল্লাহ পরাক্রমশালী, তাকে ভয় করুন এবং তাকওয়া অবলম্বন করুন।  নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সব মানুষের সঙ্গেই রয়েছেন।  আল্লাহ তায়ালা কারো আমলকে বিনষ্ট করেন না।
হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রতি বছর আরবি জিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফাত ময়দানে হজের খুতবা অনুষ্ঠিত হয়।  এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।  করোনা ভাইরাসের কারণে এবারও ‘সীমিত আকারে’ হজ্ব পালনের ব্যবস্থা করেছে সৌদি আরব।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ